কলাপাড়ায় মাশরুম চাষে সফলতা
কৃষি বিভাগ
মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সমগ্র দেশ যখন স্থবির হয়ে পড়ে। মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করে। ঠিক তখনই বিকল্প জীবিকার সন্ধানে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষে সফল এক যুবক। বর্তমানে তার খামারে রয়েছে ১ হাজার খড়ের স্পন প্যাকেট। আর এ স্পন থেকে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো মাশরুম বিক্রি করে মাসে আয় করছেন ৬০ হাজার টাকা। বর্তমানে এ যুবকের সাফল্য পুরো এলাকাজুড়ে সাড়া ফেলেছে।
পটুয়াখালীর দক্ষিণ কালিকাপুর এলাকার সুশান্ত মজুমদারের ছেলে সৌমিত্র মজুমদার শুভ। ২০১৭ সালে এলএলবি পাস করে ঢাকায় এক আইনজীবীর সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন।
করোনাকালীন সময়ে আদালত বন্ধ থাকায় এলাকায় ফিরে আসেন তিনি। বেশ কিছুদিন বেকার থাকার পর জার্মানিতে থাকা খালাতো বোনের পরামর্শে আগ্রহী হন মাশরুম চাষে। পরে সাভারের জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন সেন্টারে দুই মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউপির নবাবগঞ্জ গ্রামের খালার বাড়িতে ৫০টি স্পন প্যাকেট দিয়ে শুরু করেন মাশরুম চাষ। ফলন ভালো হওয়ায় ওই বাড়ির ২০ শতাংশ জমিতে দুটি শেডের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তোলেন মাশরুম খামার। বর্তমানে খামার থেকে প্রতিদিন ১৫ কেজি করে মাশরুম পাচ্ছেন তিনি। তাতেও মেটাতে পারছেন না স্থানীয় চাহিদা।
মাশরুম চাষি সৌমিত্র মজুমদার শুভ জানান- খড়, কাঠের গুঁড়া, গমের ভুসি, তুস ও চুন দিয়ে আমরা নিজেরাই মাশুরুমের বীজ তৈরি করি। পরে বীজের সঙ্গে জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন সেন্টার থেকে আনা টিস্যু কালচার যুক্ত করে সঠিক পরিচর্যা ও দিনে ৩ বার পানি স্প্রেরের মাধ্যমে ২০ দিনের মাথায় শুরু হয় ফলন। এ কাজে তেমন একটা পরিশ্রম নেই। প্রতিদিন ৩০ কেজির মতো অর্ডার আসে। এবং বেশিরভাগ অর্ডারই অনলাইনেই আসে। খামার আরও বড় করতে পারলে এলাকার চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করার আশা তার।
খামার পরিদর্শনে আসা বরগুনার কৃষি খামারি মো. রিয়াজ উদ্দিন জানান, আমি এলাকায় ড্রাগনসহ কৃষি খামার গড়ে তুলেছি। মাশরুম চাষের খবর পেয়ে এখানে এসেছি। শুভর খামার পরিদর্শনে এসে বুঝতে পারছি মাশরুম চাষ করা মোটামুটি সহজ। আমি এলাকায় এই খামার গড়ে তুলতে চাই।
শুভর খালাতো ভাই জীবন বিশ্বাস জানান, মাশরুম চাষে আগ্রহী হওয়ার পরই শুভকে আমাদের পরিত্যক্ত জমিতে খামার গড়ে তুলতে বলি। শুভ ২০ শতাংশ জমির উপর দুটি শেড তৈরি করে মাশরুম চাষ করছে। আশা করছি ও সফল খামারি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।
জার্মানি প্রবাসী শুভর খালাতো বোন রত্না বিশ্বাস জানান, বিদেশে প্রতিদিনই সবাই মাশরুম খেয়ে থাকেন। এর পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। তবে এ দেশের মানুষ মাশরুমের গুণ সম্পর্কে তেমন একটা জানে না। শুভ যখন বেকার দিন কাটাচ্ছিল তখন ওকে মাশরুম চাষের পরামর্শ দিয়েছিলাম। দেশে এসে দেখলাম খামার করে অনেক আয় করছে।
কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এআরএম সাইফুল্লাহ জানান, মাশরুম চাষ একটি লাভজনক পেশা। এর পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। কলাপাড়া কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে মাশরুম চাষি শুভকে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। এ ছাড়া এই এলাকার কোনো যুবক মাশরুম চাষে আগ্রহী হলে তাকে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হবে। আমরা চাই কলাপাড়ায় মাশরুম চাষের বিপ্লব ঘটুক।