১:৩৫ অপরাহ্ন

শনিবার, ২৭ এপ্রিল , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
  • হোম
  • এক মণ আলু বিক্রি করে তিন বেলার ভাত
ads
প্রকাশ : জানুয়ারী ২১, ২০২২ ৫:০৩ অপরাহ্ন
এক মণ আলু বিক্রি করে তিন বেলার ভাত
এগ্রিবিজনেস

গ্যানোলা আলু তিন টাকা কেজি। মোটা চালের সর্বনিম্ন বাজারদর ৪২ টাকা কেজি। যদি আলু তিন টাকা করে কেজি হয় তাহলে ১৪ কেজি আলু বিক্রি করে এক কেজি চাল কেনা যাবে। আর আমার বাড়িতে দৈনিক চাল লাগে প্রায় তিন কেজি। তাহলে হিসাব অনুযায়ী এক মণ আলু বিক্রি করে আমার বাড়িতে তিন বেলার ভাত হয়। তবে কেমনে হবে, এভাবে কি চলা যায়?

আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন দিনাজপুরের সদর উপজেলার মাঝাডাঙ্গা এলাকার কৃষক মমিনুল ইসলাম। মমিনুল ইসলাম পেশায় কৃষক, অবসর সময়ে পল্লী চিকিৎসকের পেশায় নিযুক্ত তিনি। তবে শহর খুব কাছে হওয়ায় কৃষি পেশাই তার ভরসা। পরিবারের সদস্য সংখ্যা সাত জন। পরিবারের সদস্যদের জন্য তিনবেলা খাবারে লাগে প্রায় তিন কেজি চাল।

মমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা যখন আলু লাগাই তখন বীজ বেশি দামে কিনেছি। এখন আলু তুলবো, আলুর দাম নাই। এই আলুগুলো যদি দেশের বিভিন্ন জেলাগুলোতে পাঠানো যেতো তবে হয়তো দাম ভালো পাইতাম। কিন্তু এখন আলুগুলো যাচ্ছে না। আলুতে এবার এত লোকসান, জমিতে যে সার-বিষ দিছি সেগুলোর খরচই উঠবে না।

বর্তমানে গ্যানোলা আলু তিন টাকা কেজি যাচ্ছে। এই দাম দিয়ে তো কাজের লোকের টাকাই উঠে না। যদি আলু সাত টাকা দরে বিক্রি করি, তবে হয়তো আলুর বীজের দামটা উঠবে। কিন্তু বাকি সব খরচের টাকা উঠবে না। এজন্য আমরা কৃষকরা এবার ধরা। সরকার যদি আমাদের কৃষকদের বিভিন্ন ভূর্তকি দিয়ে দেখতো তবে হয়তো ভালো হতো। এ বছর আলু আবাদ করেছি ২ বিঘার মতো। খরচ এখন পর্যন্ত ৭৫ হাজার টাকার মতো হয়েছে।

মমিনুল ইসলামের মতো অবস্থা দিনাজপুর জেলার প্রায় সব কৃষকেরই। আলুর দাম নেই, ফলে কৃষকের এবারে মাথায় হাত। জেলায় আগাম জাত হিসেবে কৃষকরা গ্যানোলা, ক্যারেজ ও স্টারিজ জাতের আলুর চাষ করেন। এবারে গ্যানোলা আলু কৃষকরা বিক্রি করছেন কিন থেকে পাঁচ টাকা কেজি, আর ক্যারেজ ও স্টারিজ আলু বিক্রি করছেন সাত টাকা কেজি দরে। ফলে সবারই এবারে লোকসান।

বিরল উপজেলার মাঝাডাঙা এলাকার কৃষক লক্ষ্মী কান্ত রায়, আমি এবার দুই বিঘা আলু লাগাইছি। আলু উঠাইছি ভাই কিন্তু দাম নাই। তিন টাকা-চার টাকা আলু বিক্রি করলে লাভ হবে। বিষ, সার, বীজ মিলে বিঘা হারে খরচ হইছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। এখন আলুর দাম যদি ভালো থাকতো তবে হয়তো ভালো লাভ হতো। দুইটা টাকার মুখ দেখতে পেতাম।

বিরল উপজেলার মাঝাডাঙা এলাকার রাজ কুমার রায়, এ বছর দুই বিঘা আলু আবাদ করেছি। বর্তমানের আলু তিন চার টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এই আলু যদি সাত টাকাও বিক্রি হয় তবুও লাভ থাকবে না। এই আলু এখন ১২ হইতে ১৪  টাকা বিক্রি হইলে তবেই লাভ হতো।

রফিকুল ইসলাম নামে এক আলু চাষি বলেন, তিন বিঘা মাটিতে খরচ এখন পর্যন্ত প্রায় এক লাখ ২০ হাজার টাকা। আলু বিক্রি হচ্ছে সাত-আট টাকা কেজি দরে। এভাবে লাভ হবে না। সরকার তো আমাদের দিকে দেখে না। সরকার যদি আলুর দামটা ঠিক রাখতো। ১৪ থেকে ১৫ টাকা যদি আলু কিনতো তবে লাভ হতো।

মালঝার এলাকার কৃষক আব্বাস আলী বলেন, বাজার খুবই খারাপ। ক্যারেজ আলু সাত টাকা কেজি, গ্যানোলা আলু ৪-৫ টাকা কেজি। আমি ক্যারেজ আলু লাগাইছি। সেই সময়ে বীজ আলু নিয়েছি ৩০-৩৫ টাকা কেজি। সার-বিষ, কামলা-কৃষাণ অনেক খরচ। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে ফলন হয়েছে ৬৭ বস্তা। প্রতি বস্তায় আলু থাকে ৬৫ থেকে ৭০ কেজি। সাত টাকা কেজি বিক্রি করে পোষাবে না।

তার দেওয়া হিসাব মতে প্রতি বিঘায় আলু হয়েছে চার হাজার ৩৫৫ কেজি থেকে চার হজার ৬৯০ কেজি। সাত টাকা করে কেজি হিসেবে এর দাম পড়ে ৩০ হাজার থেকে ৩৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ নিজের জমিতে চাষাবাদ করে তার লোকসান গুনতে হবে ২ থেকে ৭ হাজার টাকা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, এবারে জেলায় ৪৮ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর প্রতি হেক্টরে আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২৩ দশমিক ৭৭ মে.টন। এ পর্যন্ত আলু রোপণ হয়েছে ৪৬ হজার ৯১০ হেক্টর জমিতে।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ এএসএম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, এখনও অনেকেই আলু রোপণ করছেন, ফলে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত জমিতে আলু চাষাবাদ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। লাভজনক ফসল হওয়ায় অনেকেই আগাম আলু চাষে ঝুঁকছেন। এবারে উৎপাদন ভালো হয়েছে। বাজারদর ঠিক থাকলে কৃষকরা হয়তো লাভবান হতেন। তবে কৃষকরা যদি দেশীয় পদ্ধতিতে বাড়িতেই তিন থেকে চার মাস আলু সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন, তাহলে লাভবান হবেন বলে জানান তিনি।

শেয়ার করুন

ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop