১:১১ অপরাহ্ন

শনিবার, ২৭ এপ্রিল , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
  • হোম
  • উপকূলজুড়ে বাড়ছে মাছ চাষিদের হাহাকার
ads
প্রকাশ : এপ্রিল ১৯, ২০২১ ১১:৪৭ পূর্বাহ্ন
উপকূলজুড়ে বাড়ছে মাছ চাষিদের হাহাকার
মৎস্য

আশাশুনি সদরের পশ্চিমপাড়ার আব্দুস সামাদ সরদারের ছেলে রুহুল আমি সরদার নিজের জমি নেই। আছে শুধু ভিটেবাড়ি। অন্যের ৬ বিঘা জমি লিজ নিয়ে মাছের ঘের করেছিলেন। মাছের ঘের করতে গিয়ে এনজিও থেকে নিতে হয় ঋণ। বড় স্বপ্ন ছিল তার। গত অগ্রহায়ণে ছেড়েছিলেন মাছের পোনা। ঘেরে মাছের পোনা বড় হয়ে ধরার উপযুক্ত হয়েছিল।

গোনে গোনে আটন ঝেড়ে দেখতেন রুহুল আমিন। বাগদার সাইজ দেখে মন ভরে যেতো তার। সংসারে সুদিনের আশায় মনে মনে বুনতেন নানা স্বপ্নের জাল। কিন্তু গত পূর্ণিমার গোনে খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে সেই স্বপ্নের জাল ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে রুহুল আমিনের। এখন তিনি নিঃস্ব। ঋণের কথা চিন্তা করে তার কপালে দেখা দিয়েছে ভাজ।

শুধু রুহুল আমিন নয়, এ অবস্থা একই এলাকার হযরত আলী, রফিকুল ইসলাম, প্রতিবন্ধী আজহারুল ইসলামসহ শতশত মাছ চাষির।

এদিকে শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোলিনী ইউনিয়নের দূর্গবাটি বাঁধ ভেঙে খোলপেটুয়া নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে শত শত মৎস্য ঘের। বাঁধ ভাঙার সঙ্গে যেন কপাল ভেঙেছে তাদের। গোটা উপকূলজুড়ে মাছ চাষিদের মধ্যে বিরাজ করছে বোবা কান্না।

মাছ চাষিরা জানান, আশাশুনির সদর ইউনিয়নের দয়ার ঘাটের রিংবাঁধ ভেঙে মৎস্য ঘেরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাঁধ ভেঙে প্লাবনে সদর ইউনিয়নের বাগদা চিংড়ি ঘের মালিক মহিতুর রহমানের ২০ বিঘা, প্রফেসর বজলুর রহমানের ৫৫ বিঘা, দীপন কুমার মণ্ডল ৭ বিঘা, আব্দুস সালামের ১৫ বিঘা, খোকন গাজীর ৮ বিঘা, মফিজুল ইসলাম লিংকনের ৭ বিঘা, শাহিন রেজার ৯ বিঘা, আসাদুজ্জামান খোকনের ৮ বিঘা, শরিফুল ইসলাম টোকনের ১১ বিঘা, সোলায়মান হক কাজলের ৪ বিঘা, সাদিক আনোয়ার ছট্টুর ১০ বিঘা, আজিজুল ইসলাম ছোটন ৭ বিঘাসহ কয়েক শত বাগদা চিংড়ি মাছের ঘের পানিতে ভেসে গেছে। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

বাগদা চিংড়ি ঘের মালিকরা আরও জানান, কেউ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে, কেউ সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে আবার কেউ ধারদেনা করে জমির হারি অর্ধেক পরিশোধ করে মাছ চাষ করেছেন। তাদের স্বপ্ন ছিল এক মাসের মধ্যে মাছ ধরা শুরু হবে এবং এই মাছ বিক্রি করে করে তাদের লীজকৃত জমির হারির টাকা ও ঋণ পরিশোধ করে ঘুরে দাঁড়াবেন। কিন্তু ২৯ মার্চ ‘সুপারমুন’ পূর্ণিমার গোনে বাঁধ ভেঙে পানিতে ঘের ভেসে যাওয়ায় তাদের সে স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। এখন তারা পরিবার চালাবে কীভাবে আর ব্যাংক ও বিভিন্ন এনজিওর কিস্তির টাকা পরিশোধ করবে কীভাবে সে চিন্তায় হতাশ হয়ে পড়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত ঘের মালিকরা বিনা সুদে সহজ শর্তে পুনরায় যাতে ঋণ পেতে পারে এবং মৎস্য চাষ করতে পারে সে ব্যাপারে আর্থিক সহায়তার জন্য সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন।

এবিষয়ে জানতে চাইলে আশাশুনি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শহীদ সৈকত মল্লিক বলেন, আশাশুনি উপজেলায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ হয় এবং চিংড়ি চাষের ঘেরের সংখ্যা ১৩ হাজার ১৭৯টি। এর মধ্য আশাশুনি সদর ইউনিয়নে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে ৩৬০ হেক্টর জমির ৩১৫টি ঘের। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত ঘের মালিকদের তালিকা করেছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারি উচ্চ দপ্তরে পাঠিয়েছি।

আশাশুনি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম বলেন, দিন আসে দিন যায়, বদলায় অনেক কিছু। শুধু বদলায় না আশাশুনি উপজেলার জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধের চিত্র। ষাটের দশকের সেই বেড়িবাঁধের অস্তিত্ব এখন আর নেই। আমাদের মাসিক সভায়ও পাওয়া যায় না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে রিংবাঁধ বাঁধে প্রতিবার। এখানে বার বার বাঁধ ভাঙে, ভাসে মাছের ঘের। সঙ্গে ভাসে উপকূলের মানুষও। কিন্তু মূলবাঁধ একবারও বাঁধা হয় না।

এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপকূল রক্ষা বাঁধ ভেঙে শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ৫ নং পোল্ডারের পশ্চিম দূর্গাবাটি এলাকার সাইক্লোন শেল্টার সংলগ্ন অংশে প্রায় ২০০ ফুট বাঁধ খোলপেটুয়া নদীতে বিলীন হলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। ভাঙন কবলিত অংশ দিয়ে নদীর সঙ্গে সমানতালে লোকালয়ে জোয়ার-ভাটা চালু থাকায় প্রায় সাত হাজার বিঘা জমির চিংড়ি ঘেরসহ শত শত মিষ্টি পানির পুকুর লবণ পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রায় ছয় হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ার পাশাপাশি তিন শতাধিক বাড়ি-ঘরে নদীর পানি প্রবেশ করেছে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য এসএম জগলুল হায়দারসহ পাউবোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে বলেছেন, বেড়িবাঁধ ভাঙনের কারণে উপকূলের চিংড়ি চাষিরা সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন। তারা অবলম্বে বিষয়টি নিরসনে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সূত্র: বাংল ট্রিবিউন

শেয়ার করুন

ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop