১:৪২ অপরাহ্ন

শনিবার, ২৭ এপ্রিল , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
  • হোম
  • লোকসান টানতে ব্যর্থ হয়ে পেশা বদল করছেন পোল্ট্রি খামারিরা
ads
প্রকাশ : অগাস্ট ১৪, ২০২১ ১০:৫৮ অপরাহ্ন
লোকসান টানতে ব্যর্থ হয়ে পেশা বদল করছেন পোল্ট্রি খামারিরা
পোলট্রি

কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকে টানা লোকসানে ব্যবসা টানতে ব্যর্থ হয়ে ৪০ শতাংশেরও বেশি খামারি উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে সস্তায় মাংস ও ডিমের চাহিদা পূরণের মাধ্যম হিসেবে পরিচিত পোলট্রি খাতটি করোনাকালীন সময়ে গভীর সংকটে পড়েছে। উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে মুরগি বিক্রি করে টিকে থাকতে না পেরে- হাজার হাজার খামারি লোকসান গুণে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন বলে জানান খাত সংশ্লিষ্টরা।

শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ব্রয়লার মুরগীর ৫০ শতাংশ বাড়িতে খাওয়া হয়। বাকি অর্ধেক নানা রকম সামাজিক অনুষ্ঠান যেমন, বিয়েশাদি বা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিসের অনুষ্ঠান এবং রেস্তোরাঁ ও পর্যটন স্পটে খেয়ে থাকেন ভোক্তারা। তবে লকডাউন এবং স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত কড়াকড়িতে সামাজিক অনুষ্ঠানেও ভাটা পড়েছে, যেকারণে বিপুল চাহিদা সংকট লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেছেন তারা।

এদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রি সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) এর তথ্য বলছে, প্রতি মাসে পোলট্রি সেক্টর থেকে মাংসের যোগান আসতো প্রায় ৯০ হাজার টন। বর্তমানে চাহিদা কমে যাওয়ায় প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির মাংস ১০৫ টাকা ব্যয়ে উৎপাদন করে ৯০-৯৫ টাকায় বিক্রি করছেন খামারিরা।

বিপিআইসিসির পরিসংখ্যান বলছে, গত দেড় বছরে ৪০-৪৫ শতাংশ মাংসের উৎপাদন কমে গেছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে নিবন্ধিত খামারির সংখ্যা ৯০ হাজার। তবে সারাদেশে এক লাখেরও বেশি হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।

বিপিআইসিসি বলছে, লোকসানে ব্যবসা টানতে ব্যর্থ হয়ে ৪০ শতাংশেরও বেশি খামারি উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে।

সংকটের ব্যাখ্যা করে বিপিআইসিসি’র সভাপতি মশিউর রহমান জানান, “করোনার দেড় বছরে পোল্ট্রি সেক্টর একটি বড়সড় ধাক্কা খেল। এখান থেকে উঠে আসতে বেগ পেতে হবে। হাজার হাজার খামারি তাদের পুঁজি হারিয়ে পথে বসে গেছে। চাহিদা বৃদ্ধি না পেলে আসলে উৎপাদন বৃদ্ধিরও কোন সুযোগ নেই। উৎপাদন না বাড়লে সেক্টর ঘুরে দাড়াতে পারবে না। এর জন্য্ খামারিদের পুঁজির জোগান জরুরি হয়ে পড়েছে।”

খাত সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, করোনার আগে এই খাত ১২-১৫ শতাংশ হারে বাড়ছিল। করোনার দেড় বছরে হয়েছে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি। অথচ চার দশকে পোলট্রির বাচ্চা উৎপাদন, খাদ্য উৎপাদন, মেশিনারিজ এবং ঔষধ মিলিয়ে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার একটি খাত হিসেবে গড়ে উঠেছে। এটি স্থানীয়ভাবে ৪০ শতাংশের বেশি মাংসের চাহিদার যোগান দিচ্ছিল।

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ২৩ বছর ধরে পোলট্রি ব্যবসায় জড়িত। ২০ হাজার ব্রয়লার এবং ৬ হাজার সোনালী জাতের মুরগি ছিল তাঁর খামারে। প্রায় দেড় কোটি টাকা লোকসান দিয়ে ৪ মাস আগে বন্ধ হয়ে যায় খামারটি। পুনরায় এই ব্যবসা শুরু করার নিশ্চয়তা নেই বৃহত্তর চট্টগ্রাম পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের এই সভাপতির।

মহামারিকালে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মতো চট্টগ্রাম জেলায় অন্তত ২ হাজার ছোট বড় পোলট্রি খামারি পুঁজি হারিয়ে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আরো কয়েক হাজার পোল্ট্রি খামার বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্রিডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির পরিচালক রকিবুর রহমান টুটুল বলেন, চট্টগ্রাম জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে ৭ হাজার পোলট্রি খামারি রয়েছে। এর মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ২ হাজার খামার। এসব খামারির কোন আয়-রোজগার নেই।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে চট্টগ্রাম, পাবর্ত্য চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার জেলায় মাসে ২০ লাখ পিস মুরগি উৎপাদন হতো। বর্তমানে এই সংখ্যা নেমে এসেছে ৮ লাখে। চাহিদা কমে গেছে ৬০ শতাংশ।

এ সংগঠনের মহাসচিব রিটন প্রসাদ চৌধুরী বলেন, “বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনে খরচ পড়ছে প্রায় ১১০ টাকার বেশি। পাইকারিতে অঞ্চল ভেদে কেজিপ্রতি ৮৮ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে খামারিরা। সোনালী মুরগি পাইকারি বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ১৫৫ টাকায়। অথচ উৎপাদন খরচ এর চেয়ে বেশি।”

চট্টগ্রামের মতন অবস্থা সারাদেশেই তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে, করোনা পরিস্থিতিতে গত ৬ মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি খাদ্যের দাম ৬ টাকা বেড়েছে, ওষুধের দাম বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। এর ফলে বিক্রয় উপযোগী প্রতিটি ব্রয়লার মুরগিতে খরচ বেড়েছে প্রায় ২৫ টাকা।

ক্ষতিগ্রস্ত পোলট্রি ব্যবসায়ীরা জানান, তারা এখন উভয় সংকটে আছেন। পুঁজির অভাবে নতুন করে ব্যবসা শুরু করা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

মিরসরাই পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি শাহাদাত হোসেন বলেন, “স্বাভাবিক সময়ে আমার খামারে ১ লাখ পিস ব্রয়লার এবং লেয়ার মুরগি থাকতো। ক্রমাগত লোকসানের কবলে পড়ে ব্যবসার পরিধি কমিয়ে আনতে হয়েছে। এখন খামারে আছে প্রায় ৪০ হাজার মুরগি। এই ব্যবসায় লোকসান দিয়ে কতদিন আর ধরে রাখতে পারবো?”

প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা বলছেন, কিছুদিন আগেই ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে, তবে লোকসানের কারণে তাদের দুর্ভোগ কমছে না।

কমেছে ডিম উৎপাদন: শুধু মুরগিই নয়, ডিমের উৎপাদনও কিছুটা কমেছে বলে জানা গেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১,৭৩৬ কোটি পিস ডিম উৎপাদন হয়েছিল। করোনাকালে ডিমের উৎপাদন ৩৫-৪০ শতাংশ কমেছে বলে জানা গেছে। তবে খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে বাজারভেদে ৯৫-১০৫ টাকায়।

ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ বলছে, গত এক মাসে ব্রয়লার মুরগি ৮ শতাংশ কম দামে বিক্রি হচ্ছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. শেখ আজিজুর রহমান জানান, পোলট্রি খাতে মাংস উৎপাদন কমে যাওয়ার ঘটনাটি সত্য, তবে উদ্যোক্তারা যেভাবে কমার দাবি করছেন তেমনটি হয়েছে কিনা- তা এখনও নিশ্চিত নয়।

তিনি বলেন, খামারিরা সাময়িক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন এবং সেকারণে ফার্ম বন্ধ রেখেছেন; তবে তাদের অবকাঠামো ঠিকই আছে, একবার চাহিদা বাড়তে থাকলে আবারো তারা উৎপাদন শুরু করতে পারবেন।

সরকারি কার্যক্রম ও বেসরকারকারি বিনিয়োগ:
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আশির দশকে বাংলাদেশে পোলট্রি খাতের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। প্রথমে বেসরকারি উদ্যোগে এগস অ্যান্ড হেনস লিমিটেড ও পরবর্তীতে সরকারি উদ্যোগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পোলট্রি উৎপাদন শুরু করে।

১৯৮৩ সালে স্থানীয় এনজিও ব্র্যাক এর রুরাল পোল্ট্রি মডেল দরিদ্র কৃষকদের পোল্ট্রি খামাড় তৈরীতে উৎসাহিত করে। তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া, মুরগির বাচ্চা এনে দেয়া, ঋণ দেয়া, সচেতন করা থেকে নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করে দেশব্যাপী।

এসময় স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো প্রণোদনামূলক কার্যক্রম, ঋণ সহায়তা, প্রশিক্ষণ এবং পুঁজি হিসেবে মুরগির বাচ্চা দেওয়ার মাধ্যমে মানুষকে খামার গড়ে তোলার উৎসাহ যোগায়। ফলশ্রুতিতে; সহজে আয়ের উৎস হিসেবে পোলট্রি পালনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন গ্রামীণ নারীরা।

১৯৯০-২০০৭ সাল এ সময়ের ওপর করা গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের মোট উৎপাদিত মাংসের ৩৭ শতাংশ যোগান দেয় পোলট্রি খাত। পোল্ট্রি শিল্প কম পুঁজিনির্ভর ও শ্রমঘন হওয়ায় দেশে এ শিল্পটি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিসহ দারিদ্র বিমোচনের অন্যতম মাধ্যমে হিসেবে বিবেচনা করা হয় গবেষণাপত্রে।

সে সময় বয়লার ফার্মের বাৎসারিক মুনাফার পরিমাণ মোট বিনিয়োগের ১৫৪ শতাংশ এবং লেয়ার ফার্মে এর পরিমাণ ছিল ১০৭ শতাংশ। ভালো লাভ পাওয়া যায় বলেই মানুষ ব্যাপকভাবে মুরগির খামার করতে শুরু করে।

খাতটির একটি শিল্পে পরিণত হওয়ার পেছনে সরকারি সহায়তাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, সরকার থেকে বাণিজ্যিক খামার করতে উৎসাহ দেওয়া হয়। ২০০৮ সালে সরকার জাতীয় পোলট্রি উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করে; যার আওতায় প্রশিক্ষিত খামারিদের বিনা বন্ধকীতে ঋণ প্রদানের সুপারিশ করা হয়।

দেশীয় বাণিজ্যিক খামারের পাশাপাশি ভারত ও থাইল্যান্ড ভিত্তিক বিদেশি কিছু ফার্মও বাংলাদেশে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করে। বিনিয়োগ আসে পোলট্রি ফিড প্রক্রিয়াকরণ, প্যারেন্ট স্টক, প্রজনন ও বাজারজাতকরণে।

বেসরকারি বিনিয়োগ আসা শুরু হওয়ার পর থেকে প্যারাগন, কাজী, রাফিত, আগা, আফতাব, নারিশ নামে ৬টি বড় ফার্মে নিজস্ব গ্র্যান্ড প্যারেন্ট স্টক থেকে একদিনের মুরগির বাচ্চা উৎপাদন শুরু হয়।

এছাড়া, অনেক কোম্পানি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন করে পোলট্রির বিষ্ঠা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে নিজস্ব চাহিদা মেটানো শুরু করে।

হাঁস-মুরগির খাদ্য উৎপাদনকে পোলট্রি শিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ হিসেবে ধরা হয়। প্রতিবছর দেশের ফিড মিলগুলোতে ৬৫ লাখ টনের বেশি উৎপাদন হয়; যা স্থানীয় পোলট্রি শিল্পের ৬৫ শতাংশ চাহিদা পূরণ করে বলে জানিয়েছে ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন সূত্র।

অন্যদিকে, প্রাণিসম্পদ খাতের ওপর ভর করে বেড়েছে দেশের ভেটেরনারি মেডিসিন শিল্প। এই শিল্পের বাজার এখন তিন হাজার কোটি টাকা। পোলট্রিসহ, গরু, ছাগল, ভেড়া এবং অন্যান্য প্রাণির চিকিৎসায় ওষুধ উৎপাদন করা হয়। তবে এখনও দেশের চাহিদার অন্তত ৩০ শতাংশ ওষুধ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় বলে জানিয়েছে এনিমেল হেলথ কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। সূত্র:tbsnews

শেয়ার করুন

ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop