২:৩১ অপরাহ্ন

শনিবার, ২৭ এপ্রিল , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
  • হোম
  • বিষমুক্ত সবজি চাষ করেন ছোটমৌশা গ্রামের ২৫ চাষি
ads
প্রকাশ : ফেব্রুয়ারী ২, ২০২২ ৪:৪২ অপরাহ্ন
বিষমুক্ত সবজি চাষ করেন ছোটমৌশা গ্রামের ২৫ চাষি
কৃষি বিভাগ

মানুষকে বিষমুক্ত শাকসবজি খাওয়ানোর সংকল্পে এক জোট হয়েছেন একটি গ্রামের ২৫ জন চাষি। গত শীত মৌসুম থেকে সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব, রাসায়নিক সার ও রাসায়নিক বালাইনাশক ছাড়া সবজি আবাদ করছেন তাঁরা। এতে উৎপাদন একটু কম হলেও মানুষকে অন্তত বিষমুক্ত শাকসবজি খাওয়াতে পারছেন তাঁরা। এক জোট হওয়া চাষিরা টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার দাড়িয়াপুর ইউনিয়নের ছোটমৌশা গ্রামের বাসিন্দা।

উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, অর্গানিক কৃষি গ্রাম হচ্ছে একটি পরীক্ষামূলক কার্যক্রম। দেশের প্রতিটি উপজেলায় এ ধরনের কার্যক্রম সম্প্রসারিত করতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে কৃষিকে বিষমুক্ত করতেই এই উদ্যোগ। এতে কৃষকদের সাড়া মিলছে প্রচুর।

সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামের চারদিক সবুজ সবজির খেত। গ্রামের সাত একর জমিতে চাষ হয়েছে বিষমুক্ত নানা রকম সবজি। জমিতে আছে শিম, শসা, কাঁকরোল, করলা, মিষ্টিকুমড়া, লাউ, ধনেপাতা, বেগুন ইত্যাদি।

ওই কৃষক দলের একজন ককেন চন্দ্র। তিনি ৪৫ শতক জমিতে শিম চাষ করেছেন। ১ মাস ধরে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১০০ কেজি করে শিম বাজারে বিক্রি করছেন। ককেন বলেন, ‘আগে আমরা জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতাম। এর মাধ্যমে বহু বছর হাইব্রিড জাতের শাকসবজি আবাদ করেছি। এতে ফলন বেশ ভালো হতো। তবে আমরা জানতাম না, এসব ফসল বিষাক্ত এবং এসব খেয়ে মানুষ নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। কৃষি বিভাগ থেকে জানতে পারি, রাসায়নিক সার, কীটনাশক প্রয়োগে জমির ফসল বিষে পরিণত হয় এবং মাটি উর্বরতা শক্তি হারিয়ে ফেলে। আমরা গেল বছর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি, আর মানুষকে বিষ খাওয়াব না। বর্তমানে আমাদের গ্রামের সবাই নিরাপদ সবজি আবাদে সংকল্পবদ্ধ হয়েছেন।’

গ্রামের চাষিরা সম্মিলিতভাবে গর্ত খুঁড়ে গৃহস্থালি বর্জ্য দিয়ে তৈরি করছেন কম্পোস্ট সার। কেউ কেউ ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সারও তৈরি করছেন। বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে জৈব বালাইনাশক। এসব ফসলের জমিতে প্রয়োগ করে মিলছে ভালো ফলন। ওই গ্রামের কিষানি শ্যামলী রানী কেঁচো সার তৈরিতে বেশ দক্ষ হয়ে উঠেছেন। মাত্র ১৫ দিনের মাথায় জৈব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি করেন তিনি। এই সার জমিতে প্রয়োগ করলে অনেক ভালো ফলন মেলে বলে জানান শ্যামলী রানী।

গ্রামের আরেক নারী কৃষক রত্না বেগম বলেন, তিনি এবার ৫০ শতাংশ জমিতে শিম ও কাঁকরোল আবাদ করেছেন। শিম শেষ হলে একই মাচাতেই তিনি কাঁকরোল আবাদ করবেন। কৃষি বিভাগ থেকে জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ বিষয়ে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন তিনি।

গ্রামের সোহেল রানা নামের এক শিক্ষিত যুবক দেড় একর জমিতে মিষ্টিকুমড়ার আবাদ করেছেন। তাঁর খেতের মাঝে স্থাপন করেছেন ‘সেক্স ফেরোমন ফাঁদ’। এটি হচ্ছে কীটপতঙ্গ দমনের জৈব পদ্ধতি। এই ফাঁদ ব্যবহারে সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, এটি প্রাকৃতিক পদ্ধতি, যা মানুষ বা পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে না। সুতরাং এটি পরিবেশবান্ধব। এই পদ্ধতিতে প্লাস্টিক বক্স ব্যবহার করা হয়। যার দুই পাশে তিন কোনা ফাঁক থাকে। পুরুষ পোকাকে আকৃষ্ট করতে স্ত্রী পোকার শরীর থেকে নিঃসৃত একরকম প্রাকৃতিক রাসায়নিক পদার্থ বা স্ত্রী পোকার গন্ধ ব্যবহার করা হয় ফাঁদে। এর আকর্ষণে পুরুষ পোকা ফাঁদের দিকে ধেয়ে আসে এবং ফাঁদে পড়ে মারা যায়। এতে জমির ফসল নিরাপদ থাকে।

নিরাপদ সবজি গ্রাম ছোটমৌশার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মতিউর রহমান বলেন, অতীতে এসব কীটদমনে ব্যবহৃত হতো বিষাক্ত কীটনাশক। সেক্স ফেরোমন ফাঁদ বা গন্ধ ফাঁদ ব্যবহার করায় জমির ফসল নিরাপদ থাকছে। খাদ্যমান ও পুষ্টি সঠিকভাবে পাওয়া যাচ্ছে। ফলে মানুষ নিরাপদ সবজি খেতে পারছে।

এ নিয়ে কথা হয় সখীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিয়ন্তা বর্মণের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিষমুক্ত সবজি চাষাবাদে গ্রামের কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। আগ্রহী ২৫ জনের একটি দল গঠন করা হয়েছে। ওই দলের নামকরণ করা হয়েছে সমন্বিত বালাই দমন দল। এই কার্যক্রমে গ্রামের কৃষকেরা শতভাগ সফল হয়েছেন। উপজেলার ছোটমৌশা নামের গ্রামটি এখন বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। পর্যায়ক্রমে উপজেলার প্রতিটি গ্রামে হবে বিষমুক্ত সবজির আবাদ।

শেয়ার করুন

ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop