১১:৪০ পূর্বাহ্ন

শনিবার, ২৭ এপ্রিল , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
  • হোম
  • ২৫টি হাঁস দিয়ে শুরু, এখন মাসে মুনাফা অর্ধলক্ষাধিক টাকা
ads
প্রকাশ : মার্চ ৯, ২০২১ ১০:২০ পূর্বাহ্ন
২৫টি হাঁস দিয়ে শুরু, এখন মাসে মুনাফা অর্ধলক্ষাধিক টাকা
কৃষি বিভাগ

আগের মতো কঠোর পরিশ্রম করতে পারছিলেন না। ছেলের লেখাপড়ার খরচ ও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। তিন মেয়ের বিয়ে দিতে জমি বন্ধক রাখতে হয়েছিল, করতে হয়েছিল ধারদেনা। এখন সেসব অতীত। নিজের চেষ্টায় ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি, পেয়েছেন অর্থনৈতিক সচ্ছলতা। হয়েছেন সফল উদ্যোক্তা ও খামারি।

এই গল্পের যিনি নায়ক, তাঁর নাম সিরাজুল ইসলাম। বয়স ৭০ বছর ছুঁইছুঁই। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কশবা গ্রামে তাঁর বাড়ি। রোববার বেলা ১১টার দিকে গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ছেউটিয়া নদীর পাশে বসে কথা হচ্ছিল তাঁর সফলতা ও ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প নিয়ে।

দুই বছর আগে মাত্র ২৫টি পাতিহাঁস লালন-পালন শুরু করেন সিরাজুল ইসলাম। তা থেকে এখন ৭০০ হাঁসের খামারে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে প্রতিদিন গড়ে ৩০০টি হাঁস ডিম পাড়ে। এসব ডিম পাইকারি দরে প্রতিটি ৭ থেকে ৮ টাকায় বিক্রি করে নগদ টাকা পাচ্ছেন তিনি। দুই কর্মচারীর বেতন ও অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে তাঁর মাসিক মুনাফা এখন অর্ধলক্ষাধিক টাকা।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রথমে ২৫টি হাঁসের দল নিয়ে পাশের ছেউটিয়া নদীতে ছেড়ে দিয়ে আসেন। সারা দিন হাঁসগুলো নদীর শামুকসহ বিভিন্ন খাবার খেয়ে কাটিয়ে দেয়। দিনে দিনে হাঁসের সংখ্যা বাড়তে থাকে। কিছুদিন যাওয়ার পর নদীর দুই পাশে নেট জাল দিয়ে হাঁসগুলো একটি নির্দিষ্ট স্থানে আটকানোর ব্যবস্থা করেন। সন্ধ্যা হলেই হাঁসগুলো তুলে এনে খামারে ঢোকানো হয়। একসঙ্গে ২৫০ থেকে ৩০০টি ডিম দিতে থাকে। এসব ডিম অনেকে বাড়ি থেকে নগদ টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে যান।

রোববার সিরাজুলের খামারে গিয়ে দেখা যায়, ছেউটিয়ার বিস্তীর্ণ জলাভূমিতে ভেসে বেড়াচ্ছে হাঁসের দল। হাঁস দেখাশোনার জন্য আছেন দুই কর্মচারী। পানিতে ডিঙি ভাসিয়ে হাঁসের দলগুলোর নজরদারি করছেন তাঁরা।

ডিম দেওয়ার পর থেকেই লাভের টাকা দিয়ে খামারে নতুন হাঁস কেনা হয় বলে জানালেন খামারি সিরাজুল। বলেন, কিছু ডিম রাখা হয় বাচ্চা ফোটানোর জন্য। এতে হাঁসের সংখ্যার পাশাপাশি আয়ও বাড়তে থাকে। বর্তমানে ৭০০ হাঁস আছে খামারে। গত শীতে হাঁসের ডিমের চাহিদা ও দামও বেশি ছিল। বর্তমানে কর্মচারীসহ সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে প্রায় ৬০ হাজার টাকা লাভ হয়।

দুই কর্মচারী সন্ধ্যায় খামারে হাঁস নিয়ে ফেরার পর রাতে সিরাজুল নিজেই দেখাশোনা করেন। রোগবালাইয়ের হাত থেকে বাঁচাতে প্রতিষেধক ওষুধ মেশানো খাবার নিজেই তৈরি করেন। কোথাও থেকে প্রশিক্ষণ না নিলেও এই কাজগুলো শিখেছেন অন্যদের দেখাদেখি। সিরাজুল বলেন, ‘দিনের বেশির ভাগ সময় হাঁসের সঙ্গে কাটানোয় পরিবারের মতো হয়ে গেছে। এখন তাদের গতি-প্রকৃতি দেখেই বুঝতে পারি কখন কী করতে হবে।’

খামারের ডিম বিক্রি করে অর্জিত মুনাফা দিয়ে সিরাজুল ইসলামের বাড়ির চেহারাও পরিবর্তন হয়েছে। ভিটেমাটিতে তিনি একটি পাকা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। ছেলের পড়াশোনা ও থাকা–খাওয়া বাবদ মাসিক টাকা মাস শেষ হওয়ার আগেই পাঠাতে পারেন। তিন মেয়ের জামাইদের ভালো করে দেখাশোনাও করতে পারেন। চার বিঘা কৃষিজমি বন্দক নিয়ে ইজারা দিয়েছেন। সড়কের পাশে একটি গুদামসহ জায়গা কেনার পরিকল্পনা করছেন তিনি।

গ্রামের বাসিন্দা হজরত আলী বলেন, মানুষের ইচ্ছাশক্তি মানুষকে অনেক দূরে নিয়ে যেতে পারে। এর উজ্জ্বল নিদর্শন সিরাজুল ইসলাম। বৃদ্ধ বয়সেও তিনি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। দেশের প্রতিটি মানুষের এই ধরনের উদ্যম ও ইচ্ছাশক্তি থাকা দরকার।

কশবা গ্রামের সিরাজুল ইসলাম স্বনির্ভরশীল একজন উদ্যমী মানুষ বলে জানান ধানখোলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আখেরুজ্জামান। বলেন, বয়স কোনো বাধা হতে পারেনি। তাঁর এই দৃষ্টান্ত সমাজের সবার দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে সক্ষম হবে।

সুত্রঃ প্রথম আলো
শেয়ার করুন

ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop