৭:০৩ অপরাহ্ন

শনিবার, ২৭ এপ্রিল , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
  • হোম
  • ৫ বছরে খাদ্যের বস্তার দাম বেড়েছে প্রায় ৫০০ টাকা, ব্রয়লারের দাম বেড়েছে কত ?
ads
প্রকাশ : জুলাই ১৫, ২০২১ ১:৪৮ অপরাহ্ন
৫ বছরে খাদ্যের বস্তার দাম বেড়েছে প্রায় ৫০০ টাকা, ব্রয়লারের দাম বেড়েছে কত ?
পোলট্রি

সালাম সাহেব, উত্তরার বিজিব মার্কেট থেকে নিয়মিত বাজার করে থাকেন । বাজারের লিস্টে আর কিছু থাকুক আর না থাকুক ব্রয়লার মুরগি থাকা চাই কেননা তার ২ বাচ্চার প্রিয় খাবার হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি । প্রায় ৪ বছর ধরে এখানেই বাজার করেন, রমজানের ঈদ ছাড়া প্রায় সবসময়ই ব্রয়লারের দাম স্থিতিশীল তার কাছে । দামটা কেজি প্রতি ১১০ থেকে ১৫০ এর মাঝেই থাকে সবসময়, অর্থাৎ দাম বাড়েনি খুব একটা। ব্রয়লার মাংস কম বেশি সবারই খাওয়া হয়, শুধু নিন্মবিত্ত, মধ্যবিত্ত কিংবা উচ্চবিত্ত ভেদে রেসিপি ভিন্ন হয় ।

ঠিক বিপরীত চিত্র খামারিদের মাঝে । ব্রয়লারের খাবারের দাম অস্থিতিশীল যা গত কয়েক মাসে চরম রূপ ধারন করেছে । সাধারনত এদেশের খামারীগন ব্রয়লার পালনের ক্ষেত্রে রেডি ফিড খাওয়ান এবং দেশে অসংখ্য ফিড কোম্পানি রয়েছে । বিগত বছরের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় যে, ২০১৬ সালে প্রতি ৫০ কেজি ফিডের বস্তার দাম ছিল কোম্পানিভেদে ২০৫০-২১০০ টাকা । সময়ের সাথে সাথে ফিডের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু চরম রূপ ধারন করেছে মূলত ২০১৯ এর আগস্ট থেকে । এই সময়ে ফিডের দাম বস্তাপ্রতি কোম্পানিভেদে ২২৫০ থেকে২৩০০ টাকা ছিল, ২০২০ এর প্রায় পুরোটা সময় এই দাম ২৪০০ থেকে ২৪৫০- টাকার মাঝে ছিল আর সেটা বৃদ্ধি পেতে পেতে বর্তমানে প্রায় ২৫০০-২৫৫০ টাকা । অর্থাৎ ৫ বছরে ফিডের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বস্তাপ্রতি ৫০০ টাকা, কেজিতে প্রায় ১০ টাকা । অথচ ব্রয়লার মাংসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে কত টাকা ?

আরেকটু গভীরে যেতে চাই । ১ টি পূর্ণ ব্রয়লার উৎপাদনে কতটুকু খাবার দিতে হয় সে সম্পর্কে একটু ধারনা দেওয়া যাক । ১ দিন বয়সের একটি বাচ্চা প্রায় ৩০-৩৫ দিন লালন পালন করা হয় । এই সময়ে ২.৫ কেজি ফিড খাওয়ানো হলে একটি মুরগির ওজন আসে (খাবার ভেদে) প্রায় ১.৬ কেজি থেকে ১.৮ কেজি ।  অর্থাৎ ১২৫-১৩০ টাকার খাবার খাওয়ালে আপনি ১.৬ কেজি থেকে ১.৮ কেজি ওজন পাবেন, ১.৬ কেজি-১.৮ কেজি মাংসের দাম ১৯০ থেকে ২০৫ টাকা  (১২০ টাকা কেজি ধরে) । আরেকটি তথ্য না দিলেই নয়, ভোক্তা কি দামে মাংস কিনেন সেটা আপাতত ভুলে যান কারণ একজন খামারি মুরগি বিক্রির সময় বাজার মূল্যের চেয়ে কেজি প্রতি প্রায় ১০-১৫ টাকা কমে বিক্রি করেন, মাঝের যোগ বিয়োগ গুন ভাগ মধ্যস্বত্বভোগীদের । এই সব হিসেবের সাথে যোগ করুন ১ দিন বয়সী বাচ্চার দাম যা সারা বছরের গড় হিসেব ধরলেও প্রায় ৩৫-৪০ টাকা । আরোও যোগ করুন মুরগি পালনের সময় ভ্যাক্সিন, অন্যান্য ঔষুধ, মুরগি মারা যাওয়া বাবদ লস, বিদ্যুৎ ও পানির বিল এবং অন্যান্য ।  উৎপাদন খরচের যোগ বিয়োগ আপনারা করে নিন । তারপরও একজন খামারি ১০০০ মুরগিতে যদি ৫,০০০ থেকে ৭,০০০ টাকা লাভ করে তাহলেও সে বেজায় খুশি অথচ এটা কিন্তু তার লাভ না । বেশিরভাগ খামারই স্বামী -স্ত্রী দ্বারা পরিচালিত হয়, এই ২ জনের পারিশ্রমিক কখনই হিসেব করা হয় না, আসলে এই যে ৫-৭ হাজার টাকা আসছে এটা লাভ নয় বরং পারিশ্রমিক; অনেকের ভাগ্যে তাও জুটে না । তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এই পারিশ্রমিকের টাকাও বেশিরভাগ খামারি পাচ্ছেন না কারণ খাবারের দাম বৃদ্ধি, মুরগি মারা যাওয়া এবং অন্যান্য ।

 

খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে জানান এনাম ট্রেডিং এর এজিএম মোঃ সাইফুল আলম।  তিনি বলেন, মূলত খাদ্যের কাঁচামালের কারণেই আজকের এই অবস্থা, ভুট্টার জন্য আমরা ব্রাজিলের উপর নির্ভরশীল, আমাদের দেশে যে ভুট্টা হয় তা দিয়ে চাহিদার ২০-২৫% পূরণ হয়, বাকিটা আমদানি করতে হয় । করোনার কারনে ব্রাজিলের ভুট্টা কম আসছে, গত বছর যেখানে ভুট্টার কেজি ছিল ১৬-১৭ টাকা বর্তমানে তা ২৭-২৮ টাকা । ১ বছরের ব্যবধানে সয়াবিনের মূল্য ৩৭-৩৮ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৮-৫০ টাকা । প্রায় সকল উপাদান বাইরে থেকে আনতে হয়, করোনার কারণে সবকিছুর দাম যেমন বেড়েছে তেমনি জাহাজের ভাড়াও বেড়েছে অনেক । এখন এমন একটা অবস্থানে এসে পৌঁছেছে যে ফিড কোম্পানিগুলোর ফিড বিক্রি করলেই বরং লস হচ্ছে, ফিড বিক্রি কমে গেলেই বরং তারা খুশি হবে ।

এ প্রসঙ্গে বিটিসি লিমিটেড (ফিড ইনগ্রেডিয়েন্টস অ্যান্ড এডিটিভস সাপ্লাই ডিভিশন)  এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলতাফ বিশ্বাস বলেন, চীনের বেশি পরিমানে পণ্য ক্রয় করে রাখা, পণ্য পরিবহণ ভাড়া বৃদ্ধি (প্রায় দ্বিগুন), কনটেইনারের স্বল্পতা, বৈশ্বিক মহামারির ফলে শ্রমিক সংকট, চট্টগ্রাম বন্দরের অত্যধিক ভীড়ের ফলে শিপিং কোম্পানিগুলোর কনটেইনার পাঠানোর অনীহা- এসব কারণগুলোও বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী ।

প্রভিটা গ্রুপের জিএম (সেলস এন্ড মার্কেটিং) মোঃ ফজলুর রহমান মজুমদার বলেন, আমাদের দেশের খামারিদের অবস্থা এমন যে, তিনি কষ্ট করে পণ্য উৎপাদন করেন কিন্তু তিনি তার উৎপাদিত পণ্যের দাম নির্ধারন করতে পারেননা। তার জন্য নির্ভর করতে হয় অন্যজনের উপর। এই নিয়মের বিকল্প কিছু করা জরুরী বলে আমি মনে করি। পাশাপাশি ব্রয়লার মুরগির চাহিদা অনুযায়ী বাচ্চা উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থা জোরদার করাও জরুরি বলে মনে করি।

 

খামারীদের অবস্থা দিনকে দিন এতটাই শোচনীয় হচ্ছে যে ইতোমধ্যে অনেক খামারি ঋনের বোঝা মাথায় নিয়ে তাদের খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে আর যারা টিকে আছে তারা বিশ্বাস করে যে, একমাত্র সরকারী হস্তক্ষেপই পারে খামারীদের নতুন দিনের আলো দেখাতে…

 

 

ডা. খালিদ হোসাইন

সম্পাদক

শেয়ার করুন

ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop