১:৪১ অপরাহ্ন

শনিবার, ২৭ এপ্রিল , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
  • হোম
  • লবণাক্ত জমিতে ফলবে তিন ফসল
ads
প্রকাশ : ডিসেম্বর ২৬, ২০২১ ১২:৫৫ অপরাহ্ন
লবণাক্ত জমিতে ফলবে তিন ফসল
কৃষি গবেষনা

জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবে লবণাক্ততার তীব্রতায় দিন দিন অনাবাদি জমির পরিমাণ বাড়ছে। এখন বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাতের কারণে লবণাক্ত এলাকায় শুধু আমনের আবাদ করা সম্ভব হলেও মৌসুমের শেষ দিকে বৃষ্টি কমায় ফসলের দানার সংখ্যা হ্রাস পায়। এতে আমনের আবাদও খুব ভালো হয় না। কিন্তু এখন সেই জমিতেই একটি নয়, তিনটি ফসলের আবাদ করা সম্ভব হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) বিজ্ঞানীরা লবণাক্ততা ও জলমগ্নতা সহিষ্ণু ধানের পূর্ণাঙ্গ জীবনরহস্য (জিনোম সিকোয়েন্স) উন্মোচন করায় দেশের ধান গবেষণায় নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে।

ধানের মধ্যে লবণাক্ততা সহিষ্ণু যে জিনগুলো শনাক্ত করা হয়েছে, তা উচ্চ ফলনশীল ধানের জাতে অনুপ্রবেশ করিয়ে খুব ভালো ফল পাওয়া যাবে। তারা বলেন, লবণাক্ত জমিগুলো দ্রুত আবাদযোগ্য করে তুলতে পারলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশে ২০ লাখ হেক্টর লবণাক্ত জমি রয়েছে। এর মধ্যে শুধু উপকূলীয় অঞ্চলেই লবণাক্ত জমির পরিমাণ ১০ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ত জমির পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৩৩ হাজার হেক্টর। সে হিসেবে গত চার যুগে উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ত জমির পরিমাণ বেড়েছে ২৭ শতাংশের বেশি।

উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষিতে লবণাক্ততার প্রভাব নিরুপণে সম্প্রতি গবেষণা চালায় মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই)। তাদের সমীক্ষায় উঠে এসেছে, শুধু লবণাক্ততার কারণেই প্রতি বছর উপকূলীয় জেলাগুলোতে ৩০ লাখ টন কম খাদ্যশস্য উৎপাদন হচ্ছে।

গবেষণায় দেখা যায়, লবণাক্ততা বাড়তে থাকায় উপকূলীয় অঞ্চলের মাটিতে অণুজীবের সক্রিয়তা কমে যাচ্ছে। একই সঙ্গে মাটিতে জৈব পদার্থ, নাইট্রোজেন ও ফসফরাসের সহজলভ্যতাও কমে যাচ্ছে।

এর বিপরীতে বাড়ছে কপার ও জিংকের মাত্রা। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাতের কারণে লবণাক্ত এলাকায় শুধু আমনের আবাদ করা সম্ভব হলেও মৌসুমের শেষ দিকে বৃষ্টি কমায় ফসলের দানার সংখ্যা হ্রাস পায়। এতে আমনের আবাদও খুব ভালো হয় না। এসআরডিআইয়ের হিসেব অনুযায়ী, উপকূলীয় অঞ্চলে মাঝারি থেকে খুবই তীব্র মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ৮ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর। এসব জমিতে প্রতি বছর লবণাক্ততার কারণে হেক্টর প্রতি গড়ে ৩ দশমিক ৪৮ টন শস্য উৎপাদন কম হচ্ছে। এ হিসেবে শুধু উপকূলীয় অঞ্চলের জমি থেকেই ৩০ লাখ ২৭ হাজার টন ফসল কম পাওয়া যাচ্ছে। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের কার্যকর উপায় লবণাক্ততা ও জলমগ্নতা সহিষ্ণু ধানের উন্নত জাত উদ্ভাবন। সম্প্রতি বিনার ধানের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচনের ফলে এটি সহজ হয়ে গেছে।

কৃষিবিজ্ঞানীরা বলেছেন, ধানের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচনের বিনা ও বাকৃবির যৌথ গবেষণায় বিভিন্ন মাত্রার গামা রেডিয়েশন প্রয়োগ করে অর্ধলক্ষাধিক মিউট্যান্ট (রূপান্তরিত কোষ) সৃষ্টি করা হয়। এর পর সেগুলো থেকে নানামুখী পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে এমজি জেনারেশনে (রূপান্তরিত কোষগুলো যাচাই-বাছাই করে) তিনটি উন্নত মিউট্যান্ট শনাক্ত করা হয়েছে। প্রাপ্ত মিউট্যান্টগুলো মাতৃগাছের জাতের চেয়ে উন্নত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। এ ছাড়া নতুন জাতটি ৮ ডিএস/এম (মাটিতে ৮ মাত্রার লবণাক্ততা প্রতিরোধ করতে পারবে) এবং ১৫ দিন জলমগ্নতা সহিষ্ণু হবে।

বিনার মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, এ গবেষণালব্ধ তত্ত্ব-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেই বাংলাদেশে প্রথম লবণ ও জলমগ্নতা সহিষ্ণু ধানের জীবন রহস্য উন্মোচন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে লবণাক্ততা ও জলমগ্নতা সহিষ্ণু ধান গবেষণায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ধানের মধ্যে লবণাক্ত সহিষ্ণু যে জিনগুলো শনাক্ত করা হয়েছে তা এখন উচ্চ ফলনশীল ধানের জাতে অনুপ্রবেশ করিয়ে খুব ভালো ফল পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।

তিনি বলেন, মানুষ এখন সরু চাল খেতে চায়। তাই সরু জাতের ধানের মধ্যে লবণাক্ত সহিষ্ণু জিনগুলো অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে উন্নত জাতের ধান উদ্ভাবন করা হবে। ফলে যে লবণাক্ত এলাকায় আগে একটি ফসল উৎপাদন হতো। সেখানে তিনটি ফসল খুব সহজেই আবাদ করা সম্ভব হবে।

এ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, খাদ্য নিরাপত্তা টেকসই করতে ও ভবিষ্যতে খাদ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে লবণাক্ত, হাওরসহ প্রতিকূল এলাকায় বছরে দু-তিনটি ফসল উৎপাদন করতে হবে। এখন সেখানে মাত্র একটি ফসল উৎপাদন হয়। পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচনের ফলে প্রতিকূল পরিবেশ-সহিষ্ণু ধানের ফলন সহজতর হবে।

শেয়ার করুন

ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop