৪:২২ অপরাহ্ন

শনিবার, ২৭ এপ্রিল , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
  • হোম
  • বোরোর মজুদকৃত আট লাখ টন চাল মানহীন হয়ে পড়ার শঙ্কা
ads
প্রকাশ : জানুয়ারী ২০, ২০২২ ১২:০৮ অপরাহ্ন
বোরোর মজুদকৃত আট লাখ টন চাল মানহীন হয়ে পড়ার শঙ্কা
কৃষি বিভাগ

খাদ্য অধিদপ্তর গত বছর বোরো মৌসুমে উৎপাদিত চাল সংগ্রহ করেছিল ১৪ লাখ টনের কিছু কম। এর মধ্যে আট লাখ টনের কাছাকাছি এখনো মজুদ অবস্থাতেই রয়ে গিয়েছে। খোদ খাদ্য অধিদপ্তর নিজেই এখন দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা এসব চাল মানহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে। এজন্য গত বছর সংগৃহীত বোরো চাল দ্রুত ছাড়করণের নির্দেশনা দিয়েছে অধিদপ্তর।

সারা দেশে চলতি বছরের বোরো মৌসুমের আবাদ কার্যক্রম এরই মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। যদিও খাদ্য অধিদপ্তরের গত বছর সংগৃহীত বোরো চালের মজুদ এখনো অর্ধেকও ফুরায়নি। বোরো মৌসুমের চাল দীর্ঘদিন সংগ্রহে রাখা যায় না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি দুশ্চিন্তায় ফেলেছে খাদ্য অধিদপ্তরকেও।

অধিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বোরো মৌসুমে চাল সংগৃহীত হয়েছিল প্রায় ১৩ লাখ ৮১ হাজার ৫৫২ টন। এর মধ্যে মিলারদের কাছ থেকে কেনা হয়েছিল ১১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬৩ টন। সর্বশেষ ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত হালনাগাদকৃত তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশের এলএসডি ও সিএসডিগুলোয় এখনো গত বছর সংগ্রহ করা ৭ লাখ ৭০ হাজার ৮৬৯ টন বোরো চাল মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে সেদ্ধ চাল ৭ লাখ ৫৮ হাজার ৫৭১ টন ও আতপ চাল ১২ হাজার ২৯৮ টন। বোরো চালের সবচেয়ে বেশি মজুদ রয়েছে রাজশাহীতে—১ লাখ ৮৮ হাজার ১৫৩ টন। এরপর সবচেয়ে বেশি রয়েছে রংপুর বিভাগে। ওই বিভাগের গুদামগুলোয় এখনো ১ লাখ ৫৮ হাজার ৬৬৭ টন বোরো চালের মজুদ রয়ে গিয়েছে। খুলনা বিভাগে মজুুদ রয়েছে ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৬ টন। এছাড়া ঢাকা বিভাগে ৮৭ হাজার ৩৩১ টন, ময়মনসিংহে ৭৭ হাজার ৩৯৬, চট্টগ্রামে ৮৬ হাজার ৩৬২, সিলেটে ২ হাজার ৭৪৯ ও বরিশালে ২০ হাজার ৯৪৫ টন বোরো চালের মজুদ রয়ে গিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের আবহাওয়ায় আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা বেশি। এ ধরনের আবহাওয়া কীটপতঙ্গ জন্মানোর জন্য আদর্শ। দেশের গুদামগুলো বর্তমানে বেশ পুরনো হয়ে পড়েছে। এ কারণে এসব গুদামে পোকামাকড়ের উপদ্রবও বেশি। পুরনো এসব খাদ্যগুদামে খাদ্যশস্য সংরক্ষণের উপযুক্ত পরিবেশের অভাবও রয়েছে। আবার বোরো চালের সংরক্ষণ সক্ষমতা বেশ কম। ফলে দ্রুত বিতরণ করতে না পারলে এসব বোরো চাল দ্রুত মানহীন হয়ে পড়তে পারে। এ অবস্থায় জেলা ও আঞ্চলিক পর্যায়ের খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের দ্রুত চাল ছাড় করার বিষয়ে চিঠি দিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর।

এ বিষয়ে সাবেক খাদ্য সচিব আবদুল লতিফ মন্ডল বলেন, দেশের গুদামের মান খুব বেশি ভালো না। আবহাওয়ার কারণে চালে দ্রুত পোকার আক্রমণ হয়। আবার আমাদের মজুদ ব্যবস্থাপনাও খুব বেশি উন্নত নয়। ফলে চার-ছয় মাসের বেশি মজুদ রাখা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। আবার চালের সংগ্রহের সময়ও চালের মান যাচাই-বাছাই করে নেয়া দরকার। সংগ্রহের সময়ে এমনিতেই বিভিন্ন চাপে মানহীন চাল নেয়ার প্রবণতা দেখা যায়। ফলে সে চাল বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না। নিশ্চিত মানহীনতার বিষয় যদি এসে যায় তাহলে বাজারে এ চাল দেয়া যৌক্তিক হবে না। তাই বোরো চালের এ মজুদ খালি করার উদ্যোগ আরো আগেই নেয়া প্রয়োজন ছিল। তাহলে বাজারে চালের দামও আরো নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত। আবার দ্রুত গুদাম থেকে চাল ছাড় করতে গিয়ে যাতে গুদামই খালি না হয়ে যায়, সেটিও নজরে রাখতে হবে। অন্যথায় বাজারে নেতিবাচক বার্তা যেতে পারে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের উদ্দেশে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আব্দুল্লাহ মামুন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন মজুদের ফলে বোরো চালের গুণগতমান হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য এসব চাল সংরক্ষণে যথাযথ পরিচর্যার জন্য সংশ্লিষ্টদের অধিকতর যত্নবান হওয়া দরকার। এ পরিস্থিতিতে গুদামগুলোয় সংরক্ষিত বোরো/২১ চাল ওয়ারেন্টি অনুযায়ী বিভিন্ন খাতে বিলি-বিতরণ করে নিঃশেষ করা প্রয়োজন। যেসব জেলা বা বিভাগের এলএসডি ও সিএসডিগুলোয় গত বছরের বোরো চাল উদ্বৃত্ত রয়েছে, সেগুলো থেকে ঘাটতিতে থাকা জেলা বা বিভাগের এলএসডি-সিএসডিগুলোয় পাঠানো নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য অভ্যন্তরীণ সড়ক পরিবহন ঠিকাদার (আইআরটিসি), অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন ঠিকাদার (আইবিসিসি), বিভাগীয় সড়ক পরিবহন ঠিকাদারের (ডিআরটিসি) মাধ্যমে যথাসময়ে সূচি জারি করে গত বছরের বোরো চাল পাঠানো নিশ্চিত করতে হবে। এ নির্দেশনা অমান্য করে কোনো এলএসডি ও সিএসডি থেকে গত বছরের বোরো চালের পরিবর্তে সদ্য সংগৃহীত আমন চাল যাতে কোনো অবস্থাতেই বিলি-বিতরণ করা না হয়, সে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিটরিং করবেন।

জানা গেছে, দেশের বেশির ভাগ গুদামেরই অবকাঠামো বেশ পুরনো। আবার দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় আধুনিক ব্যবস্থারও ঘাটতি রয়েছে। ফলে এসব খাদ্যগুদামে কীটের আক্রমণের শঙ্কাও থেকে যাচ্ছে। আবার সংরক্ষণের উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় আগেও বিভিন্ন সময়ে গুদামজাত খাবারের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

তবে খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে এখন খাদ্যশস্য মজুদের জন্য সনাতনী পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসে আধুনিক পদ্ধতির প্রয়োগ শুরু হয়েছে। সেজন্য আধুনিক সাইলো তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব সাইলোয় খাদ্যশস্য মজুদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ থাকে। আবার কীটপতঙ্গ প্রতিরোধে স্থাপনা নির্মাণকালে ব্যবহার করা হচ্ছে বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত বিভিন্ন পদ্ধতি। তাছাড়া বাতাসের আর্দ্রতা ও উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণের জন্য উপযুক্ত কারিগরি সক্ষমতার ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, প্রথাগত গুদাম ও চাল সংরক্ষণ ব্যবস্থার কারণে চালের মান ধরে রাখাটা একটু কঠিন। তবে চেষ্টা চলছে আধুনিক মানের গুদাম তৈরি করার। বেশকিছু আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির গুদাম নির্মাণাধীন রয়েছে। আবার আমন মৌসুমের জন্য চাল সংগ্রহ করতে হবে। এজন্য গত বছরের বোরো মৌসুমের সংগৃহীত চাল দ্রুত খালি করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে বোরোর মজুদ খালি হলেও আমন মৌসুমের চাল দিয়ে সেটি দ্রুতই পূরণ করা সম্ভব হবে। ফলে মোট মজুদে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।

শেয়ার করুন

ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop