২:৪৫ অপরাহ্ন

শনিবার, ২৭ এপ্রিল , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
  • হোম
  • সিলেটে ভরাট হচ্ছে নদী-খাল : প্রতিবছরই কমছে ফসলি জমি
ads
প্রকাশ : ডিসেম্বর ২৪, ২০২১ ৩:০১ অপরাহ্ন
সিলেটে ভরাট হচ্ছে নদী-খাল : প্রতিবছরই কমছে ফসলি জমি
পাঁচমিশালি

সিলেটের সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদী পেরিয়ে উৎমা সীমান্ত সড়কপথে যাত্রা করতে না করতেই চোখে পড়ে একটি দীর্ঘ সেতু। কলাবাড়িতে প্রবহমান বানীরামের খালের ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল বিএনপি সরকারের শাসনামলে। কিন্তু সময়ের আবর্তনে এই রাস্তা, সেতু আর সমতলভূমি একাকার হয়ে গেছে। সেতুর নিচ দিয়ে এখন আর পানিপ্রবাহের কোনো উপায় নেই। অথচ এক সময় উত্তর কলাবাড়ি থেকে এগিয়ে এ খালটি মিলেছিল ধলাই নদীতে। খালের অস্তিত্ব না থাকায় ফলে বর্ষা মৌসুমে এখন এলাকাবাসীকে জলাবদ্ধতা ও দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে জানালেন স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম।

একইভাবে নবীগঞ্জ উপজেলার বরাক নদীর শাখা ডবনা নদীর পাহাড়ি ছড়া দিয়ে নেমে আসা বালিমাটি ও পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে নদীর উৎসমুখ। বিশ্বনাথ উপজেলার আলোচিত বাসিয়া নদীটিও দখল ও ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এভাবে সিলেটের খালবিল-নদীনালা কোথাও ভরাট হয়েছে, কোথাও ভরাট হওয়ার পথে। বৃহৎ নদী সুরমা ও কুশিয়ারার বিভিন্ন স্থানেও জেগেছে চর।

এদিকে কমে আসছে ফসলি জমিও। শহরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আবাসন প্রকল্প, বাসাবাড়ি এবং গ্রামীণ এলাকায় সেচের অভাব, পুকুর, বাড়িঘর ও ইটভাটাসহ নানা স্থাপনা নির্মাণের ফলে কমছে নিট ফসলের জমির পরিমাণ। প্রতি বছর সিলেট অঞ্চলে দশমিক ১০ ভাগ ফসলি জমি কমছে বলে মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য পাওয়া গেছে।

তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, সারাদেশে প্রতি বছর ফসলি জমি কমছে দশমিক ৮ ভাগ ও সিলেট অঞ্চলে কমছে দশমিক ৫ ভাগ।

পরিসংখ্যান মতে, শুধু সিলেট জেলাতেই সংকটাপন্ন ৭৮টি ছোট নদী ও খাল। এগুলো খননের জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের অধীনে ২০১৯ সালে সিলেটের পানি উন্নয়ন বোর্ড মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠায়। কয়েক হাজার কোটি টাকার ওই প্রকল্পগুলো এখনও অনুমোদন পায়নি।

এর আগে প্রথম পর্যায়ে ২০১৭ সালে ১৭টি গ্রুপে সিলেটের আটটি নদী-খাল খনন করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বড়ভাগা নদী, মাকুন্দা নদী, আলকাখাল, খোয়াই খাল বাচাই নদী, বীরদল খাল, ঘোড়ামারা খাল ও দুবরি খাল। বাকি নদী ও খাল দ্বিতীয় পর্যায়ে অনুমোদন পেলে কাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ।

সিলেট বিভাগে নদী ও গাঙের সংখ্যা ৩৬টি। খালের সংখ্যা প্রায় চার হাজার ও বিলের সংখ্যা দুইশর ওপর। এ ছাড়া নিট ফসলি জমি রয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার ৯৪৯ হেক্টর। ১১ লাখ ৮১ হাজার ২১৩টি কৃষি পরিবারের মোট ফসলি জমি রয়েছে ১২ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫৭ হেক্টর। এসব জমির মধ্যে সিলেটে রয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৩৩৩ হেক্টর, মৌলভীবাজারে ১ লাখ ২৬ হাজার ৬৮২ হেক্টর, হবিগঞ্জে ১ লাখ ৮০ হাজার ৫০০ হেক্টর ও সুনামগঞ্জে ২ লাখ ৭৬ হাজার ৪৩৪ হেক্টর। নিট ফসলি জমির মধ্যে বিভাগে গড়ে প্রতি বছর জমি কমছে প্রায় দশমিক ১০ শতাংশ। অনাবাদি জমি আবাদের আওতায় এলেও কমছে মূল ফসলি জমি। তবে শহর ও শহরতলি এলাকায় জমি কমছে প্রায় ২ ভাগ।

মাঠ পর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিজিত আচার্য জানান, গ্রামে আগের মতো খালবিল নেই। নদী ও খাল দখল হচ্ছে। ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে কৃষকরা পানি পাচ্ছেন না। গ্রাম, শহর ও শহরতলি এলাকায় ফসলি জমিতে হচ্ছে বাড়ি, পুকুর ও আবাসন প্রকল্প। বিভিন্ন স্থানে বিশাল ফসলি জায়গায় গড়া হচ্ছে ইটভাটা।

সরেজমিন দেখা গেছে, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ধাপ্পাই নদী, চাউনিয়া বিল, বড়বাঘা নদীসহ বেশ কয়েকটি খালবিল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ছাতকের সিংচাপইড় এলাকায় হাতিরখালটি মরে গেছে। বিশ্বনাথের বাসিয়া নদীর দুই পাশ দখল করে গড়ে তোলা হচ্ছে বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অবশ্য এলাকার লোকজন নদী খনন ও স্থাপনা উচ্ছেদের দাবিতে আন্দোলনও করেছেন।

এদিকে শহরতলির ধোপাগুল এলাকায় ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে অর্ধশত স্টোন ক্রাশার মিল। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের উৎমা এলাকায় ফসলি জমি কেটে তোলা হয়েছে পাথর। একই উপজেলার পারুয়া, ভোলাগঞ্জ, গোয়াইনঘাটের জাফলং, কানাইঘাট ও জৈন্তাপুর, বালাগঞ্জ এবং জকিগঞ্জ ছাড়াও বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় নদী ও খাল যেমন সংকটে রয়েছে, তেমনি ফসলি জমিতেও গড়ে উঠেছে স্থাপনা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি বিলগুলোও ভরাট হয়ে যাচ্ছে। অর্ধশত বিলই এখন সংকটাপন্ন। খননের শর্তে ইজারা নিলেও এসব বিল খনন করেননি মৎস্যজীবীরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক দিলীপ কুমার অধিকারী এ অঞ্চলে ফসলি জমি কমার কথা স্বীকার করে বলেন, জমি কমার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে ধারণা করছি দশমিক ৫ ভাগ হবে। সারাদেশে ফসলি জমি কমার পরিমাণ দশমিক ৮। বাড়িঘর, রাস্তা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি গড়ে ওঠাসহ নানা কারণে ফসলি জমি কমছে।

শেয়ার করুন

ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop