৫:৩৩ অপরাহ্ন

শনিবার, ২৭ এপ্রিল , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
  • হোম
  • হারিয়ে যাচ্ছে কালোজিরা ধান
ads
প্রকাশ : জানুয়ারী ২৯, ২০২২ ৩:৪৩ অপরাহ্ন
হারিয়ে যাচ্ছে কালোজিরা ধান
এগ্রিবিজনেস

পোলাও, বিরিয়ানি, পায়েস, ক্ষীর, জর্দা তৈরিতে একসময়ের প্রসিদ্ধ ধান কালোজিরা এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। খরচ বেশি ও লাভ কম হওয়ায় কৃষকরা এই ধান চাষে আগ্রহ হারিয়েছেন।

৩০ বছরের ব্যবধানে এ ধানের জায়গা দখল করে নিয়েছে উফশি ও উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, সাতকানিয়া, বোয়ালখালী ও মিরসরাই উপজেলায় একসময় দেশিয় জাতের সুগন্ধি কালোজিরা ধান চাষ হতো কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে। ক্রমবর্ধমান খাদ্যের চাহিদা মেটাতে দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতিবান্ধব এমন হাজারও জাতের দেশি ধান।

কালোজিরা, কাশিয়াবিন্নি, লক্ষ্মীদীঘা, হিজলদীঘা, খৈয়ামটর, শিশুমতি, দুধকলম, দেবমণি, বাঁশিরাজ, মানিকদীঘা, রায়েন্দা, জাবরা, লালদীঘাসহ নানান জাতের সুগন্ধি চালের নাম ছিল সবার মুখে মুখে। কিন্তু উচ্চ ফলনশীল আধুনিক ধানের জাত বাজারে আসায় দেশিয় ওইসব ধানের নাম ভুলতে বসেছে মানুষ। বীজের অভাব, সার, ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিসহ নানান কারণে হারিয়ে গেছে এসব সুগন্ধি ধানের চাষাবাদ। তবে সুখের কথা, বিচ্ছিন্নভাবে কম পরিমাণে হলেও বিলুপ্তপ্রায় কালোজিরা ধানের চাষ হচ্ছে চট্টগ্রামে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কালোজিরা ধানের ফলন হয় কম। বিঘা প্রতি অন্য জাতের ধান যেখানে ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ২০ মণ উৎপন্ন হয় সেখানে এ জাতের ফলন হয় সর্বোচ্চ আট মণ পর্যন্ত। তবে বাজারে দাম দ্বিগুণ পাওয়া যায়। সার, সেচ ও পরিচর্যাও লাগে কম। সে হিসেবে আবাদে তেমন লোকসান হয় না। এখনও গ্রামের গৃহস্থ পরিবারের কাছে এ ধানের কদর রয়েছে।

কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, এ জাতের ধান আগে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে চাষ করা হতো। কিন্তু উৎপাদন কম হওয়ায় কৃষকরা বীজ আমদানির ওপর নিভর্রশীল হয়ে পড়ে। এর ফলে হারিয়ে যাচ্ছে এক সময়ের জনপ্রিয় কালোজিরা, কাশিয়াবিন্নি, সরু, বেগুনবিচি, জামাইভোগ, দাদখানি ও খৈয়া মটরসহ নানান জাতের দেশি ধান।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের কৃষি বিভাগের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা বা প্রদর্শনী প্লট প্রকল্প গ্রহণ করলে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা যাবে এসব দেশিয় ধান।

মিরসরাই উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, এখানকার ১৬টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় প্রায় ৫০ হাজার কৃষক পরিবার রয়েছে। আমন মৌসুমে উপজেলায় ২০ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়। এরমধ্যে কালোজিরা ধান চাষ হয়েছে ৮০ হেক্টর জমিতে। গত বছর চাষ হয়েছিল ৮৫ হেক্টর জমিতে। প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করেছেন কৃষকরা।

মিরসরাইয়ের কৃষক নাজিম উদ্দীন বলেন, একসময় প্রত্যেক কৃষক আমনের পাশাপাশি কম-বেশি কালোজিরা চাষ করতো। এখন হাতেগোনা কিছু কৃষক কালোজিরা ধান চাষ করেন। এই ধানের ফলন অন্য ধানের চেয়ে অনেক কম। যে জমিতে আমন চাষ করে ৫ মণ ধান পাওয়া যায় সে পরিমাণ জমিতে কালোজিরা ৩ মণও পাওয়া যায় না।

মিরসরাইয়ের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ সাহা বলেন, আমন মৌসুমে মিরসরাই উপজেলায় ২০ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়। এরমধ্যে কালোজিরা ধান চাষ হয়েছে ৮০ হেক্টর জমিতে। আগের চেয়ে এই জাতের ধান চাষ কমতে শুরু করেছে। এখন কৃষকেরা উচ্চ ফলনশীল ধান চাষ করছে। দেশিয় ধান চাষে আগ্রহ কমে যাচ্ছে।

সীতাকুণ্ডের ১টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নের কৃষকরা একসময় কালোজিরা ধান চাষ করতেন। মুরাদপুর, বাড়বকুণ্ড, কুমিরা, বারৈয়াঢালা, শিবপুর, সৈয়দপুর, ইদিলপুর, বশরতনগর, মহানগরসহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে কালোজিরা ধানের চাষ দেখা যায়নি।

স্থানীয় কৃষক জয়নাল আবেদীন জানান, ১০ বছর আগে আমন চাষের পাশাপাশি গুরা ধানের (কালোজিরা) চাষও করতাম। কিন্তু খরচ বেশি ও লাভ কম হওয়ায় এই চাষ একপ্রকার বন্ধ করে দিয়েছি। বর্তমানে মাত্র ৪ শতক জমিতে এই ধানের চাষ করেছি।

সীতাকুণ্ডের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুপর্না বড়ুয়া বলেন, সলিমপুরে একসময় কালোজিরা ধান চাষ করতেন কৃষকরা। তবে এখন এই ধানের চাষ হচ্ছে না। অন্যান্য এলাকায়ও কমে গেছে এই ধানের আবাদ।

সাতকানিয়া উপজেলায় আমন মৌসুমে ১১ হাজার ৯৬৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়। এরমধ্যে ১০ হেক্টর জমিতে চাষ হয় কালোজিরা ধান।

সাতকানিয়ার উপ সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা শম্ভু নাথ দেব বলেন, একসময় কৃষকরা শখের বসে কালোজিরা চাষ করতেন। এখন অনেক কমে এসেছে। সাতকানিয়ায় মাত্র ১০ হেক্টর জমিতে এ ধান চাষ হচ্ছে। পাওয়া যায় ৫০-৭০ আড়ি পর্যন্ত। উচ্চ ফলনশীল আউশ, আমন, বোরো ধানের ফলন বেশি হওয়ায় কৃষকরাও ওইদিকে ঝুঁকছে।

বোয়ালখালীর পোপাদিয়া, শাকপুরা, আমুচিয়া, কড়লডেঙ্গা, সারোয়াতলী ও পূর্ব গোমদণ্ডী ইউনিয়নের কৃষি জমিতে একসময় কালোজিরা ধান চাষ হয়েছে। স্থানীয়ভাবে ‘কাইল্যা জিরা’ নামে পরিচিত এই ধান বীজের অভাব, সার, ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিসহ নানান কারণে চাষাবাদ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর তথ্যমতে, ১৯১১ সালে ১৮ হাজার জাতের ধানের রেকর্ড রয়েছে। ১৯৮৪ সালে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জরিপে ১২ হাজার ৪৮৭ জাতের হিসাব পাওয়া যায়। ২০১১ সালের জরিপ অনুযায়ী দেশে বর্তমানে আট হাজার জাতের ধান আছে।

শেয়ার করুন

ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop