৩:৩৩ অপরাহ্ন

শনিবার, ২৭ এপ্রিল , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
  • হোম
  • শেরপুরের তুলা চাষ করে চাষিরা লাভবান
ads
প্রকাশ : অক্টোবর ২০, ২০২২ ৬:২০ অপরাহ্ন
শেরপুরের তুলা চাষ করে চাষিরা লাভবান
কৃষি বিভাগ

জেলার নকলা উপজেলার পাশদিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলের নিস্ফলা জমিতে তুলা চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গাছে ব্যাপক ফলন দেখে বুঝাযাচ্ছে খরচের তুলনায় এবার কৃষকরা কয়েকগুণ বেশি লাভ পাবেন।কয়েক বছর ধরে কম খরচে বেশি লাভ পাওয়ায়, নকলার স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে তুলা চাষে আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। জলবায়ুসহনশীল এ তুলা চাষে বেশি লাভ পাওয়ায় উপজেলার বড় ও মাঝারি শ্রেণীর কৃষকরা তুলা চাষে ঝুঁকছেন। তুলার যেন নেই তুলনা, বর্তমানে এটি কৃষকদের কাছে সাদা সোনায় পরিণত হয়েছে।

নকলায় কার্পাস তুলা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন উপজেলার চন্দ্রকোণা ও চরঅষ্টধর ইউনিয়নের চাষি। তুলা চাষে সংসারে সচ্ছলতা আসায় অন্য ইউনিয়নের চাষিরাও আগ্রহী হচ্ছেন। অনুর্বর জমিতে কম পুঁজিতে নামেমাত্র শ্রমে ও সরকারি সহযোগিতা পাওয়ায় উপজেলায় তুলা চাষের পরিমাণ ও চাষির সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। তাদের উৎপাদিত তুলা সরাসরি তুলা উন্নয়ন বোর্ড ন্যায্য দামে কিনে নেয়। ফলে কৃষকরা অন্য ফসলের তুলনায় তুলাতে অধিক লাভবান হচ্ছেন।

উপজেলায় সরকারি সহযোগিতায় ২০১৫ সালে পরীক্ষামূলকভাবে উন্নত জাতের তুলা চাষ শুরু করা হয়। প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে সরকারি সহায়তায় কৃষকরা সিবি-১২ এবং হাইব্রিড প্রজাতির রুপালি-১ জাতের তুলার চাষ করছিলেন। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের আগ্রহ বেড়ে যায়। তবে কিছু কিছু ক্ষেতে এসিট, জেসিট, আমেরিকান বোলওয়ার্ম, স্পটেট বোলওয়ার্ম ও আঁচা পোকার অক্রমণ দেখা দিয়েছিল। এতে তুলা চাষি কীটনাশকের বদলে ফেরোম্যান ফাঁদ ও পার্চিং পদ্ধতিতে বেশ উপকার পেয়েছেন।

নকলা সাব কটন ইউনিট অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর নকলা ইউনিটে ৪০ হেক্টর জমিতে তুলার আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি সহযোগিতায় বিভিন্ন প্রদর্শনী ও কৃষকের নিজ অর্থায়নে চাষ করা হয়েছে। ভালো ফলন ও ন্যায্য দাম পাওয়ায় আগামীতে চাষির সংখ্যা অনেক বাড়বে বলে আশা করছেন তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাসহ স্থানীয় কৃষকরা।

তুলা চাষিরা জানান, রূপালি-১, হোয়াইট গোল্ড-১ ও হোয়াইট গোল্ড-২ জাতের তুলা প্রতি বিঘাতে বীজসহ উৎপাদন হয় ১৬ মণ থেকে ১৮ মণ করে। যার বর্তমান বাজার মূল্য কমপক্ষে ৫৭ হাজার থেকে ৬৪ হাজার টাকা। এমন অনুর্বর জমিতে অন্য কোনো ফসলে এই লাভ পাওয়া কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। আবার একই জমিতে সাথী ফসল হিসেবে বিভিন্ন শাক-সবজি ও মসলা জাতীয় ফসল চাষ করেও বাড়তি আয় করা যায় বলে চাষিরা জানান। তাইতো তুলা চাষিদের মধ্যে অনেকে বলেন, “দুই বিঘা জমির তুলা চাষে, লাখপতি অনয়াসে”।

সফল তুলা চাষিদের মধ্যে জাংগীড়ার পাড় এলাকার আরিফুজ্জামান রঞ্জু একজন। তিনি কয়েক বছর ধরে তুলা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। তিনি এবছর ৫ একর জমি বন্ধক নিয়ে তুলা চাষ করেছেন। রঞ্জুসহ অনেকেই বলেন, তুলা চাষে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ালে অনেক অনুর্বর, নিস্ফলা বা অনাবাদি জমিতে তুলা চাষ করে অনেকের ভাগ্য পরিবর্তন করা সম্ভব। চাষিদের মতে, নিস্ফলা জমিতে তুলা চাষ করায় একদিকে যেমন জমির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে কৃষকরা বেশ টাকা পাচ্ছেন, তাদের পরিবারে আসছে স্বচ্ছলতা। তাই অনেকে ধান ও গমসহ বিভিন্ন আবাদ ছেড়ে তুলা চাষে আগ্রহী হয়েছেন।

নকলা সাব কটন ইউনিট কর্মকর্তা মো. তোফায়েল আলম জানান, এ দেশে আমেরিকান, ইজিপসিয়ান, ইন্ডিয়ান ও পাকিস্তানি জাতের তুলা চাষ হলেও নকলা ইউনিটে রুপালি-১, হোয়াইট গোল্ড-১, হোয়াইট গোল্ড-২ জাতের তুলা বেশি চাষ করা হয়েছে। এছাড়া ডিএম-৪, সিডিবি ও সিবি-১২ জাতের তুলা চাষ করা হয়েছে। তিনি বলেন, তুলা গ্রীষ্মকালীন ফসল। মে মাসের শেষ ভাগ থেকে শুরু করে জুনের প্রথমার্ধ পর্যন্ত জমিতে তুলা বীজ বপন করতে হয়। তুলার ভালো ফলনের জন্য গড়ে ২৩.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং বাৎসরিক গড় বৃষ্টিপাত ৬৩৫ থেকে ১০১৬ মিলিমিটার হওয়া উত্তম। ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার গভীরতায় চাষ করে হেক্টরপ্রতি ২৭৭ কেজি অস্থিচূর্ণ, ৯.৫ টন থেকে ১৩.৮ টন গোবর বা সবুজ সারসহ পরিমিত পরিমাণে ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি সার ব্যবহার করলে ফলন ভালো হয়। আর জাত ভেদে বীজ বুনতে হয় ৭.৫ থেকে ১৮ কেজি। বীজ বপনের ৬ মাস পর তুলা সংগ্রহ করা যায়। নকলা উপজেলার সব ইউনিয়নে তুলা চাষ করা সম্ভব। প্রত্যন্ত অঞ্চলে তুলা চাষ ছড়িয়ে দিতে তুলা উন্নয়ন বোর্ড ও বিভিন্ন প্রকল্প কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে বলে তোফায়েল আলম জানান।

তুলা উন্নয়ন বোর্ডের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে কথা হলে তারা জানান, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো কৃষিনির্ভর। এদেশের ৬৫ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশ বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও এখনো বিভিন্ন শস্য ও ফসল আমদানি নির্ভরতা কমেনি। এমন একটি কৃষি ফসল তুলা। কিন্তু তুলা উৎপাদনে আমরা পিছিয়ে আছি। তুলা একটি আন্তর্জাতিক মানের শিল্প ফসল, যা বিশ্বব্যাপী “সাদা সোনা” হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৮০ লাখ বেল তুলার চাহিদা রয়েছে, কিন্তু চাহিদার প্রায় ৫ শতাংশ দেশে উৎপাদন হচ্ছে। আর পোশাক খাতে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ তুলা বিদেশ থেকে এখনও আমদানি করতে হয়।

আবাদ থেকে তুলার আঁশ ছাড়াও ভোজ্যতেল, খইল, জ্বালানি উপজাত হিসেবে পাওয়া যায়। এ ভোজ্যতেলে খুব কম পরিমাণে কোলেস্টেরল থাকে এবং তুলার বীজ থেকে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হারে তেল পাওয়া যায়; যা উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ এবং সয়াবিন তেলের চেয়েও পুষ্টিকর। আর তুলার খইলে ২৪ শতাংশ উচ্চ প্রোটিন পাওয়া যায়, ২০ শতাংশ হারে উচ্চফ্যাট ও ৪০ শতাংশ ক্রুড আঁশ; যা পশু ও মৎস্যখাদ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

তুলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঐতিহ্য, ইতিহাস, সভ্যতা ও অর্থনীতি। মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার মধ্যে খাদ্যের পরেই বস্ত্রের স্থান। আর এ বস্ত্রের প্রায় ৭০ ভাগ আসে তুলা থেকে। পৃথিবীতে তুলার ইতিহাস রচিত হয়ে আসছে সাত হাজার বছর পূর্বথেকে। বিভিন্ন তথ্যে জানা গেছে,

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তুলা উন্নয়ন বোর্ড গঠন করে পাকিস্তানে নেওয়া ৩২৫ জন চাষিকে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনেন এবং ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে ৭৯৬ একর জমি তাদের মধ্যে তুলা চাষের জন্য বরাদ্দ প্রদান করেন। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে তুলা চাষের শুভ সূচনা হয়। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব ভবন ছিল না, কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তুলা উন্নয়ন বোর্ডের জন্য একটি নিজস্ব ভবনের জায়গা ও অর্থ বরাদ্দ করেন। এর পর থেকে তুলা চাষি ও আবাদ দিন দিন বাড়ছে।

যেখানে সারা বিশ্বে তুলা একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। সেখানে এদেশে তুলার উৎপাদন মাত্র দুই লাখ বেলের মতো; যদিও আগে এক লাখ বেলের নিচে উৎপাদন হতো। সম্প্রতি তুলা উন্নয়ন বোর্ডের হাইব্রিড উন্নত জাতের তুলা উদ্ভাবন ও চাষের ফলে তুলা উৎপাদন দিন দিন বাড়ছে। বিপুল পরিমাণ তুলা আমদানিতে বছরে ২৪ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়। যদিও আমদানিকৃত তুলা ভ্যালুঅ্যাডের মাধ্যমে সুতা ও কাপড়ের আকারে বিদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। এসব তুলা এ দেশে উৎপাদন করতে পারলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব বলে অনেকে মনে করছেন।

দেশব্যাপি তুলা চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যেতুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান, তুলা উন্নয়ন বোর্ড ঢাকা অঞ্চলের কর্মকর্তা কুতুব উদ্দিন, সম্প্রসারিত তুলাচাষ প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. গাজী গোলাম মর্তুজা, তুলা উন্নয়ন বোর্ডের বিজ্ঞানী ড. মো. তাসদিকুর রহমান ও ড. কামরুল ইসলামসহ অনেক কর্মকর্তা দেশব্যাপি আবাদ করা বিভিন্ন তুলার মাঠ পরিদর্শন করে চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করার পাশাপাশি উদ্বুদ্ধ করণ আলোচনা সভা করেছন। এতে করে তুলা চাষের প্রতি কৃষকরে আগ্রহ বাড়ছে বলে মনে করছেন অনেকে।

শেয়ার করুন

ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop