২:৫৩ অপরাহ্ন

শনিবার, ২৭ এপ্রিল , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
  • হোম
  • বনবিভাগের ব্যতিক্রমী অভিযানে, জীবন ফিরে পেল ৫ টি মেছোবিড়াল
ads
প্রকাশ : অক্টোবর ২৮, ২০২১ ৩:০৯ অপরাহ্ন
বনবিভাগের ব্যতিক্রমী অভিযানে, জীবন ফিরে পেল ৫ টি মেছোবিড়াল
প্রাণ ও প্রকৃতি

গতকাল ২৬ অক্টোবর বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, সিলেট (সদর দপ্তর- মৌলভীবাজার) এর আওতাধীন সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার লামা টোকের বাজারের দোড়গোড়ীয়া গ্রামে উক্ত ঘটনাটি ঘটে। জনৈক মো: ইউসুফ মিয়া নামে এক ব্যক্তি সকাল আনুমানিক পৌনে ১১ টার দিকে ফোনে অত্র বন বিভাগকে জানান যে, তাদের একটি লোহার খাঁচায় ০১ (এক)টি বাঘ (মেছো বিড়াল) ধরা পড়েছে এবং বন বিভাগকে তারা অনুরোধ করেন তা উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
সংবাদ পাওয়া মাত্র বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মহোদয় জনাব মো: রেজাউল করিম চৌধুরীর নির্দেশে তাৎক্ষনিক আমি মির্জা মেহেদী সরোয়ার, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তার নেতৃত্বে ০৫ সদস্যের একটি সশস্ত্র রেস্কিউ টিম গঠন করা হয়। রেস্কিউ টিমের অন্যান্য সদস্যের মধ্যে ছিলেন ফরেষ্টার জনাব মো: মিজানুর রহমান, ফরেষ্ট গার্ড মো: সাদেকুর রহমান, জুনিয়র ওয়াইল্ডলাইফ স্কাউট মো: শাহীন আলম, ও ড্রাইভার টিপলু দেব।

বেলা ১২:৩০ মি. দিকে মেছো বিড়ালটি উদ্ধারের উদ্দেশ্যে সরকারী গাড়ী যোগে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রেসকিউ টিম নিয়ে রওনা দেই। বেলা ২.০০ টার দিকে রেসকিউ টিম মধ্যিপথে পৌছলে মো: ইউসুফ মিয়া জানান যে, আঁটকে রাখা বাঘটি (মেছো বিড়ালটি) খাঁচার মধ্যে ২টি বাচ্চা প্রসব করেছে এবং বাইরে থাকা পুরুষ বাঘটি (মেছোবিড়ালটি) খাঁচার আশে পাশে ঘুরতে দেখা গেছে।
এই খবর পাওয়া মাত্র আমি পরামর্শের জন্য বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মহোদয়কে বিষয়টি জানাই এবং বলি যে, স্ত্রী মেছোবিড়ালটিকে বাচ্চাসহ উদ্ধার করে নিয়ে আসলে পুরুষ মেছোবিড়ালটি থেকে মেছোবিড়ালের পরিবারটি আলাদা হয়ে যাবে। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মহোদয় কিছুক্ষণ পর রেসকিউ টিমকে জানান যে, স্থানীয় জনগনকে বিষয়টি ভালোভাবে বুঝিয়ে ঘটনাস্থলে আশেপাশেই বাচ্চাসহ মেছোবিড়ালটি অবমুক্ত করার জন্য। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে পৌছতে পৌছতে মেছোবিড়ালটি ০৪ টি বাচ্চা প্রসব করে ফেলেছে।

বেলা পৌনে ৪:০০ টায় দিকে রেসকিউ টিম নিয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পৌছে আমরা দেখতে পাই যে, শতশত স্থানীয় জনসাধারণ মেছো বিড়ালটিকে বাঘ ভেবে চারপাশ ঘিরে রয়েছে এবং বাচ্চাগুলো মায়ের বুকের দুধ পান করছে। অতপর: রেসকিউ টিমের টিমলিডার হিসেবে আমি জনগণের উদ্দেশ্যে বলি, “আপনাদের ভীত সন্ত্রস্ত হওয়ার কিছু নেই, আঞ্চলিকভাবে একে মেছোবাঘ নামে ডাকলেও, এটি আসলে বাঘ নয়। এটি বিড়াল জাতীয় প্রাণী, এর প্রকৃত নাম মেছোবিড়াল। প্রাণীটি মানুষকে আক্রমন করে না, বরং এটি মানুষকে ভয় পায়।

তাছাড়া প্রাণীটি মাছ ছাড়াও ইদুর ও ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে ফসলের উৎপাদন বাড়ায়। মেছোবিড়াল কৃষকের শত্রু নয় বরং এরা কৃষকের বন্ধু। তাছাড়া সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেকটি প্রাণীকেই মানুষের কল্যানেই সৃষ্টি করেছেন। তাই এদের বাঁচানোর দায়িত্ব আমাদেরই। মেছোবিড়ালটি বন্দি অবস্থায় ০৪ টি বাচ্চা প্রসব করে আজ বিপদে রয়েছে। একে যদি তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া না হয় তাহলে মা সহ বাচ্চাগুলো মৃত্যুর মুখে পতিত হবে। এখন আপনারাই বলেন আমরা এখন কি করতে পারি।”
রেসকিউ টিমের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত জনগণের মাঝে সচেতনামুলক লিফলেট বিতরণ করেন। জনৈক মো: ইউসুফ মিয়াসহ সাধারণ জনগণ তাদের ভুল বুঝতে পারেন এবং বাচ্চাসহ মেছোবিড়ালটিকে ঘটনাস্থলের পাশ্ববর্তী বাশঁঝাড়ে অবমুক্ত করতে সকলেই একমত হন। অত:পর রেসকিউ টিমের সদস্যদেরকে বলি উৎসুক জনগনকে নির্দিষ্ট দুরূত্ব বজায় রেখে অবস্থান করতে এবং খাঁচার বাচ্চাগুলোসহ মা মেছোবিড়ালটিকে উপস্থিত স্থানীয় জনগণের সামনে অবমুক্ত করে দেই। বন্দি খাঁচার দরজা খুলতেই মা মেছোবিড়ালটি এক রুদ্ধশ্বাস মুক্তির দৌড় দেয়। আমি রেসকিউ টিমের সদস্যদের নিয়ে বাচ্চাগুলোকে তাদের মা (স্ত্রী মেছোবিড়াল) এসে নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। অতপর: সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে সকলকে চমকে দিয়ে মেছোবিড়াল ছানাগুলোকে তাদের মা (স্ত্রী মেছোবিড়াল) এসে নিয়ে যায়।

রেসকিউ টিমের সদস্যরা ০৪ টি ছানা ও ০১ টি মাসহ মোট ০৫ টি মেছোবিড়ালের জীবন বাঁচাতে পেরে এক স্বস্থির নি:শ্বাস ফেলেন। অন্যদিকে সন্তানের প্রতি মায়ের আকুতি যে মানুষের মতই তা স্থানীয় জনগনও পুরোপুরি উপলদ্ধি করেন। সাথে সাথে তারাও ভবিষ্যতে কোন মেছোবিড়ালকে ধরবে না ও মারবে না বলে অঙ্গীকার করেন। “

শেয়ার করুন

ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop