১১:২৬ পূর্বাহ্ন

শনিবার, ২৭ এপ্রিল , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
  • হোম
  • জলজ প্রাণীর ওপর বৈশ্বিক উষ্মায়নের প্রভাব…
ads
প্রকাশ : জুন ২৪, ২০২৩ ১২:০৯ অপরাহ্ন
জলজ প্রাণীর ওপর বৈশ্বিক উষ্মায়নের প্রভাব…
মৎস্য

বিশ্ব উষ্মায়ন হল ভূপৃষ্ঠ এবং বায়ুমণ্ডলের দীর্ঘকালীন উষ্মতা  বৃদ্ধি। গত ১০০ বছরে বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ০.৭৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির বেশিরভাগ অংশই ঘটেছে ১৯৭৫ সালের মধ্যে । তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য প্রধানত মানুষের কার্যকলাপের জন্য উৎপন্ন গ্রীনহউস-গ্যাসই দায়ী। মানুষের কিছু কার্যকলাপ যেমন, বৃক্ষ নিধন,শিল্পায়ণ এবং জীবাশ্ম জ্বালানীর দহনের ফলে এই গ্রীনহউস-গ্যাসের উৎপাদন বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ঘটনাটি পৃথিবীর বিভিন্ন্ স্থানকে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে।

সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী 

এই শ্রেণীর প্রাণীদের ওপর উষ্মায়ন এর প্রভাব বর্তমানে খুবই বর্ধিত হয়েছে। এই প্রভাবগুলির ভিতর যেগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সরাসরি প্রভাবশালী সেগুলি হল – বাসস্থান হতে উৎখাত, তাপমাত্রা প্রদত্ত চাপ, খারাপ আবহাওয়ার সম্মুখিন হওয়া ইত্যাদি। সামুদ্রিক পানিতে ভাসমান প্ল্যাঙ্কটনগুলি হল সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের প্রধান খাদ্য। তাপমাত্রার পরিবর্তনের ফলে এই প্ল্যাঙ্কটনগুলির উৎপাদনের হার ও স্থানের প্রভূত পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে খাদ্যের অভাবও পরিযায়ী হওয়ার জন্য অনেকাংশে দায়ী। সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের শারীরিক বাবস্থাপনা সমুদ্রে বসবাসের উপযোগী। কিন্তু আবহাওয়ার পরিবর্তন তাদের এই স্বাভাবিক বাসভুমিকে বিপুল পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। এদের মধ্যে কিছু দ্রুত আবহাওয়ার পরিবর্তনের সাথে তাল মেলাতে না পেরে অবলুপ্তির পথে পাড়ি দিয়েছে। এই সকল প্রাণীদের জীবনযাপনের জন্য নির্দিষ্ট একটা অনুকুল তাপমাত্রা পরিসরের প্রয়োজন। সমুদ্রের অতিরিক্ত তাপমাত্রা ( Global Warming ) তাদের এই সহ্য ক্ষমতাকে অতিক্রম করে যাছে। ফলে তারা অনেকেই স্বাভাবিক বাসস্থান পরিত্যাগে বাধ্য হয়ে পরিযায়ী প্রাণিতে পরিণত হয়। আর যদি কোনো প্রাণি পরিযান করার জন্য কোনো অনুকূল স্থান এর সন্ধান না পায় এবং বর্তমান বাসস্থান এর অতিরিক্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে না পারে তাহলে অবশেষে তারা অবলুপ্ত হয়।

 

প্লাঙ্কটন

উষ্মায়ন এর প্রভাবে , বৃষ্টিপাতের ধরণ পরিবর্তিত হতে থাকে। আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে, প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি-দ্রব্য সমুদ্রে প্রবেশ করে, ফলে ঋতু  ভিত্তিক প্লাঙ্কটন প্রাচুর্য তৈরি হয় ।

 

 ক্রাস্টাসিয়ান বা কবচি শ্রেণীর প্রাণী

উষ্মায়ন এর প্রভাবে সমুদ্রের জলে কার্বন ডাই অক্সিডের পরিমাণ বৃদ্ধি প্রাপ্ত  হয় । তার ফলে পি এইচ কমে, সমুদ্রের জলে প্রচুর পরিমানে আম্লীকরণ ঘটে। এই ঘটনাটি সমুদ্র-জলে থাকা  খোলক যুক্ত প্রাণীদের প্রচণ্ড পরিমানে ক্ষতিগ্রস্থ করে।  কবচি প্রাণীদের বহিরাবরণে আরাগোনাইট নামক পদার্থ থাকে, যা সমুদ্রের আম্লিক পানিতে দ্রবীভূত হয়ে পরে। ফলে এই কবচি শ্রেণীর প্রাণীদের অবলুপ্তি ঘটে যা সমুদ্রের সমগ্র বাস্তুতন্ত্রকে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে। আরও একটি ঘটনা লক্ষ্য করা হয়, কবচি শ্রেণির প্রানীদের মধ্যে যারা ফাইটোপ্লাঙ্কটনদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে যেমন ক্রিল তারা ৮০% এর কাছাকাছি অবলুপ্ত হয়েছে বিগত ৩০ বছরে। উষ্মায়ন এর প্রভাবে বরফ চাদর গলিত হয়, ফলে সামুদ্রিক শৈবাল ও ক্রিল অবলুপ্ত হয় । তাদের অবলুপ্তির ফলে বহু সামুদ্রিক প্রাণীদের মৃত্যু ঘটে, যারা তাদের পুষ্টির উৎস হিসেবে ব্যবহার করে।

প্রবাল প্রাচীর

প্রবাল প্রাচীর সামুদ্রিক পরিবেশে খুবই জরুরি, কারণ এখানে কার্বনচক্র সংঘটিত হয় । এটি এমন একটি স্থান যেখানে জলজ প্রাণিদের সমাগম ঘটে, বংশ-বিস্তারের জন্য অথবা খাবার সংগ্রহ করার জন্য।ফলে এদের অবলুপ্তির ফলে একটি সম্পূর্ণ খাদ্য-চক্রের বিনাশ ঘটে।  প্রবাল দীর্ঘদিন ধরে বৃদ্ধি পেতে থাকে,কারণ বাইরের প্রভাবের কারণে এগুলো বিনষ্ট হয় না। কিন্তু তাপমাত্রার পরিবর্তন  প্রবাল প্রাচীরকে বিনষ্ট করতে পারে। মৃত প্রবাল আবার বৃদ্ধি প্রাপ্ত হতে পারে না। প্রবাল প্রাচীর এর অবলুপ্তি শুধু মাত্র সমুদ্রে জীব- বৈচিত্র্যের ক্ষতি করে তাই না ,তার সাথে বায়ুমণ্ডলের কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ কম করে। ফলে পরোক্ষভাবে উষ্মায়নে সাহায্য করে।

মাছ

পানির তাপমাত্রা মাছের বংশ-বিস্তারে সাহায্য করে এবং সঠিক জলজ পরিবেশ স্থাপণে সাহায্য করে। বড় মাছের থেকেও লার্ভা ও জুভেনাইল স্তরের মাছ কে বেশি পরিমানে প্রভাবিত করে।

 

উপরের আলোচনা থেকে এটা পরিষ্কার যে জলবায়ুর পরিবর্তন তথা বিশ্ব উষ্ণায়ন জলজ প্রাণীদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। এই প্রভাব শুধুমাত্র তাদের উপরে সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং সমগ্র পরিবেশ‌ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মানুষের দৈনন্দিন খাবারের একটা বড় অংশ যেহেতু জলজ প্রাণীদের থেকে আসে তাই সমগ্র মানবজাতিও এর প্রভাব থেকে নিস্তার পাবে না । পরিবেশ দূষণ যদি কমানো না যায় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে সমগ্র মানবজাতিকেই হয়তো বিলুপ্তির পথ দেখতে হতে পারে ।

শেয়ার করুন

ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop