১:৩৪ অপরাহ্ন

শনিবার, ২৭ এপ্রিল , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
  • হোম
  • হাইব্রিড ধানে আকর্ষণ নেই কৃষকের
ads
প্রকাশ : নভেম্বর ৫, ২০২১ ৫:২৪ অপরাহ্ন
হাইব্রিড ধানে আকর্ষণ নেই কৃষকের
কৃষি বিভাগ

দেশে হাইব্রিড ধানের আবাদ প্রচলন হয় ১৯৯৮ সালে। এরপর গত দুই দশকে চাল উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে হাইব্রিডেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বেশি। সরকারি-বেসরকারিভাবে এ ধরনের ধানের জাত উদ্ভাবন হয়েছে ২১৮টি। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ১০ টন ছাড়িয়েছে। তবু এখনো কৃষকের কাছে খুব একটা গ্রহণযোগ্যতা পায়নি হাইব্রিড ধান। দেশে ধানের মোট আবাদে হাইব্রিড জাতগুলোর অবদান মোটে ১১ শতাংশ।

কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এ নিয়ে নানা পদক্ষেপ নেয়ার পরেও হাইব্রিড ধানের প্রতি খুব একটা আকৃষ্ট হচ্ছেন না কৃষকরা। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, হাইব্রিড ধান থেকে উৎপাদিত চালের গুণগত মান কম। দামও বেশি পাওয়া যায় না। যদিও এর বীজের দাম তুলনামূলক বেশি। আবার এর বীজ উৎপাদন করতে যাওয়াটাও অতিমাত্রায় ব্যয়বহুল, যা কৃষকের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়।

কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্যমতে, দেশে মোট আবাদি জমির প্রায় ৭৫ শতাংশই ব্যবহার করা হয় ধান আবাদে। ২০২০-২১ অর্থবছরে আউশ, আমন ও বোরোর তিন মৌসুমে ধান আবাদ হয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ ৯৫০ হেক্টরে। এর মধ্যে এ তিন মৌসুমে হাইব্রিড ধান আবাদ হয়েছে মাত্র ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ মোট আবাদি জমির মাত্র ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশকে হাইব্রিড ধানের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে বোরোতে ১১ লাখ ৪ হাজার ৬৩০ হেক্টর, আমনে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৬০০ ও আউশে ৫৯ হাজার ১০০ হেক্টর।

যদিও ১৯৯৮ সালে প্রচলনের পর থেকেই হাইব্রিড ধান আবাদে কৃষকদের নানাভাবে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। বেসরকারি খাতও বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে এসেছে। কিন্তু কৃষক পর্যায়ে কোনোভাবেই আবাদ বাড়ানো খুব একটা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় হাইব্রিড নিয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষাও অনেকটা অধরাই থেকে যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাইব্রিড ধান ব্যবহার উপযোগী করতে হয় বীজ অথবা প্যারেন্ট লাইন আমদানির মাধ্যমে। এছাড়া হাইব্রিড ফসলে পোকার আক্রমণ ও চিটাসহ নানা বৈরী উপসর্গও দেখা দেয় বেশি। এ কারণে কৃষকরা স্থানীয় উচ্চফলনশীল (উফশী) জাতের প্রতি বেশি ঝুঁকছেন। এছাড়া হাইব্রিড বীজ দিয়ে বছরে একবারের বেশি আবাদ করা যায় না। পক্ষান্তরে উফশী ও অধিক ফলনশীল স্থানীয় জাত থেকে কৃষক নিজেই বীজ সংরক্ষণ করতে পারেন। দেশীয় জাতের ফসলে সার ও কীটনাশকও লাগে তুলনামূলক কম। দামও পাওয়া যায় ভালো। এছাড়া হাইব্রিড ফসল আবাদে কৃষকদের যে ধরনের জ্ঞানের প্রয়োজন তার অভাব রয়েছে। চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৫ শতাংশের বেশি হলে ভাত ঝরঝরা হয়। কিন্তু হাইব্রিড জাতগুলোয় অ্যামাইলোজের পরিমাণ গড়ে ২২-২৩ শতাংশ। এসব কারণেই কৃষকের মধ্যে হাইব্রিড জাতের ধান আবাদে আগ্রহ দিন দিন কমছে।

বাংলাদেশে শস্যবীজ অনুমোদনের কাজটি করে ন্যাশনাল সিড বোর্ড (এনএসডি)। দুই দশক ধরে এ বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বীজ প্রযুক্তিবিদ ও রেগুলেটরি বিশেষজ্ঞ কৃষিবিদ মো. শাহজাহান আলী। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, মোট ধান আবাদের প্রায় ২৫ শতাংশের বেশি জমিতে হাইব্রিড ধান আবাদ হয় ভারতে। চীনে এটি প্রায় ৬০ শতাংশ। কিন্তু বাংলাদেশে কয়েক দশক ধরেই হাইব্রিড ধান আবাদ ১০ শতাংশের ঘরেই ওঠানামা করছে। মূলত দুটি কারণে হাইব্রিডের আবাদ বাড়ানোয় প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে। এর একটি হলো হাইব্রিড ধানবীজের দাম সাধারণ ধানবীজের তুলনায় প্রায় চার গুণ বেশি। বীজটি কৃষকের উৎপাদন করা সম্ভব হয় না। ফলে কৃষকদের পরনির্ভরশীল থাকতে হয়। অন্যদিকে ভাতের গুণগত মানের কারণে ভোক্তা পর্যায়ে হাইব্রিড ধানের চালের চাহিদাও থাকে কম। সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত ৪০টি দেশে হাইব্রিড ধানের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ বাদে অধিকাংশ দেশেই এ ধরনের ধানবীজ ক্রয়ে কৃষককে ভর্তুকি দেয়া হয়। ফলে ধানের উচ্চফলন পেলেও বাজার চাহিদা কম এবং বীজের দাম বেশি হওয়ার কারণে কৃষকের আগ্রহ কমে যাচ্ছে।

দেশে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য হাইব্রিড ধান আবাদ ২০ শতাংশে উন্নীত করার কোনো বিকল্প নেই জানিয়ে তিনি বলেন, কৃষককে ভর্তুকি সহায়তার মাধ্যমে আবাদ বাড়াতে পারলে অন্যান্য শস্য আবাদে জমি পাওয়া সম্ভব হবে। আবার বছরে যে চাল আমদানি করতে হয়, সেটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে বাংলাদেশ চাল রফতানিকারক দেশে পরিণত হবে। পাশাপাশি চালের গুণগত মানোন্নয়নের দিকেও জোর দিতে হবে।

১৯৯৮ সালে এনএসডির ৪০তম বৈঠকে চারটি হাইব্রিড ধানবীজের অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে তিনটির প্যারেন্ট লাইন ছিল ভারতীয়। একটির প্যারেন্ট লাইন ছিল চীনের। ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো দেশে প্রায় ২৩ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ধান আবাদ হয়। এখন পর্যন্ত মোট ২১৮টি হাইব্রিড ধানবীজের অনুমোদন দিয়েছে এনএসডি। এর মধ্যে চীনা জাত ১৩৯টি, ভারতীয় ৫৫টি ও ফিলিপাইনের একটি। বাংলাদেশে উদ্ভাবিত জাত রয়েছে ২৩টি।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান (ব্রি) ২০০১ সালে দেশে প্রথম হাইব্রিড ধানবীজ উদ্ভাবন করে। ওই সময় থেকে এ পর্যন্ত উদ্ভাবিত ২৩টি নিজস্ব জাতের মধ্যে ব্রি সাতটি, বেসরকারি খাত ১৫টি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় একটি জাত উদ্ভাবন করেছে। বর্তমানে সব মিলিয়ে ৬৯টি প্রতিষ্ঠান হাইব্রিড ধানবীজ উদ্ভাবন, উৎপাদন ও বিপণন কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে। একসময় হাইব্রিড ধানবীজের চাহিদার শতভাগ পূরণ করতে হতো আমদানির মাধ্যমে। বর্তমানে দেশে চাহিদার প্রায় ৭০-৭৫ শতাংশ উৎপাদন করা হচ্ছে।

প্রচলনের পর বাড়তি উৎপাদনশীলতার কারণে প্রথম কয়েক বছর হাইব্রিড জাতের আবাদ সম্প্রসারণে ধারাবাহিক সাফল্যও আসে। দেশে শতাংশের হিসাবে হাইব্রিড ধান সর্বোচ্চ আবাদ হয়েছিল ২০১০ সালে। এর পর থেকেই কমতে থাকে এ-জাতীয় ধান আবাদ। তবে সম্প্রতি হাইব্রিড ধান আবাদ কিছুটা বাড়লেও সেটি আশাব্যঞ্জক নয়। আর উচ্চফলনশীল হাইব্রিডের আবাদ না বাড়ায় দেশে চালের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। বাড়ছে আমদানিনির্ভরতা। গত এক যুগে দেশে শুধু চাল আমদানিতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা।

ব্রি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত ১০৬টি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে উফশী ও ইনব্রিড ধান ৯৯টি ও হাইব্রিড সাতটি। হাইব্রিড জাতগুলোর মধ্যে ব্রি হাইব্রিড ১, ২, ৩ ও ৫ জাতগুলো বোরোতে আবাদ করা হয়। এছাড়া ব্রি হাইব্রিড ৪ ও ৬ জাত দুটি আবাদ করা হয় আমন ফসল হিসেবে। আউশ মৌসুমে আবাদ করা হয় ব্রি হাইব্রিড ৭। এসব জাতের মধ্যে কয়েকটি সর্বোচ্চ আট-নয় টন পর্যন্ত ফলন দিলেও ব্রি হাইব্রিড ধানের জাতগুলো গড়ে ১০ টনের বেশি ফলন দিচ্ছে। এর পরও কৃষকরা ইনব্রিড ও উফশী ধানের জাতগুলোতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন বেশি।

এ বিষয়ে ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বণিক বার্তাকে বলেন, চালের গুণগত মানে পিছিয়ে থাকা এবং সম্প্রসারণ বাধার কারণে হাইব্রিড ধানের জনপ্রিয়তা বাড়ছে না। হাইব্রিড ধানের চাল প্রধানত ভোক্তাদের কাছে কম জনপ্রিয়। কারণ এ চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ কম থাকে। এ কারণে সেদ্ধ করার পর চাল ঝরঝরা হয় না। ভোক্তাচাহিদা না থাকায় বাজারে এ ধানের চাহিদাও কম। ফলে কৃষকরা এ-জাতীয় ধান তুলনামূলক কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন। সাধারণত অন্যান্য ধানের গড় দাম প্রতি মণ ১ হাজার টাকা হলেও হাইব্রিড ধানের দাম ৭০০ টাকার বেশি হয় না। ফলে কৃষকের আগ্রহ কমার নানা কারণ রয়েছে। আমরা এসব প্রতিবন্ধকতা বিবেচনায় নিয়ে নতুন জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা করছি। ভাত ঝরঝরা হওয়ার জন্য চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। কৃষক যাতে ভালো দাম পান, সেজন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ সিড অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএ) সূত্রে জানা গিয়েছে, দেশে ধান আবাদের জন্য প্রতি বছর বীজের প্রয়োজন পড়ে গড়ে প্রায় ১০ হাজার টন। এ বীজের সিংহভাগই সরবরাহ করে বেসরকারি ২০টির বেশি কোম্পানি। দেশী কোম্পানিগুলোর মধ্যে সুপ্রিম সিড, ব্র্যাক, লালতীর, এসিআই লিমিটেড, পেট্রোকেম, আফতাব বহুমুখী ফার্মস সবচেয়ে বেশি বীজ উৎপাদন করে। এছাড়া ইস্পাহানি অ্যাগ্রো, মল্লিকা সিড, ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান বায়ার ক্রপ সায়েন্স ও সিনজেনটা বীজ উৎপাদন করে। তবে দেশে হাইব্রিডের আবাদ সম্প্রসারণ না হওয়ার কারণে এসব কোম্পানির ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধিতে স্থবিরতা নেমে এসেছে।

সূত্র: বণিকবার্তা

শেয়ার করুন

ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop