৪:০৪ অপরাহ্ন

শনিবার, ২৭ এপ্রিল , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
  • হোম
  • দেশীয় প্রাণিসম্পদ অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও সম্ভাবনা
ads
প্রকাশ : মার্চ ৪, ২০২১ ৮:৫৬ অপরাহ্ন
দেশীয় প্রাণিসম্পদ অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও সম্ভাবনা
মতামত-ফিচার

একসময় দেশীয় গৃহপালিত পশুপাখি ছিল কৃষক পরিবারের অবিচ্ছেদ্য অংশ । দেশীয় প্রজাতির এইসব গবাদিপশু গৃহস্থ ঘরের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি অর্থের যোগান দিত পরিবারে । দেশের জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির কারনে প্রাণীজাত খাদ্যের চাহিদা দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় ও কৃষি বাণিজ্যিকীকরণের জন্য অধিক লাভের আশায় দেশীয় প্রাণিসম্পদের জায়গায় আজ অধিক উৎপাদনশীল বিদেশি জাতগুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে । যার ফলশ্রুতিতে আমাদের দেশীয় প্রাণিসম্পদের অস্তিত্ব আজ হুমকির সম্মুখীন।

ভিনদেশীয় জাত ব্যবহারের ফলে উৎপাদন বেড়েছে ঠিকই কিন্তু এসব বিদেশি/ক্রস প্রজাতির আমাদের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর যোগ্যতার অভাব, ব্যয়বহুল ব্যবস্থাপনা ও অধিক রোগপ্রবণতার কারণে এদের পালনে কৃষককে আর্থিকভাবে হিমশিম খেতে হয়।পক্ষান্তরে আমাদের দেশীয় জাতগুলোর উৎপাদন তুলনামূলকভাবে কম হলেও তারা উপরোক্ত সমস্যামুক্ত।

দেশীয় পশুপাখি আবহমানকাল ধরে আমাদের দেশে টিকে আছে, সেই সঙ্গে আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট হওয়ায় খাবার খরচও কম। উচ্চ রোগ প্রতিরোধী বলে পশুপাখির চিকিৎসা ব্যয় খুব কম। দেশি গরুর দুধ, হাঁস-মুরগির ডিম ও মাংস, ছাগলের মাংস ক্রেতার কাছে অধিক পছন্দনীয় বলে উৎপাদিত পণ্যের বাজার মূল্য দ্বিগুণ বা ক্ষেত্রবিশেষে তার চেয়েও বেশি। আমরা যদি অন্ধের মতো বিদেশি জাতের প্রতি মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়ি তবে

আমাদের নিজস্ব ভাল গুণাগুণসম্পন্ন দেশীয় জাত হারিয়ে ফেলব। ফলশ্রুতিতে ভবিষ্যতে প্রচলিত জাত থেকে ভিন্নতর কিছু উৎপাদনের সম্ভাবনা কমে যাবে ।

বর্তমানে বিশ্বের জনপ্রিয় বিভিন্ন জাত যেমন হলস্টেইন-ফ্রিজিয়ান গরু, ব্রাহামা গরু, মেরিনো ভেড়া, ব্রয়লার ও লেয়ার স্ট্রেইন প্রভৃতি বিভিন্ন দেশের নানান জাতের মিশ্রণে দীর্ঘ পরিকল্পিত গবেষণার মাধ্যমে তৈরী করা সম্ভব হয়েছে । আমাদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ কিছু জাত যেমন- গরু: চট্টগ্রামের লাল গরু আকারে ছোট হলেও সঠিক ব্যবস্থাপনায় এই জাতের গরু সর্ব্বোচ্চ ৮.৫ লিটার পর্যন্ত দুধ দিয়ে থাকে।কষ্টসহিষ্ণু এই জাতের গরুর মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু ও প্রাণীগুলোর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। এছাড়াও উত্তরবংঙ্গের ধূসর গরু, পাবনা গরু, মীর কাদিম গরু আমাদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ।

ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলের চামড়া পৃথিবীব্যাপী ‘কুষ্টিয়া গ্রেড’ নামে পরিচিত এবং ১ কেজি মাংসের দাম প্রায় এক হাজার টাকা। পৃথিবীখ্যাত ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল আমাদের দেশের সর্বত্র পাওয়া যেত কিন্তু প্রজননক্ষম পাঠার অভাব ও পাশ্ববর্তী দেশ থেকে বিভিন্ন জাতের পাঠা এনে দেশের উত্তর ও পশ্চিম অঞ্চলে প্রজনন অবাধে চলছে বিধায় ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে ।

বাংদেশে মুরগির অত্যন্ত সম্ভাবনাময় দুটি জাত হলো আছিল ও পাহাড়ি মুরগি । এছাড়াও দেশি খাটো মুরগিও যথেষ্ট সম্ভবনাময়। ক্ষিপ্র গতি ও শিকার করার দক্ষতার জন্য বিখ্যাত সরাইল জাতের কুকুরের অস্তিত্ব আজ চরম হুমকির সম্মুখীন। এছাড়াও দেশি হাঁস, গাড়ল ভেড়া, দেশি শূকর, দেশীয় বিভিন্ন জাতের কবুতর হতে পারে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও ভবিষ্যতের গুরুত্বপূর্ণ সঞ্চয়।

দেশীয় জাতের বিশুদ্ধতা রক্ষায় নিজস্ব নির্দিষ্ট জাতের মধ্যে পরিকল্পিত প্রজনন ঘটাতে হবে। বিভিন্ন উৎসব যেমন কোরবানি ঈদ, পুজোতে প্রজননক্ষম দেশীয় ভাল ষাঁড়/পাঠা/ মোরগগুলোকে গণহারে জবাই/উৎসর্গ না করতে সংশ্লিষ্ট সকলের সচেতনতা বৃদ্ধি ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহ করতে হবে।

দেশীয় জাত উৎপাদন ও সংরক্ষণে সম্পক্ত কৃষকদের আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। সরকারি- বেসরকারি বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে দেশীয় জাতের গবেষণা জোরদারকরণ আবশ্যক।

প্রাণিসম্পদ খাতের টেকসই উন্নয়ন ও ভবিষ্যতের চ্যালেন্জ মোকাবেলায় দেশীয় জাতের সঠিক সংরক্ষণের জন্য নীতিনির্ধারণী মহলের দূরদর্শী সিদ্ধান্ত, দীর্ঘমেয়াদী গবেষণা, সচেতনতা বৃদ্ধি ও সঠিক ব্যবস্থপনা প্রয়োজন ।

নদী যেমন উৎসের দিকের ফিরে যায় না কিন্তু উৎসের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করলে নদীর অস্তিত্ব থাকে না। তেমনি আমরাও অধিক উৎপাদনশীল বিদেশি জাত ব্যবহার করব কিন্তু দেশীয় জাতকে উপেক্ষা করে নয়। সূত্র:আমাদের সময়.কম
লেখক: সহকারী গবেষক , পশুপ্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগ, বাকৃবি

শেয়ার করুন

ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop