৫:৪১ অপরাহ্ন

শনিবার, ২৭ এপ্রিল , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
  • হোম
  • আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও প্যানডেমিক করোনা ভাইরাস।
ads
প্রকাশ : নভেম্বর ৬, ২০২১ ৩:৪৪ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও প্যানডেমিক করোনা ভাইরাস।
বিজ্ঞান ও গবেষণা

ড.সাইফুল ইসলাম সিদ্দিকী :আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে জৈবঅস্ত্র বা জীবাণুর ব্যবহার নতুন কিছু নয়। বিশ্বের বুকে মাথা উচু করে রাখা তথা অন্যকে ছাপিয়ে বিশ্বকে শাসন করার জন্য যে শক্ত অর্থনৈতিক অবস্থান দরকার তা তৈরিতে জীবাণুর ব্যবহার ও নতুন কিছু নয়। এনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটেনিকার ভাষ্য অনুযায়ী, জৈব অস্ত্র হলো বিভিন্ন ধরনের রোগ সৃষ্টিকারী এজেন্ট (ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস কিংবা টক্সিন) বা অন্যকোনো জৈব এজেন্ট যা মানব সম্প্রদায়, প্রাণীকুল বা উদ্ভিদের উপর ক্ষতিসাধনের অস্ত্র হিসেবে প্রয়োগ করা হয়। জৈব অস্ত্রের জৈব উপাদান মানুষ, অন্যান্য প্রাণী বা উদ্ভিদকে অসুস্থ করে তোলে এবং ক্ষেত্রবিশেষে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দেয়। এ ধরনের অস্ত্রের মাধ্যমে মানুষ ছাড়াও গবাদি পশু বা ফসলেরও ক্ষতি সাধন করা যায়। কালের পরিক্রমায় জীবাণু অস্ত্র আজ প্রতিষ্ঠিত একটি বিষয়। বায়ো- টেররিজম বা বায়োলজিক্যাল ওয়্যারফেয়ার প্রভূত শব্দ আমাদের কাছে কিছুটা অপরিচিত মনে হলেও মানবসভ্যতায় জৈব রাজনীতি কিন্তু চলে আসছে সেই পৌরাণিক কাল থেকেই। প্রাচীনকালে ভেড়ার শরীরে রোগের জীবাণু প্রবেশ করিয়ে তা প্রতিপক্ষের এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে মহামারি সৃষ্টির উল্লেখ পাওয়া যায় ইতিহাসে। মঙ্গলদের শত্রুর সাম্রাজ্য প্লেগ আক্রান্ত মৃতদেহ ফেলে রাখা, স্প্যানিশদের ওয়াইনের সঙ্গে দূষিত রক্ত মেশানো অথবা রেড ইন্ডিয়ানদের মাঝে ব্রিটিশদের স্মলপক্সের মহামারি ছড়িয়ে দেওয়ার মতো ডজন-ডজন বায়ো টেররিজমের ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যাবে ইতিহাসের পাতায়।

আন্তর্জাতিক রাজনীতি যেসব নিয়ামক দ্বারা প্রভাবিত বা আবর্তিত হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো বৈদেশিক মুদ্রা ও বাণিজ্য। এই জীবাণু বা ভাইরাসের সাথে অর্থনীতি তথা বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে (১) ভাইরাস প্রতিরোধে টীকা (২) ভাইরাস বিস্তাররোধে বা স্বাস্থ্যবিধী মানতে প্রয়োজনীয় উপকরণ যথা মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাবস, স্যানিটাজার, ফেসশিল্ড, ইত্যাদি (৩) রোগ নির্ণয়ে কিট, রি-এজেন্ট (৪) স্বাস্থসেবা দিতে পিপিই, যন্ত্রপাতি ( পালস অক্সিমিটার), অক্সিজেন সিলিন্ডার ইত্যাদির বাণিজ্যিক উৎপাদন ও রপ্তানি বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায়। করোনা কালীন সময়ে এসব মালামাল বা দ্রব্যাদির উৎপাদন ও বিপণনের সাথে কি পরিমাণ আর্থিক সংশ্লিষ্টতা ছিলো তা এখনো অজানা হলেও বিষয়টি যে ব্যাপক তা সহজেই অনুমান করা যায়। করোনা প্যানডেমিক যে বাণিজ্যর সম্প্রসারণ বা আন্তর্জাতিকরণে কোন কোন দেশকে প্রভূত সহায়তা করেছে তা আজ অনেকটাই স্পষ্ট। নিকটতম ভবিষ্যতে World Economic Review হয়তো তা পরিস্কার করে তুলে ধরবে।

করোনা ভাইরাসের উৎস নিয়ে দুটি কথাঃ
করোনা ভাইরাসের উৎস যে দেশ বা প্রদেশ বা ভাইরোলজী ল্যাবই হউক না কেন, এটা আজ বৈজ্ঞানিকভাবে (Genomic study) প্রমাণিত যে SARS ভাইরাস তার পূর্বপূরুষ। Phylogeny বা Phylogenetics Analysis এ দুটি ভাইরাসের বহূত সাদৃশ্যতা পাওয়া যায়। তারা একই Clade বা phylogram বা Cluster এ পড়ে। সহজে বলা যায়, SARS ভাইরাস Mutagenesis এর মাধ্যমে Corona virus এ রুপান্তরিত হয়েছে। প্রশ্ন হলো এই রুপান্তর প্রকৃতিগতভাবে অনুকূল / প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশে হতে পারে আবার ল্যাবরেটরিতে বৈজ্ঞানিকভাবে অনুকূল / প্রতিকূল পরিবেশে হতে পারে। সাধারণত কোনো ভাইরাস কে Unusual host ( প্রতিকূল পরিবেশ) এর ভিতর চালিত করলে ভাইরাসের pathogenecity (রোগ তৈরির ক্ষমতা) লোপ পায়, যা কি-না টীকা তৈরির মূলনীতি। আবার, Usual host ( অনুকূল পরিবেশ ) এর ভিতর চালিত করলে রোগ তৈরির ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া কোনো ভাইরাসের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ অন্যকোন শক্তিশালী ভাইরাসের উদ্ভাবনের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি হলো Recombinant DNA Technology.উদ্ভাবিত ভাইরাস কেই কেউ Bio engineered ভাইরাস ও বলে থাকে। যে প্রযুক্তি পৃথিবীর যে কেনো জীবের উপর প্রয়োগযোগ্য। বিশ্বব্যাপী Genetic Engineering বা Biotechnology বা Viral Genetics বা Molecular Genetics বা Molecular Biology সহবিভিন্ন নামে এ গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। পৃথিবীর যেসব দেশ বা এলাকায় SARS ভাইরাসের প্রাধান্য ছিলো বা যেসব ল্যাবরেটরিতে এ ভাইরাসের উপর গবেষণা চলছিল, তারাই যে Pandemic Covid-19এর উৎস তাতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। উৎস যাই হোক না কেন বাহক তো আক্রান্ত মানুষ, এবং মানুষই বিশ্বব্যাপী ভাইরাসটি ছড়িয়েছে।

চীন ও অ্যামেরিকা পরস্পরকে দোষারোপঃ
চীনে SARS ভাইরাসের দীর্ঘ সময় প্রাদূর্ভাব, Wuhan Institute of Virology এর SARS সম্পর্কিত গবেষণা কার্যক্রম ও Covid-19 প্যানডেমিক অবস্থার শুরুর জন্য সংগত কারণেই উহান তথা চীন করোনা ভাইরাস বিস্তারের জন্য দায়ী বলে অনেকেই সন্দেহ পোষণ করে। স্বল্পতম সময়ে টীকা উৎপাদন ও রপ্তানি, করোনা রোগ নির্ণয়ের যাবতীয় কীট, রি-এজেন্ট ও রোগের বিস্তার রোধে প্রয়োজনীয় সামগ্রীসমূহের বাণিজ্যিক উৎপাদন ও বিক্রি উক্ত সন্দেহকে আরো শক্ত করে তোলে। অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ডোনাল্ড চীন কে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য দায়ী করে আসছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা কে ভাইরাসের উৎস সন্ধানে তদন্তের নির্দেশ প্রদানের মাধ্যমে একই পথে হাঁটছে। চীন বরাবরই এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে অস্বীকার করে আসছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং এর “ভাইরাসের উৎস সন্ধানঃ যুক্তরাষ্ট্র ছাড় পেতে পারে না ” শিরোনামের লেখাটিতে ১৯৯০ সালে অধ্যাপক রালফ বারিফ নর্থক্যারোলাইনার বিশ্ববিদ্যালয়ের (UNC) মেডিসিন স্কুলে Recombinant Corona Virus নিয়ে গবেষণা করেছিলেন – এ দাবী করেছেন। ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ২৮ টি ল্যাবরেটরী দূর্ঘটনা সংঘটিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন – এর মধ্যেই ৬ টিতে SARS, MARS ও Corona Virus জড়িত ছিল। এক কথায়, তিনি অনেকটা স্পষ্ট করেই করোনা ভাইরাস ছাড়ানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বায়োল্যাব সুরক্ষার খারাপ অবস্থাকেই দায়ী করেছেন।
করোনা প্যানডেমিক ও বিপর্যস্ত মানবতাঃ
মানবতা আজ সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে। কারণ যদি হয় ইচ্ছাকৃত তাহলে সেটি মানবজাতির সর্বোচ্চ দূঃভাগ্যের বিষয়। চীন বা যুক্তরাষ্ট্র বা অন্যকোন দেশ বা বিশেষ কোন বিজ্ঞান গবেষক বা গবেষকদল যদি বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ভাইরাস ছড়িয়ে থাকে তাহলে সেটা হবে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। দেশ,জাতি,বর্ণ বা ধর্ম নির্বিশেষে প্রত্যেকটি মানুষের এ পৃথিবীতে সুস্থভাবে বেঁচে থাকা তার জন্মগত অধিকার। পৃথিবীকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলার অধিকার কেউ সংরক্ষণ করে না। এমনকি অনিচ্ছাকৃত হলেও তাদের কে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে। এজন্যই জাতিসংগের অধীনে সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক দায়ীদের খুজে বের করে শাস্তিপ্রদান অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

ড.সাইফুল ইসলাম সিদ্দিকী

শিক্ষাবিদ ও গবেষক।

অধ্যাপক, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

শেয়ার করুন

ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop