৬:৫৩ অপরাহ্ন

শনিবার, ২৭ এপ্রিল , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
  • হোম
  • আর্সেনিকের ঝুঁকি এড়াতে করণীয়…
ads
প্রকাশ : জুলাই ৯, ২০২১ ২:৪১ অপরাহ্ন
আর্সেনিকের ঝুঁকি এড়াতে করণীয়…
মতামত-ফিচার

কামরুল হকঃ বাংলাদেশ একটি নদী মাতৃক দেশ। দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য নদ-নদী, খাল-বিল। এক সময় নদীই ছিল মানুষের প্রধান পানির উৎস। নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে সভ্যতা, শহর বন্দর গ্রাম। কালের পরিক্রমায় মানুষ নদী বিধৌত অঞ্চল থেকে জীবিকার তাগিদে সরে গেছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টি পাত কমে গেছে। মানুষ ধীরে ধীরে ভূপৃষ্ঠস্থ পানির পরিবর্তে ভূগর্ভস্থ পানির দিকে ঝুঁকেছে। গভীর ও অগভীর নলকূপ এখন মানুষের পানির চাহিদার সিংহভাগ পূরণ করে। এসব নলকূপ একদিকে যেমন পানির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করেছে, অপর দিকে বাড়িয়েছে আর্সেনিক আক্রান্তের সম্ভবনা।

সব পানিতেই আর্সেনিক থাকে। তবে আমাদের শরীর একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় এই বিষাক্ত উপাদান সহ্য করতে পারে। বাংলাদেশে নলকূপের প্রতি লিটার পানিতে ৫০ মাইক্রোগ্রাম এর নিচে আর্সেনিক থাকলে তাকে সুপেয় পানি হিসেবে ধরা হয়। দেশে সর্বপ্রথম ১৯৯৩ সালে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি আর্সেনিকের উপস্থিতি ধরা পড়ে চাপাই নবাবগঞ্জে অগভীর নলকূপের পানিতে। এরপর একে একে সারাদেশেই আর্সেনিকের সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। এর প্রেক্ষিতে ব্রিটিশ জিওলজিক্যাল সার্ভের সহায়তায় সরকার দেশের ৬১টি জেলার নলকূপের পানি পরীক্ষা করে ৪২% নলকূপে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানের চেয়ে বেশি এবং ২৫% নলকূপের পানিতে বাংলাদেশের মানের চেয়ে বেশি আর্সেনিকের উপস্থিতি খুঁজে পায়। এরপর সরকার দেশী বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় নিরাপদ খাবার পানির বিভিন্ন প্রকল্প হতে নেয়। দীর্ঘমেয়াদী এসব প্রকল্প নিরাপদ খাবার পানি সংগ্রহে মানুষকে সচেতনতা করে তুলেছে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা সেচের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতির ফলে খাদ্য শস্যে ক্ষতিকর মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় এই বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছেন। যত্রতত্র অগভীর নলকূপের মাধ্যমে ফসলের জমিতে সেচ দেওয়ায় বাড়ছে আর্সেনিক আক্রান্তের ঝুঁকি।

দেশে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় এবং উজানে নদীর পানি প্রত্যাহার করায় ভূপৃষ্ঠস্থ পানির উৎস মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুকিয়ে গেছে বেশির ভাগ খাল বিল। দেশের বড় বড় নদী ছাড়া আর সব নদীই আজ মৃত প্রায়। অগভীর নলকূপ স্থাপনে খরচ কমে যাওয়ায় ধীরে ধীরে সেচকাজে অগভীর নলকূপ খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এসব নলকূপ স্থাপনে যেসব নীতিমালা আছে অনেক ক্ষেত্রেই তা যথাযথ ভাবে মানা হচ্ছে না। ফলে না জেনে না বুঝেই মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে দেশের মানুষ।

 

ঝুঁকি এড়াতে করণীয়:

১. অগভীর ও গভীর নলকূপ স্থাপনে নীতিমালা কঠোর ভাবে বাস্তবায়ন করা উচিত। সেচ কাজে অগভীর নলকূপের পানির ব্যবহার ধীরে ধীরে কমিয়ে এনে ভূপৃষ্ঠস্থ পানির ব্যবহারে উৎসাহিত করা। আর্সেনিক পরীক্ষা সহজলভ্য করা।

২. দখল হয়ে যাওয়া নদী খাল বিল উদ্ধার করে পুণঃখনন এবং দূষণ মুক্ত করে পানি সেচ কাজের উপযোগী করে তোলা। বিদ্যমান সেচ প্রকল্প গুলো আরও জোরদার করা।

৩. মৃত নদী ও খাল খনন করে কৃত্রিম জলাধার তৈরী মাধ্যমে সেচ কাজে ভূপৃষ্ঠস্থ পানির উৎস সহজলভ্য করা। প্রয়োজনে আন্তঃনদী সংযোগ খাল খনন করে খরাপ্রবণ ও উচু এলাকায় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা।

৪. বিএডিসির সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। প্রয়োজনে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে সেচ কাজে ব্যবহারে করা।

৫. গভীর নলকূপ স্থাপনে সরকারী ঋণ এবং ভর্তুকি সহজ করা। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক সহ সকল ব্যাংকে সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়ন করে, কঠোর নজরদারীর ব্যবস্থা করা।

৬. জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা তৈরীর লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারী গণমাধ্যমের সহয়তায় জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে পর্যায়ে প্রচারণার ব্যবস্থা করা। প্রয়োজনে প্রশাসন এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে প্রচার কার্যক্রম জোরদার করা।

৭. অভিন্ন আন্তর্জাতিক নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রাখতে উজানের দেশের সাথে কূটনৈতিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতের দারস্ত হওয়া। তিস্তা ও পদ্মা নদীর পানি প্রত্যাহারের ফলে শুষ্ক মৌসুমে সেচের পানির তীব্র সংকট তৈরী হয়। পদ্মার পানি চুক্তি বাস্তবায় ও তিস্তার পানি চুক্তির কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করা।

 

আর্সেনিক একটি ক্ষতিকর ভারী মৌল। দীর্ঘদিন গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় আর্সেনিক দূষিত পানি পান করলে বিভিন্ন চর্মরোগ সহ ক্যান্সার আক্রান্তের ঝুঁকি বেড়ে যায়। সারা বিশ্বেই সুপেয় পানির উৎসে আর্সেনিকের উপস্থিতি জটিল সমস্যা তৈরী করেছে। সচেতনতাই পারে এই বৈশ্বিক ঝুঁকি মোকাবেলা করতে। খাবার পানির নিরাপদ উৎসের পাশাপাশি সেচে কাজে ব্যবহৃত পানিও আর্সেনিক মুক্ত উৎস থেকে সরবরাহের ব্যবস্থা করা অতীব জরুরী।

 

লেখকঃ

কামরুল হক

বিএসসি এজি (সিকৃবি)
এমএস ইন হর্টিকালচার (রাবি)

শেয়ার করুন

ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop