৫:০৮ অপরাহ্ন

শনিবার, ২৭ এপ্রিল , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
  • হোম
  • কাচামালের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধিতে বেড়েছে ডিম ও মাংসের দাম
ads
প্রকাশ : সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২১ ৩:১৯ অপরাহ্ন
কাচামালের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধিতে বেড়েছে ডিম ও মাংসের দাম
পোলট্রি

সয়াবিনের ঘাটতি বাংলাদেশে লেগে আছে আগে থেকেই। তার উপরে প্রতিবেশি দেশের উদ্ভিজ্জ প্রোটিন সয়াবিনের ঘাটতি দেখা দেয়ার সে দেশের ব্যবসায়ীদের দাবি মেটাতে দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সয়াবিন মিল রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে।আর এই রপ্তানির কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় বাজারে সয়াবিনের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। দেশের পোলট্রি ও গবাদি পশুর খাদ্য প্রস্তুতকারী কারখানাগুলো আজ থেকে তাদের তৈরি খাবারের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। ক্রমাগত লোকসান শুরু হলে এই খাতের বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানিগুলো টিকে যাবে। কারণ তাদের লোকসান সহ্য করে টিকে থাকার মতো আর্থিক সংগতি রয়েছে যা দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর নেই। ফলে দুই লাখ কোটি টাকার বাজার বিদেশি কোম্পানির হাতে চলে যাবে। দেশীয় অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশীয় উদ্যোক্তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতে সয়াবিন রপ্তানির খবরে ইতো মধ্যে সয়াবিনের বাজারে যেন আগুন লেগে গেছে। রপ্তানির অনুমোদনের আগে দেশে প্রতি কেজি সয়াবিনের দাম ছিল ৪৩ টাকা। সেটি বেড়ে বর্তমানে ৫৩ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এতে কেজিপ্রতি শুধু পোলট্রি মুরগির খাবারের দাম বেড়েছে আড়াই টাকার বেশি। গত রবিবার থেকে বাড়তি দামে মুরগি, গবাদি পশু ও মাছের খাবার কিনতে হচ্ছে। যার ফলাফল হিসেবে এই সপ্তাহেই মুরগি, মাছ, মাংস ও দুধের দাম আরও বাড়বে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলসহ সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ভারতকে সুবিধা দিতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশের মুরগি, গবাদি পশু ও মৎস্য চাষে যুক্ত উদ্যোক্তরা। বাংলাদেশ প্রয়োজনের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ সয়াবিন উৎপাদন করে। বাকিটা ভারত, ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হয়। চলতি বছর ভারতে উৎপাদন কম হওয়ায় দেশটিতে সয়াবিনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। আগামী অক্টোবর মাসের আগে দেশটিতে সয়াবিন ক্ষেত থেকে উঠবে না। আর আমদানি করা হলেও সব মিলিয়ে ভারতে তা পৌঁছাতে সময় লাগবে কম করে হলেও ৬০ দিন। আর আমদানি করলেও সয়াবিনের কেজি পড়বে ৮৮ টাকা। সেখানে ৬০ টাকার নিচে বাংলাদেশ থেকে কিনতে পারবে ভারতের ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ সরকার মুরগি, মাছ ও পশু খাদ্যের জন্য বিদেশ থেকে আনা সয়াবিনের ওপর কোনো শুল্ক রাখেনি। বিনা শুল্কে বিদেশ থেকে সয়াবিন এনে তা ফের ভারতে বিক্রি করা হলে বড় আকারে শুল্কও ফাঁকি দেওয়া হবে বলেও জানান সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্যোক্তারা।

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ইমরান হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, ‘সয়াবিনের খইল ভারতে রপ্তানি হবে এমন খবরেই কেজি প্রতি ১০ টাকা দাম বেড়ে গেছে। আর এখন রপ্তানি শুরু হওয়ায় দাম আরও বাড়বে। তাতে বাংলাদেশে ফিড উৎপাদনে খরচ বাড়বে। কেজি প্রতি ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বাড়বে গরুর মাংসের দাম। মানুষকে বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে হবে গরুর মাংস। সেইসঙ্গে বাড়বে পোলট্রি মুরগি, ডিম, দুধ ও মাছের দাম। আমিষের ঘাটতি মেটানো দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।’

যে কারণে তৈরি খাদ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে
গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে কাঁচামালের দাম ৩৪ দশমিক ২২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফিড বানাতে অন্তত ১৬টি কাঁচামালের দরকার পড়ে। এর মধ্যে প্রতি কেজি মাছের (রাবিশ) গুঁড়ার দাম ৩২ টাকা, খুদ চালে ১২.১১ টাকা, ভুট্টায় ১২ টাকা, সয়াবিনের খইলে ১৬.২৫ টাকা ও সয়াবিন তেলের দাম লিটারে বেড়েছে ৫৫.৯০ পয়সা। ভারতে রপ্তানির ঘোষণায় প্রতি কেজি সয়াবিনের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। একটি ব্রয়লার মুরগি লালন-পালনের আয়ুষ্কাল হয় ৩৫ থেকে ৩৭ দিন। এ সময়কালে মুরগি প্রতি অন্তত ২.৫ – ৩ কেজি তৈরি খাবার দিতে হয়, সেখান থেকে পাওয়া যায় ১.৫ – ২ কেজি মাংস। এক কেজি খাবার বা ফিডে প্রায় ৩০ শতাংশ সয়াবিনের খইল বা সয়াবিন মিলের দরকার পড়ে। সেক্ষেত্রে প্রতি কেজি মাংস উৎপাদনে ৬.২৫ টাকা প্রকৃত উৎপাদন ব্যয় বাড়লে খুচরা পর্যায়ে তা আরও অনেক বেশি বাড়বে। এতে শুধু প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা নয়, অনেক ছোট ছোট ফিড মিল বন্ধ হয়ে যাবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশের ফিড মিলগুলোতে ব্যবহৃত কাঁচামালের অধিকাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। দেশীয় সয়াবিন ছাড়াও ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা প্রভৃতি দেশ থেকে আমদানি করা হয়। দেশে ‘সয়াবিন খইলের’ চাহিদা বছরে প্রায় ২০ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ৭৫-৮০ ভাগ দেশীয় সয়াবিন তেল উৎপাদকারী প্রতিষ্ঠান থেকে এবং বাকিটা আমদানি করা হয়। দেশে উৎপাদিত সয়াবিন খইলের একমাত্র ক্রেতা হচ্ছে পোলট্রি, মৎস ও গবাদি পশুর ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ খামারিরা।

ফিড সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তরা বলছেন, ডিম, মাছ, মুরগি উৎপাদনে মোট খরচের প্রায় ৭০-৭৫ শতাংশ খরচই হয় ফিড কেনা বাবদ। ফিডের দাম বৃদ্ধি পেলে খামারিদের উৎপাদন খরচ বাড়ে। আবার খরচের বিপরীতে পণ্যের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় বড় অংকের লোকসানের মুখে পড়তে হয় উদ্যেক্তাদের।

দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণের কথা বিবেচনায় নিয়ে সাশ্রয়ীমূল্যে সয়াবিন তেল উৎপাদন এবং পোলট্রি, মৎস্য ও গরুর খাদ্যের প্রধান উপাদান সয়াবিন মিলের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সরকার শূণ্য শুল্কে বা করমুক্ত সুবিধায় ‘সয়াবিন সিড’ আমদানির অনুমতি দিয়েছে। ‘সয়াবিন সিড’ থেকে সয়াবিন তেল বের করার পর অবশিষ্ট খৈল থেকে তৈরি হয় ‘সয়াবিন মিল’। দেশের মানুষের স্বার্থে শূন্য শুল্ক সুবিধায় আনা সেই সয়াবিন সিড থেকে উৎপাদিত সয়াবিন মিলই এখন ৩-৪টি সয়াবিন তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার স্বার্থে রপ্তানি করছে। অতীতে কখনো ভারতে সয়াবিন সিড কিংবা সয়াবিন মিল রপ্তানি হয়নি বরং ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সয়াবিন খইল আমদানি করা হয়ে থাকে।

বিশ্ববাজারে ও ভারতে সয়াবিন মিলের দাম বেড়ে যাওয়ায় পোলট্রি, ডেইরি ও মৎসশিল্প রক্ষা করতে এবং স্বল্পতম সময়ে বাংলাদেশ থেকে সয়াবিন মিল আমদানির জন্য আগ্রহ বেড়েছে ভারত ও নেপালের মতো দেশগুলোর ফিড প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর।

শেয়ার করুন

ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop