১২:০২ অপরাহ্ন

শনিবার, ২৭ এপ্রিল , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
  • হোম
  • ২৮ লাখের বেশি গবাদিপশু অবিক্রীত,হতাশ খামারিরা!
ads
প্রকাশ : জুলাই ২৫, ২০২১ ৩:০৮ অপরাহ্ন
২৮ লাখের বেশি গবাদিপশু অবিক্রীত,হতাশ খামারিরা!
প্রাণিসম্পদ

করোনায় ঈদুল আজহার কোরবানির পশুর বাজার নিয়ে শঙ্কা ছিল সবার। কিন্তু সেটি যে এত ব্যাপক মাত্রায় প্রভাব ফেলবে, তা অনুমান করা যায়নি। সরকারি হিসাবেই ২৮ লাখের বেশি গবাদিপশু অবিক্রীত রয়ে গেছে।

চলতি বছর ঈদুল আজহায় কোরবানি দেয়ার জন্য সারা দেশে প্রস্তুত করা হয়েছিল ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি গবাদিপশু। বিক্রি হয়েছে ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি গবাদিপশু। অনেকে লোকসান দিয়েও গবাদিপশু বিক্রি করেছেন শেষ সময়ে। অনেকে অবিক্রীত পশু ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন।

২০১৯ সালের ঈদুল আজহায় প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ পশু কোরবানি করা হয়েছিল। তার আগের বছর ২০১৮ সালে প্রায় ১ কোটি ৪ লাখ পশু কোরবানি দেয়া হয়। প্রতি বছর এ সংখ্যা বাড়ে। তবে এবারের পরিস্থিতি ব্যতিক্রম। বিপুলসংখ্যক পশু অবিক্রীত থাকায় লোকসানে পড়েছেন অনেক খামারি, ব্যবসায়ী ও কৃষক।

বছরজুড়ে যারা কোরবানির ঈদের দিকে তাকিয়ে থাকে সেসব পরিবার সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারে।

পশু উত্পাদন থেকে শুরু করে মাংস ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছানো পর্যন্ত আরো বিপুলসংখ্যক মানুষ যুক্ত। সংকুচিত শ্রমবাজারের বাস্তবতা সত্ত্বেও এ খাতে একটি উল্লেখযোগ্য অংশের মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। বড় বিষয় হলো, এ কর্মসংস্থান মূলত সমাজের প্রান্তিক ও গ্রামীণ পর্যায়ে হয়। বড় খামারি ছাড়াও গ্রামের অনেক দিনমজুর ও ক্ষুদ্র আয়ের মানুষ দু-একটি ছাগল বা গরু কিনে বাজার থেকে খইল, ভূসি এনে পশুদের খাইয়ে সারা বছর লালন-পালন করেন কোরবানির হাটে আকর্ষণীয় দামে বিক্রি করে মুনাফা লাভের আশায়।

আর এ উপার্জন দিয়েই তারা সারা বছর সন্তানের পড়াশোনা ও পারিবারিক খরচ চালান। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও খামারে কোরবানির ঈদ উপলক্ষে যারা গরু লালন-পালন করেছেন বা বিনিয়োগ করেছেন, তারা অনেক বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন বলে খবর আসছে। প্রতি বছর কোরবানির আগে পশু নিয়ে মুনাফার আশায় ঢাকার বিভিন্ন হাটে ছুটে যান ব্যবসায়ীরা। অনেক গরিব কৃষক বা চাষী তাদের সব মূলধন জোগান দেন কোরবানিতে একটু বাড়তি লাভের আশায়। এবার তাদের বড় অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

অবিক্রীত গবাদিপশু নিয়ে ক্ষুদ্র খামারিরা সংকটে পড়বেন। তাদের খাবার জোগাড় করা, ঋণের অর্থ পরিশোধ আবার পরিবার চালানো অনেকের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।

চলতি বছর অনলাইনে রেকর্ডসংখ্যক গবাদিপশু বিক্রি হয়েছে। তার পরও বিপুলসংখ্যক পশু অবিক্রীত থেকে যাওয়ার কারণ পর্যালোচনা প্রয়োজন। করোনার কারণে মানুষের আয় কমায় গবাদিপশু বিক্রি কমেছে নাকি আর্থিক সচ্ছলতা থাকা সত্ত্বেও করোনার জন্য অনেকে কোরবানি দেননি, সেটি বিশ্লেষণের দাবি রাখে। এতে পরবর্তী বছরের পরিকল্পনা প্রণয়ন সহজ হবে। গবাদিপশু বিক্রির হার কমতে থাকলে সরকারের নীতি কী হবে বা অবিক্রীত পশু বিক্রির জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে কিনা ইত্যাদি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রয়োজন।

অনলাইনে পশু বিক্রি আরো জনপ্রিয় করতে একে আরো সহজবোধ্য করে গড়ে তোলা প্রয়োজন, যাতে প্রান্তিক কৃষকও এটি ব্যবহার করতে পারেন। পার্শ্ববর্তী দেশ গরু রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় গবাদিপশু উত্পাদনে বাংলাদেশে ব্যাপক সাফল্য আসে। অনেকেই এ খাতকে আয়ের উত্স হিসেবে বেছে নিয়েছেন। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাবে গবাদিপশু বিক্রি কমে এলে খামারি ও দরিদ্র পরিবারগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের হালাল লাল মাংসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ কারণেই সীমিত আকারে হালাল লাল মাংস রফতানি হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। মধ্যপ্রাচ্যের সব কয়টি দেশের পাশাপাশি ব্রুনাইয়েও রফতানি হচ্ছে বাংলাদেশের এ লাল মাংস। বিপুলসংখ্যক পশু অবিক্রীত থাকার পরিপ্রেক্ষিতে মাংস রফতানি বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।

এতে খামারি ও কৃষক উভয়ই লাভবান হবেন। এ কথা সত্য, সরকার গবাদিপশু বিক্রির জন্য অনলাইন প্লাটফর্ম তৈরি ছাড়াও বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চালু করেছিল। এতে পশু আনা সুবিধাজনক হলেও চাহিদা না থাকায় অনেক পশু অবিক্রীত থেকে গেছে। এসব পশু বিক্রির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। কর্তৃপক্ষ চাইলে এ উদ্যোগ নিতে পারে। এক্ষেত্রে দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে।

অনেক খামারি ঋণ নিয়ে গরু লালন-পালন করেছেন। কোরবানিতে বিক্রি করে অর্থ পরিশোধ করবেন। তারাও গরু বিক্রি করতে না পেরে ঋণের অর্থ পরিশোধ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। খামার পরিচালনার দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতেই এখন তাদের বেগ পেতে হবে। শুধু খামারিরাই নন, এবার বড় ধরনের চাপে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও। যারা সারা দেশের বিভিন্ন খামার থেকে গরু কিনে ঢাকায় আনেন ব্যবসার উদ্দেশ্যে। কিন্তু তারাও এবার লাভের মুখ দেখতে পারেননি।

যারা গরু বিক্রি করতে পারেননি, উল্টো ঢাকায় এসে বাড়তি কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে, তাদের এখন গরু পালন করতেই হিমশিম খেতে হবে। কারণ আগের ব্যাংকঋণ পরিশোধ না করলে নতুন ঋণও পাওয়া যাবে না। অবিক্রীত গবাদিপশুর খাবার জোগান দেয়া অনেকের পক্ষে সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে ব্যাংকঋণের সুদ মওকুফ ও পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো যেতে পারে।

কোরবানির পশু অবিক্রীত থাকা এবং ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রেক্ষাপটে বিশেষ কিছু উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। অনেক দিন ধরেই গবাদিপশুর বীমা চালুকরণের কথা বলা হচ্ছে। পাইলটভিত্তিক কিছু উদ্যোগ নেয়া হলেও সেটি এখনো তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হয়নি। ঈদুল আজহায় গবাদিপশু বিক্রির উদ্দেশ্যে যারা খামার বা পশুপালন করেন, তাদেরও বীমার আওতায় আনা জরুরি। এতে ক্ষুদ্র এসব উদ্যোক্তার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা কমে আসবে।

বিশ্বের অনেক দেশেই কৃষি ও পশু বীমা খুবই জনপ্রিয়। এর মাধ্যমে কৃষকের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস পায়। বাংলাদেশেও এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা আবশ্যক। অর্থনীতির স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম অনুযায়ী বাজারে চাহিদার চেয়ে জোগান বেশি থাকলে দাম কমে যায়। চলতি বছরের অভিজ্ঞতা আমলে নিয়ে তাই বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জোগান নিশ্চিত করতে হবে। প্রতি বছরই গবাদিপশুর জোগান বাড়ছে। ধারণা করা যায় আগামী বছরও বাড়বে।

কিন্তু চাহিদার পতন যদি বজায় থাকে, তবে আগামীবারও খামারি ও ক্ষুদ্র কৃষকরা ব্যাপক মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। গবাদিপশু পালনে কৃষকদের মধ্যে যে উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে, সেটি ধরে রাখতে গবাদিপশুর বিকল্প বাজার তৈরি করতে হবে। নতুবা গবাদিপশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের সাফল্য ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।

একই সঙ্গে যেসব উদ্যোক্তা ও কৃষক বা খামারি বাজারের মন্দা ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আর্থিক সহায়তা বা প্রণোদনা প্রদানের পদক্ষেপ নিতে হবে। করোনার কারণে এমনিতেই তারা ব্যাপক মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, এখন পশু অবিক্রীত থাকায় ক্ষতির শঙ্কা আরো বাড়ছে। গবাদিপশুকে আরো এক বছর খাইয়ে আগামী বছর বিক্রির জন্য রাখাও লাভজনক হবে না বলে প্রতীয়মান হয়। এক্ষেত্রে অবিক্রীত পশু বিক্রি বা ব্যবহারে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ প্রত্যাশিত। সূত্র:বণিক বার্তা

শেয়ার করুন

ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop