১২:১০ অপরাহ্ন

শনিবার, ২৭ এপ্রিল , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
  • হোম
  • সেচ পরিবহন শ্রমিক সংকটে বিপন্ন সন্দ্বীপের কৃষি সম্ভাবনা
ads
প্রকাশ : জানুয়ারী ৪, ২০২২ ১২:৩৪ অপরাহ্ন
সেচ পরিবহন শ্রমিক সংকটে বিপন্ন সন্দ্বীপের কৃষি সম্ভাবনা
কৃষি বিভাগ

অনুন্নত যোগাযোগ কাঠামো, সেচ ও শ্রমিক সংকটের কারণে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার কৃষি এখন ধুঁকছে। বর্তমানে এখানকার স্থানীয় অধিবাসীরা কৃষিপণ্যের প্রয়োজনীয় সরবরাহের জন্য বাইরের অঞ্চলগুলোর ওপরই নির্ভরশীল। যদিও একসময় অঞ্চলটিকে ধরা হতো কৃষিতে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় হিসেবে।

কয়েক শতাব্দী ধরেই কৃষি, মত্স্য, লবণ বা জাহাজ নির্মাণ শিল্পের জন্য সুখ্যাতি অর্জন করেছে সন্দ্বীপ। এছাড়া এখানকার বাসিন্দাদের দক্ষ নাবিক হিসেবেও সুখ্যাতি রয়েছে। বর্তমানে এখানকার স্থানীয়দের বড় একটি অংশ প্রবাসী শ্রমিক হিসেবে বিদেশে কাজ করছেন।

চারদিকে সমুদ্রবেষ্টিত হওয়ায় উপজেলাটিতে বেড়িবাঁধের বাইরের কৃষিজমি লবণাক্ত। এসব জমিতে বছরে শুধু একবার প্রাকৃতিক সেচের ওপর নির্ভর করে কৃষকরা লবণাক্ততা সহনশীল জাতের ধান চাষ করেন। বছরের বাকি সময় অনাবাদি থাকে এসব জমি। বেড়িবাঁধের ভেতরের সিংহভাগ জমিতেও সেচ সংকটে বছরে একটির বেশি ফসল আবাদ করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। দু-তিন ফসলি জমি দেখা যায় শুধু বসতি এলাকার আশপাশে। ২০১৮ সালে এখানে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে। তবে তা সেচ ব্যবস্থাকে পুরোদমে চালু করার জন্য যথেষ্ট নয়। বর্তমানে চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোর মধ্যে সেচ ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে পিছিয়ে সন্দ্বীপ।  কৃষি শ্রমিকেরও তীব্র সংকট রয়েছে এখানে।

বর্তমানে এখানে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের মারাত্মক সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে। এসব পণ্যের চাহিদা মেটাতে স্থানীয়দের নির্ভর করতে হয় চট্টগ্রাম, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সরবরাহকৃত পণ্যের ওপর। এমনকি মাছ, ডিম, মুরগির জন্যও দেশের স্থল ভূখণ্ডের সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল সন্দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দারা। এতে তাদের এসব পণ্যের জন্য মূল্যও পরিশোধ করতে হয় অনেক বেশি। এছাড়া অনুন্নত যোগাযোগ কাঠামো হওয়ায় এখানে পরিবহন খরচও বেশি। বাড়তি এ ব্যয়ও স্থানীয় ভোক্তাদেরই বহন করতে হয়।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সন্দ্বীপের মোট ফসলি জমির পরিমাণ ৪২ হাজার ৭০০ হেক্টর। এর মধ্যে আবাদযোগ্য জমি ৬৫ শতাংশ বা ২৭ হাজার ৯০০ হেক্টর। যদিও এর মধ্যে আবাদ হয় ২৪ হাজার ৪০০ হেক্টর। নানা সংকটে বাকি সাড়ে তিন হাজার হেক্টর আবাদযোগ্য জমি পড়ে থাকে অনাবাদি অবস্থায়। আবাদযোগ্য জমির মধ্যে আবার ১১ হাজার হেক্টর এক ফসলি। লবণাক্ততা ও সেচ সংকটের কারণে এখানকার শস্য নিবিড়তা দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে অনেক কম।

এছাড়া রবিশস্য উৎপাদনেও দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে পিছিয়ে সন্দ্বীপ উপজেলা। ডিএইর তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর এখানে খাদ্য ঘাটতি থাকে গড়ে ৫৭ হাজার ৩০৫ টন।

জানতে চাইলে সন্দ্বীপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল বাসেত বলেন, সেচের পানির অভাব ও প্রবাসী অধ্যুষিত হওয়ায় এখানে কৃষি শ্রমিকের সংকট রয়েছে। আবার যারা রয়েছে, তাদের পেছনে কৃষকদের ব্যয়ও করতে হয় অনেক বেশি। ফলে সন্দ্বীপের কৃষি উন্নয়ন থমকে আছে। কৃষকদের মধ্যে আর্থিক সচ্ছলতা থাকা সত্ত্বেও রবি মৌসুমেও বিপুল পরিমাণ জমি অনাবাদি থেকে যায়। এ কারণে সন্দ্বীপে প্রধান খাদ্যশস্য চাল ছাড়া প্রায় সব কৃষিপণ্যই বাইরে থেকে আনতে হয়। এছাড়া উদ্যান ফসল উৎপাদনেও পিছিয়ে রয়েছে উপজেলাটি। তবে পরিকল্পিত সেচ সুবিধা বৃদ্ধি ও যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন করা গেলে সন্দ্বীপের কৃষিকে আবারো পুনরুজ্জীবন দেয়া সম্ভব।

সন্দ্বীপের কৃষক, শ্রমিক, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের দেয়া তথ্য বলছে, সমুদ্রতীরবর্তী উপজেলা হওয়ার কারণে সন্দ্বীপে সেচযোগ্য ও সুপেয় পানির উৎস খুবই সীমিত। ফলে আমন মৌসুম ছাড়া সন্দ্বীপে ধান আবাদ হয় না। সম্ভাবনাময় সন্দ্বীপ কৃষি অঞ্চলে এখন অকৃষি কর্মকাণ্ডই সম্প্রসারিত হচ্ছে বেশি। স্থানীয় কৃষি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করতে না পারলে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে এখানকার জীবনযাত্রার মান না বাড়লেও ব্যয় অনেকখানি বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আমিন মাসুম জানান, সন্দ্বীপের বিপুল পরিমাণ জমি অনাবাদি হিসেবে পড়ে থাকলেও কৃষিতে ব্যবহার হয় না। মান্ধাতা আমলের কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার, সেচ সমস্যা ছাড়াও শ্রমিক মজুরি বেশি হওয়ায় কৃষিতে লাভের চেয়ে লোকসানের পরিমাণ বেশি থাকে। তবে কয়েক বছর ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ আসায় সন্দ্বীপের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কৃষিভিত্তিক বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়ছে। তরুণদের একটি অংশ খামারভিত্তিক কৃষি, বিদ্যুৎ সুবিধা কাজে লাগিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে। সরকারি সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষিতে মনোযোগী হতে প্রচারণা চালালে সন্দ্বীপের কৃষির হারানো গৌরব ফিরে আসবে বলে আশা করা যায়।

শেয়ার করুন

ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop