৯:৪৬ অপরাহ্ন

রবিবার, ২২ ডিসেম্বর , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
  • হোম
  • কেঁচো সারে ঝুঁকছেন চাষিরা, বাড়ছে পতিত জমিতে চাষ
ads
প্রকাশ : ফেব্রুয়ারী ৪, ২০২৩ ৮:৪৭ অপরাহ্ন
কেঁচো সারে ঝুঁকছেন চাষিরা, বাড়ছে পতিত জমিতে চাষ
কৃষি গবেষনা

দিন দিন ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) তৈরির প্লান্ট বাড়ছে বাগেরহাটে। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতায় শহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ভার্মি কম্পোস্ট প্লান্ট স্থাপন করছেন চাষীরা।

এসব প্লান্টে উৎপাদন হচ্ছে বিপুল পরিমাণ কেঁচো সার। দাম কম এবং সহজলভ্য হওয়ায় কৃষকদের মাঝে কেঁচো সারের ব্যবহার বাড়ছে। কেঁচো সার দিয়ে পতিত জমিতে ফল ও সবজি চাষ শুরু করছেন প্রত্যন্ত এলাকার মানুষেরা। ফলে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমার পাশাপাশি নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন বাড়ছে ভোক্তা পর্যায়ে। পতিত জমিতে উৎপাদিত ফল ও সবজিতে পুষ্টি চাহিদা পূরণ হচ্ছে হত দরিদ্রদের। সরকারি সহযোগিতার মাধ্যমে ভার্মি কম্পোস্টের উৎপাদন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাটের ৯টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৯৪২টি ভার্মি কম্পোস্ট প্লান্ট রয়েছে। এসব প্লান্টে গত বছর (২০২২) ৪৭১ মে. টন কম্পোস্ট সার উৎপাদন হয়েছে। উৎপাদন বাড়াতে ৪ হাজার ৯৯০ জন কৃষককে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে কৃষি বিভাগ। ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করে ৩ হাজার ৮৮০ হেক্টর পতিত জমিতে সবজি চাষ শুরু করেছেন কৃষকরা। এর বাইরে আরও ৫ হাজার ১৭৪ হেক্টর আবাদযোগ্য জমি পতিত রয়েছে। এসব জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে চেষ্টা করছে কৃষি বিভাগ।

শুধু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নয়, ভার্মি কম্পোস্ট সম্প্রসারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অর্থায়নে পুষ্টি উন্নয়নে অংশগ্রহণমূলক সমন্বিত প্রকল্প (ক্রেন) নামের একটি প্রকল্প কাজ করছে। জেলার মোংলা, কচুয়া, মোল্লাহাট ও শরণখোলা উপজেলায় ৩০০ জন ভার্মি কম্পোস্ট উদ্যোক্তা তৈরি করা হয়েছে। এই ভার্মি কম্পোস্ট প্লান্টে উৎপাদিত সার বিক্রির জন্য রয়েছে আরও ১৫ জন কৃষি উদ্যোক্তা। তারা নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে কেচো সার বিক্রি করে থাকেন। ভার্মি কম্পোস্টে রাসায়নিক সারের ব্যবহার হ্রাস ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে অনেকের।

কচুয়ার সাংদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কৃষি শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক সাহাপাড়া এলাকার সুকদেব সাহা বলেন, কৃষি ডিপ্লোমা পড়া অবস্থায় সবজি ও ধান চাষ করতাম। রাসায়নিক সারের ক্ষতি সম্পর্কে জানলেও সহজলভ্য বিকল্প না থাকায় বাধ্য হয়ে ব্যবহার করতে হত। বছর খানেক হল, ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করি। আমার জমিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার প্রায় ৭০ শতাংশ কমেছে। সেই সঙ্গে ব্যয়ও কমেছে। কেঁচো সার ব্যবহার করা জমির সবজি ও খাদ্যশস্যের স্বাদও অনেক ভাল।

উপজেলা সদরের হাজীপাড়া এলাকার মিরাজুল শেখ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের ৫ কাঠা জমি ফেলানো (পতিত) ছিল। সারের দাম বেশি থাকায় চাষ করতাম না। কৃষি বিভাগের পরামর্শে ব্যবসার পাশাপাশি ভার্মি কম্পোস্ট দিয়ে চাষাবাদ শুরু করেছি। চার মাসে প্রায় ৫ হাজার টাকার লাল শাক, লাউ, মুলা ও পালন শাক বিক্রি করেছি। নিজেদের খাবার জন্য এখন তরকারি ক্রয় করা লাগে না।

ক্রেন প্রকল্পের কনসোর্টিয়াম ম্যানেজার কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ইমরানুল হক জানান, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে রাসায়নিক সারের ব্যবহার হ্রাস ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের জন্য ভার্মি কম্পোস্টের ব্যবহার সম্প্রসারণের চেষ্টা করেছি। চার উপজেলার ৩০০ জন উপকারভোগীকে ভার্মি কম্পোস্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি প্লান্ট স্থাপনের জন্য তিনটি করে ঋণ-স্লাপ ও আনুসঙ্গিক অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এসব উপকারভোগী নিজের ক্ষেতে কেচো সার ব্যবহারের পাশাপাশি বিক্রি করছেন। এই প্রক্রিয়া যাতে চলমান থাকে এ জন্য আমরা স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে ভার্মি কম্পোস্ট উদ্যোক্তাদের যোগাযোগ স্থাপন করিয়েছি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাগেরহাটের উপ-পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা বিভিন্নভাবে ভার্মি কম্পোস্ট সারের ব্যবহার বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। এই সার ব্যবহারের ফলে জেলায় পতিত জমি চাষাবাদ বেড়েছে। বর্তমানে আমাদের ১ হাজার ৩৬৪টি বাড়িতে পুষ্টি বাগান রয়েছে। যাদের বেশিরভাগ উপকারভোগী কেঁচো সার ব্যবহার করেন। এছাড়া যেসব চাষির গরু আছে তাদেরকে ভার্মি কম্পোস্ট প্লান্ট স্থাপনে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ভার্মি কম্পোস্ট প্লান্ট ও কেচো সারের ব্যবহার বাড়ছে বলে জানান জেলা কৃষি বিভাগের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

ভার্মি কম্পোস্ট তৈরির পদ্ধতি চ্যালেঞ্জঃ ভার্মি কম্পোস্ট তৈরির মূল কাঁচামাল হচ্ছে গোবর ও কেচো। গোবর ও কেচোর সঙ্গে লাগবে চাড়ি বা ঋণ ও সেলাপ। একটু ছায়াযুক্ত স্থানে স্লাপের ওপর ঋণ রাখতে হবে। ঋণের মধ্যে আধা শুকনা গোবর দিতে হবে এবং সেই গোবরের ওপরে কেচো ছেড়ে দিতে হবে। এরপর উপরে ছালা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। উপড়ে ছাউনি দিতে হবে। ১০ থেকে ২০ দিনের মধ্যে সেই গোবর ব্যবহার উপযোগী সার হয়ে যাবে। এই সারে কোনো গোবরের গন্ধ থাকবে না। শুধু গরুর গোবর নয়, হাঁস-মুরগির বিষ্টা, ছাগল-ভেড়ার মল এবং মহিষের গোবরও ভার্মি কম্পোস্ট তৈরিতে ব্যবহার করা যায়। সরাসরি বৃষ্টির পানি পড়লে এবং পিঁপড়া ঢুকলে কেঁচো মারা যাবে। সূর্যের আলো সরাসরি পড়লেও কেঁচো মারা যাবে। এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে।

শেয়ার করুন

ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop