১:২৩ অপরাহ্ন

শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
  • হোম
  • গর্বিত কৃষক উচ্চশিক্ষিত দেলোয়ার জাহান
ads
প্রকাশ : ডিসেম্বর ২৮, ২০২১ ৫:২৫ অপরাহ্ন
গর্বিত কৃষক উচ্চশিক্ষিত দেলোয়ার জাহান
কৃষি গবেষনা

মাটির মায়া ও ফসলের টান কৃষক, কৃষিবিদ ও গবেষক দেলোয়ার জাহানকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। এ দেশে পড়াশোনার মানেই যখন উচ্চবিলাসী স্বপ্ন, কর্পোরেট চাকরি, ব্যবসা, তখন দেলোয়ার জাহান দেশের একটি স্বনামধন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেও আন্তপ্রাণ কৃষক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন। গরিব কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে শোসন-বঞ্চনা থেকে পরিত্রাণের স্বপ্ন দেখেছেন। স্বপ্ন দেখেছেন, কীভাবে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়া শস্য উৎপাদন করা যায়, স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কীভাবে কৃষি উৎপাদনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা যায়। কৃষিবিদ দেলোয়ার জাহানের মেধা-মননজুড়ে শুধু পরিশুদ্ধ ফসলের ভাবনা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়াশোনা করেছেন দেলোয়ার জাহান। অনার্সে দ্বিতীয় এবং মাস্টার্সে যৌথভাবে প্রথম হয়েছিলেন তিনি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করেছেন এমফিল। এরপর সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে চাকরির সুযোগও পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেখানে না গিয়ে দেশে কীভাবে সার ও কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়া ফসল উৎপাদন করা যায়, সে বিষয়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন। নিজেও শুরু করেছেন স্বাস্থ্যসম্মত সবজি উৎপাদনের কাজ। সাংবাদিকতায় উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেও কৃষিকাজ কেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে দেলোয়ার জাহান জানান, আমি ছোটবেলা থেকেই একটা প্রাকৃতিক জীবনে ফিরতে চেয়েছি। কৃষকদের কৃষিকাজে বিভিন্ন সঙ্কট, দুর্বিপাক, ঝামেলা- এগুলো আমি ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি এবং এগুলোর মধ্যেই আমার বেড়ে ওঠা। কৃষিতে সাধারণত গরিব কৃষক যেভাবে বিভিন্ন কোম্পানি দ্বারা শোসনের শিকার হয়, সেগুলো থেকে রেহাই পেতে আমার সঙ্ঘবদ্ধ কাজ করতে চাওয়া। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীনই নিজেকে সেভাব গুছিয়েছি।

তিনি জানান, বাংলাদেশে ফসলের খেতে প্রতি মিনিটে ৭২ কেজি ‘বিষ’ ছেটানো হয়, যা মানব স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতিকর। এ জন্য বিকল্প পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক উপায়ে ফসলের চাষ শুরু করছেন তিনি ও তার সঙ্গীরা (সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ে দেলোয়ারের পরিচিত ছিলেন)। শুরুর দিকে ২০১৩ সালে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার আমতলি গ্রামে জমি লিজ নিয়ে গ্রীষ্মকালীন সবজি উৎপাদন শুরু করেন। উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত তিনি নিজে বাবার সঙ্গে কৃষিকাজে জড়িত ছিলেন৷ আর তার সঙ্গীদের পরিবারও কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত৷

দেলোয়ার আর তার সঙ্গীরা মিলে ‘প্রাকৃতিক কৃষি ও বিপণনকেন্দ্র’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন৷ এর মাধ্যমে কৃষকদের পরিবেশবান্ধব উপায়ে কৃষিকাজে উৎসাহিত করা হয়। দেলোয়ার বলেন, ‘আমার খামারের আশেপাশে কৃষকরা কীটনাশক প্রয়োগ করে কৃষিকাজ করেন। তবে তাদের মধ্যে কেউ কেউ আমার খামারে এসে সব দেখেশুনে প্রাকৃতিক উপায়ে কৃষিকাজে আগ্রহী হচ্ছেন৷’

এখন পর্যন্ত মানিকগঞ্জ, ঝিনাইদহ, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও নওগাঁ জেলার অনেক কৃষক এভাবে ফসল উৎপাদন করছেন৷ তাঁদের উৎপাদিত সবজি, ফল ঢাকায় বিক্রির জন্য মোহাম্মদপুরের সলিমুল্লাহ রোডে ‘প্রাকৃতিক কৃষি বিপণনকেন্দ্র’ চালু করা হয়েছে৷

তরুণদের মধ্যে কেউ যদি উচ্চশিক্ষার পর চাকরির পেছনে না ছুটে কৃষিকাজে জড়িত হতে চায়, তাহলে সেটি সম্ভব কি না, এই প্রশ্নের জবাবে দেলোয়ার জানান, তা সম্ভব এবং বাংলাদেশে এখন সেই পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ‘কেউ যদি সমন্বিত খামার করেন, যেখানে মাছ চাষ থাকবে, গরু থাকবে, দুধের জন্য ছাগল থাকবে, হাঁস থাকবে, সবজি থাকবে৷ আপনি যদি একটি সমন্বিত চাষ পদ্ধতিতে যান, সার্কেলটা যদি নিজে মেইনটেন করেন, মানে যে শাক আপনি বিক্রি করতে পারছেন না, সেটি আপনি গরুকে খাওয়াচ্ছেন, গরু থেকে যে গোবর পাচ্ছেন সেটি কেঁচোকে খাওয়াচ্ছেন, কেঁচো আপনাকে সার দিচ্ছে, সেই সার আপনি মাঠে দিয়ে দিচ্ছেন৷ মানে, পুরো সার্কেলটা যদি আপনি নিজে মেইনটেন করেন তাহলে যে কোনো ছেলেমেয়ের পক্ষে কৃষিকাজ করেই সম্ভব জীবিকা নির্বাহ সম্ভব’, বলেন দেলোয়ার৷

তবে তিনি বলেন, সমস্যা হচ্ছে তরুণরা মনে করে কৃষিকাজ মানে অচ্ছুতের কাজ৷ তাই এটি কেউ করতে চায় না৷ ‘কারণ চারপাশে এত রং, এত প্রত্যাশা জীবনে যে, কেউ আসলে কৃষিকাজ করতে চায় না৷ প্রচুর ছেলেমেয়ে আমাদের কাছে (প্রাকৃতিক কৃষির কাজ দেখতে) আসে৷ যে পরিমাণ আগ্রহ নিয়ে আসে তার দ্বিগুণ পরিমাণ আগ্রহ নিয়ে চলে যায়’, নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানালেন দেলোয়ার।

শেয়ার করুন

ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop