গাজর চাষে ভাগ্যবদল ১০ হাজার কৃষকের
এগ্রিবিজনেস
মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় এবার গাজরের বাম্পার ফলন হয়েছে। চাহিদা থাকায় ভালো দামও পাচ্ছেন কৃষকরা। ফলে গাজর চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের।
উপজেলার কিটিংচর, দেউলী, দশানী, ভাকুম, নয়াপাড়া, মেদুলিয়া, গাজিন্দা, লক্ষীপুর, নীলটেক, কানাইনগর, মোসলেমাবাদ, বিন্নাডাঙ্গী, আজিমপুর ও চর দুর্গাপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের প্রায় ৬ হাজারেরও বেশি কৃষক গাজর চাষের সঙ্গে জড়িত।
লাভজনক হওয়ায় নিজেদের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তনে ব্যাপক হারে গাজর চাষের দিকে ঝুঁকছেন এই অঞ্চলের কৃষকেরা।
কৃষি অফিস ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিংগাইর উপজেলায় গাজর চাষ শুরু হয় প্রায় দুই দশক আগে। প্রথম দিকে শুধুমাত্র জয়মন্টপ ইউনিয়নের দেউলী-দশানী ও ধল্লা ইউনিয়নের নয়াপাড়ায় স্বল্প পরিসরে এর চাষাবাদ শুরু হয়। সময়ের পরিক্রমায় গাজর চাষ এখন সমগ্র সিংগাইরে ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সীমিত আকারে রপ্তানিও হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সময়মতো বৃষ্টি হওয়ায় এবার ফলনও বেড়েছে। তবে সিংগাইরে গত বৃষ্টিতে ৫০ হেক্টরের মতো জমির গাজর নষ্ট হয়েছে। গত বছর প্রতি হেক্টরে গাজর উৎপাদন হয়েছিল ৩৫-৩৬ মে. টন। এবার উৎপাদন হয়েছে ৩৭-৩৮ মেট্রিক টন।
চাষি মো. সরিফুল ইসলাম ও মো. মেরেজ খান জানান, বীজের দাম অনেক বেশি। বাজারে কোথাও বীজ পাওয়া যায় না। গত বছর এক কেজি বীজের দাম নিয়েছিল ১২-১৩ হাজার টাকা। এবার নিয়েছে ১৫-১৮ হাজার টাকা। বীজের দাম কম হলে আমরা আরও বেশি লাভবান হতে পারতাম। গাজরের বীজের দাম কমানোর দাবি জানান তারা।
গাজরের ভরা মৌসুমে শ্রমিকের চাহিদাও বেড়েছে। শ্রমিকেরা জানান, প্রতি বছর এ সময় আমরা বেশি মজুরি পেয়ে থাকি। গাজর বপন, পরিচর্যা, উত্তোলন ও প্রক্রিয়াজাত করণের সঙ্গে জড়িত অনেক লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হচ্ছে। এখানকার গাজর ঢাকা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয়ে থাকে।
ব্যাপারী মো. মহর আলী বলেন, সিংগাইর ও ঈশ্বরদীতে সবচেয়ে বেশি গাজর চাষ হলেও সিংগাইরের গাজরের চাহিদা বেশি।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ১১’শ হেক্টর জমিতে গাছর চাষ হয়েছে। বিঘা প্রতি গড় উৎপাদন ২’শ মণের উপরে। এ উপজেলা থেকে বার্ষিক প্রায় ৫ কোটি টাকার গাজর বিক্রি হয়।
গাজর চাষ অধ্যুষিত জয়মন্টপ ইউনিয়নের দেউলি গ্রামের কৃষক ইদ্রিস ব্যাপারী, কুদ্দুস ব্যাপারী বলেন, ২৫/৩০ বছর ধরে গাজর চাষ করি। এবারও ১০ বিঘা জমিতে বুনেছি। বিঘাপ্রতি ৫’শ গ্রাম বীজ যার মূল্য ৮-৯ হাজার টাকা, সেই সঙ্গে জমি চাষ, সার, পরিচর্যা ব্যয় ও কীটনাশক মিলে প্রায় ২৫/৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। গড়ে বিক্রি ওঠে প্রায় আশি হাজার থেকে এক লাখ টাকা। মাত্র আড়াই থেকে তিন মাসে দ্বিগুণের বেশি লাভ।
রাজিব মোল্লা নামের আরেক তরুণ চাষি বলেন, চলতি বছর ১২ বিঘা জমিতে গাজর চাষ করেছি। ফলন হয়েছে ভালো। আগাম বাজারজাত করার জন্য ব্যাপারীরা সাড়ে ৭ লাখ টাকা দাম বলেছে। এ টাকায় বিক্রি করলেও খরচ বাদে আমার দ্বিগুণেরও বেশি লাভ হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ টিপু সুলতান স্বপন বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গাজরের বাম্পার ফলন হয়েছে। দামও অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার বেশি। বিগত সময়ে গাজর চাষ এ অঞ্চলের ১০ হাজারেরও বেশি কৃষকের আর্থিক উন্নয়নসহ ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে।
গাজর চাষে কৃষকদের সকল রকম সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।