৯:৪৫ অপরাহ্ন

রবিবার, ২২ ডিসেম্বর , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
  • হোম
  • জেব্রার মৃত্যু নাইট্রেট ব্যাকটেরিয়ায়
ads
প্রকাশ : ফেব্রুয়ারী ১, ২০২২ ১২:১০ অপরাহ্ন
জেব্রার মৃত্যু নাইট্রেট ব্যাকটেরিয়ায়
প্রাণ ও প্রকৃতি

গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ১১টি জেব্রা ও একটি বাঘের মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় চলছে। একসঙ্গে এত প্রাণীর মৃত্যুতে উদ্বিগ্ন সংশ্নিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারাও। এ নিয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় দফায় দফায় বৈঠক করছে। মাঠে কাজ করছে তদন্ত কমিটি। এমন উৎকণ্ঠার মাঝে জেব্রার খাবারের একটি নমুনায় মিলেছে বিষাক্ত রাসায়নিকের প্রমাণ। ফলে কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, সাফারি পার্কে আরও জেব্রার পাশাপাশি অন্য প্রাণীও মারা যেতে পারে।

১১টি জেব্রা মারা যাওয়ার পর আরও একটি খুঁড়িয়ে হাঁটছে। ক্রমশ নির্জীব হয়ে পড়ছে। তবে বাকি প্রাণীগুলোকে সুস্থ রাখতে বিশেষজ্ঞ দল তৎপর। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন করোনা আক্রান্ত হওয়ায় ঘটনাস্থলে যেতে পারছেন না। তবে তিনি বাসায় বসে সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করছেন। গতকাল সোমবার সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ভেটেরিনারি অফিসারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হবে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

খাবারের নমুনায় বিষাক্ত উপাদানের প্রমাণ: বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রকল্প কর্মকর্তা জাহিদুল কবির বলেন, জেব্রার পাশাপাশি আরও প্রাণী মারা যেতে পারে। আমরা বিষয়গুলো নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন এবং চিন্তিত। একটি নমুনা পরীক্ষায় ইনফ্লুয়েঞ্জা পাওয়া গেছে; বাকিগুলোর সবটাতেই আছে ব্যাকটেরিয়া।

এদিকে বাঘের মৃত্যুর কারণ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি পার্ক কর্তৃপক্ষ। বাঘটি অ্যানথ্রাক্স রোগে মারা গেছে বলে ধারণা করছে কর্তৃপক্ষ, যা ভয়ঙ্কর ছোঁয়াচে। কর্মকর্তারা বলছেন, বাঘটির নমুনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। যদি অ্যানথ্রাক্সেই বাঘটি মারা যায়, তাহলে আরও অনেক প্রাণী এ রোগে সংক্রমিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পার্ক কর্তৃপক্ষ।

জাহিদুল কবির বলেন, জেব্রার খাবারের একটি নমুনায় বিষাক্ত উপাদানের প্রমাণও মিলেছে। নমুনার মধ্যে একটিতে নাইট্রেট পাওয়া গেছে। এটি বিশেষ করে ঘাস জাতীয় খাবারের মধ্যে থাকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঠ থেকে সংগ্রহ করার সময় বিষাক্ত কিছু ঘাসও চলে আসতে পারে। এ ঘাস পরীক্ষা না করে খাওয়ানোর ফলে জেব্রার শরীরে বিষক্রিয়া ঘটতে পারে। ঘাস সংগ্রহের পর বিষাক্ত উদ্ভিদ কিংবা ঘাস আলাদা করা উচিত। এ ছাড়া অনেকেই গবাদি পশুকে খাওয়ানোর জন্য উন্নত জাতের ঘাসের চাষ করে থাকে এবং বিভিন্ন সময়ে ঘাসের ফলন বৃদ্ধি ও ঘাসের পাতাকে পিঁপড়া, পোকা-মাকড়ের হাত থেকে বাঁচাতে সার-কীটনাশক প্রয়োগ করে। এ থেকেও প্রাণীর শরীরে বিষক্রিয়া হতে পারে। খরার পর বৃষ্টিতে বেড়ে ওঠা তরতাজা ঘাসে মারাত্মক নাইট্রেট বিষ উৎপন্ন হয়, যা খাওয়ার ৩-৪ ঘণ্টা পর ক্রিয়া করে। ফলে প্রাণী মারা যায়। এসব ঘাস ভেজা অবস্থায় খাওয়ানোর কারণে জেব্রা মারা যেতে পারে। ভেজা ঘাস শুকানো ছাড়া খাওয়ানো উচিত নয়।

তবে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন অনুবিভাগ) সঞ্জয় কুমার ভৌমিক বলেন, মারা যাওয়া প্রাণীগুলোর নমুনা ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশের ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। সেখানে এখনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। ওই রিপোর্ট পাওয়ার পরই জানা যাবে প্রাণীগুলো মারা যাওয়ার প্রকৃত কারণ।

৯টি জেব্রারই মৃত্যু হয়েছে গত ২ থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে। সর্বশেষ গত শনিবার সন্ধ্যায় অসুস্থ হয়ে মারা যায় আরও দুটি। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে সব জেব্রার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করার পর তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নমুনা ঢাকার মান নিয়ন্ত্রণ গবেষণাগার ও ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া কিছু পরীক্ষার রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়ও। তবে বিশেষজ্ঞ দল আগেই বলেছিল, নিজেদের মধ্যে মারামারি করে চারটি জেব্রা মারা গেছে। আর বাকিগুলোর মৃত্যু হয়েছে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে।

বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগের প্রফেসর আবু হাদী নুর আলম খান বলেন, একই ঘাস সব ধরনের তৃণভোজী প্রাণী খাচ্ছে। অন্য কোনো প্রাণীর সমস্যা হচ্ছে না, শুধু জেব্রারই হচ্ছে। এ জন্য আপাতত অবজারভেশনের জন্য এক সপ্তাহ বা ১০ দিন ঘাস পরিবর্তন করে অন্য জায়গার ঘাস দেওয়া হবে। সব প্রাণীর পাকস্থলীর ক্ষমতা বা হজম ক্রিয়া এক রকম না।

সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ ২ জন প্রত্যাহার : গতকাল সোমবার সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান এবং ভেটেরিনারি অফিসার ডা. হাতেম সাজ্জাদ মো. জুলকারনাইনকে প্রত্যাহার করে বন অধিদপ্তর, ঢাকায় সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক মো. জাহিদুল কবিরকে প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তদন্ত কমিটির নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে দায়িত্বরতদের প্রত্যাহার ও বদলির পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তাদের স্থলে যথাক্রমে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে ফরিদপুর সামাজিক বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম এবং কক্সবাজারের ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানকে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু প্রতিরোধে সংশ্নিষ্ট সবাইকে প্রত্যাহার করা, দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।

৩ হাজার দর্শনার্থীর জায়গায় ২৭৬ জন :গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, সাফারি পার্কের টিকিট কাউন্টারে ভিড় নেই। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুখে আতঙ্কের ছাপ। বিষণ্ণতায় যেন ছেয়ে আছে পুরো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। গতকাল সোমবার দুপুরের দৃশ্য এটি। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে পাল্টে গেছে চেনা দৃশ্যপট। ইজারাদার শাওন এন্টারপ্রাইজের টিকিট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা মাসুদ রানা জানান, সারাদিনে ২৭৬ জন দর্শনার্থী কোর সাফারিতে প্রবেশ করেছেন। অথচ গত শুক্রবার টিকিট বিক্রি হয়েছিল প্রায় ৩ হাজার।

শেয়ার করুন

ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop