১০:৪০ অপরাহ্ন

রবিবার, ২২ ডিসেম্বর , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
  • হোম
  • দেশে বিলুপ্তপ্রায় রানী মাছের পোনা উৎপাদন
ads
প্রকাশ : জুন ২২, ২০২১ ১২:৪৬ অপরাহ্ন
দেশে বিলুপ্তপ্রায় রানী মাছের পোনা উৎপাদন
মৎস্য

বউ মাছ, বেটি মাছ, পুতুল মাছ, বেতাঙ্গী মাছ প্রভৃতি আঞ্চলিক নামে পরিচিত ‘রানী মাছ’। অনেকেই আবার ‘গাঙ্গ রানী’ বলেও ডাকে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) এ মাছটিকে ‘বিপন্ন’ তালিকাভুক্ত করেছে। তবে, দেশে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া রানী মাছের প্রজনন ও পোনা উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে।

আইইউসিএন বাংলাদেশের (২০১৫) হিসাব মতে দেশের ২৬০ প্রজাতির মিঠাপানির মাছের মধ্যে ৬৪ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তপ্রায়। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ইতোমধ্যে পাবদা, গুলশা, টেংরা, বাটা, ফলি, মহাশোল, খলিশা, বৈরালী, ঢেলা, বাতাসি, পিয়ালীসহ ২৯ প্রজাতির মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ কৌশল উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে। এবার রানী মাছের পোনা উৎপাদন ইনস্টিটিউটের আরেকটি সাফল্য।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান, বিপন্নেরতালিকায় দেশীয় প্রজাতির সব মাছকে পর্যায়ক্রমে পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্যে ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। চলতি বছরে ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা ১০টি বিপন্ন প্রজাতির মাছের প্রজনন কৌশল উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা শুরু করেন। এ পর্যন্ত চলতি প্রজনন মৌসুমে ঢেলা, বাতাসি, পিয়ালী ও রানী মাছসহ সাতটি প্রজাতির মাছের প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন করতে তারা সক্ষম হন। গবেষণার সর্বশেষ সাফল্য হলো রানী মাছের পোনা উৎপাদন। গবেষক দলে ছিলেন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সেলিনা ইয়াছমিন, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো: রবিউল আওয়াল, পরিচালক ড. এ এইচ এম কোহিনুর ও স্বাদুপানি কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো: শাহা আলী।

জানা যায়, অক্টোবরের শেষ থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত যখন বিলের পানি কমে যেতে থাকে তখন রানী মাছ জালে ধরা পড়ে বেশি। এ মাছ খাল-বিল, নদী-নালা, হাওর-বাঁওড় ইত্যাদির তলদেশে পরিষ্কার পানিতে বসবাস করতে পছন্দ করে। বউ মাছ প্রায় সব ধরনের স্বাদুপানির জলাশয় যেমন, খাল-বিল, নদী-নালা, হাওর-বাঁওড় জলাভূমির তলদেশে পরিষ্কার পানিতে বসবাস করতে পছন্দ করে। তবে কখনো কখনো ঘোলা পানিতেও এদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এক সময় বাংলাদেশের খাল-বিল, নদ-নদী, হাওর-বাঁওড় ও প্লাবনভূমিতে এই মাছ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলাশয় সঙ্কোচন, পানি দূষণ, মাছ ধরার ধ্বংসাত্মক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে যত্রতত্র মাছ আহরণ, মা-মাছ ধরা, জলাশয়ের মধ্যে রাস্তা-ঘাট, বসতবাড়ি নির্মাণসহ অতি আহরণের ফলে মাছটির বিচরণ ও প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস হওয়ায় এ মাছটির প্রাপ্যতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এই মাছ ভারত, ভুটান, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে পাওয়া যায়।

বাংলাদেশে ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের রক্ষিত বন্যপ্রাণীর তালিকার তফসিল-২ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহের স্বাদুপানি কেন্দ্রে ২০২০ সালে রানী মাছের সংরক্ষণ, প্রজনন ও পোনা উৎপাদন বিষয়ে গবেষণা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। গবেষণার আওতায় চলতি জুন মাসে দেশে প্রথমবারের মতো রানী মাছের (ইড়ঃরধ ফধৎরড়) প্রজনন ও পোনা উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবন করা হয়েছে।

ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ আরো জানান, দেশের চলনবিল ছাড়াও রাজশাহী, দিনাজপুর, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, ফরিদপুর, পার্বত্য চট্টগ্রামের জলাশয়ে, বিশেষ করে নদীতে রানী মাছের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। শৌখিনরা রানী মাছ অ্যাকুয়ারিয়ামে পালন করে। বাণিজ্যিকভাবেও অ্যাকুয়ারিয়ামে রানী মাছ পালন করা যেতে পারে। স্ত্রী রানী মাছের চোখের ঠিক সামনে একটি কাটা থাকে যেটি দিয়ে তারা আত্মরক্ষা করে থাকে। এছাড়া এই মাছের মুখে চার জোড়া ছোট বার্বেল থাকে। একটি পূর্ণ বয়স্ক ও প্রজননক্ষম রানী মাছ সাধারণত ৮-১০ গ্রাম ওজনের হয়। পুরুষ মাছের তুলনায় স্ত্রী রানী মাছ আকারে বড় হয়। এ মাছ প্রধানত প্লাঙ্কটন ও পোকামাকড় খায়। গবেষণায় দেখা গেছে, রানী মাছ মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রজনন করে থাকে।

জুন-জুলাই এদের সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুম। একটি পরিপক্ব স্ত্রী মাছে প্রতিগ্রামে ৮০০-৯০০টি ডিম পাওয়া যায়। এ মাছের ডিম্বাশয় এপ্রিল মাস থেকে পরিপক্ব হতে শুরু করে। পরিপক্ব স্ত্রী মাছের জননেন্দ্রিয় গোলাকার ও হালকা লালচে রঙের হয় কিন্তু পুরুষ মাছের জননেন্দ্রিয় পেটের সাথে মেশানো, কিছুটা লম্বাটে ও ছোট হয়। প্রজননের জন্য রানী মাছ যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ও কংশনদী এবং নেত্রকোনার হাওর থেকে ২০২০ সালে সংগ্রহ করা হয় এবং গবেষণাকেন্দ্রের পুকুরে প্রতিপালন করা হয়।

কৃত্রিম প্রজননের জন্য পুকুর থেকে পরিপক্ব স্ত্রী ও পুরুষ মাছ নির্বাচন করে কৃত্রিম প্রজননের ৫-৬ ঘণ্টা পূর্বে স্ত্রী ও পুরুষ মাছকে হ্যাচারিতে হরমোন ইনজেকশন দেয়া হয়। ইনজেকশন দেয়ার ১০-১২ ঘণ্টা পরে স্ত্রী মাছ ডিম দেয়। ডিম দেয়ার ২২-২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিষিক্ত ডিম হতে রেণু বের হয়ে আসে। পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে, ডিম নিষিক্ত ও ফোটার হার যথাক্রমে ৭৫ শতাংশ ও ৫০ শতাংশ। রেণুর ডিম্বথলি ২-৩ দিনের মধ্যে নিঃশেষিত হওয়ার পর প্রতিদিন ৩-৪ বার সিদ্ধ ডিমের কুসুম খাবার হিসেবে হাঁপায় সরবরাহ করা হয়। হাঁপাতে রেণু পোনা ৬-৭ দিন রাখার পর নার্সারি পুকুরে স্থানান্তরের উপযোগী হয়।

শেয়ার করুন

ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop