প্রোটিন বিষয়ে জনসচেতনা বাড়াতে গণমাধ্যমের গুরুত্ব অপরিসীম
পোলট্রি
সুস্থ-সবল জাতি ও বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ গঠনের স্বার্থে প্রাণিজ আমিষ সম্পর্কিত জনসচেতনা বাড়াতে হবে এবং সেক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন “রাইট টু প্রোটিন এন্ড রোল অব মিডিয়া” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের অংশগ্রহণকারিবৃন্দ।
আজ মঙ্গলবার(৩০ সেপ্টেম্বর) ঢাকার একটি হোটেলে এ বৈঠকের আয়োজন করে পোল্ট্রি শিল্পের কেন্দ্রিয় সংগঠন ‘বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল’ (বিপিআইসিসি)। সহযোগিতায় ছিল ইউ.এস সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিল (ইউএসএসইসি)।
সঞ্চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন দৈনিক আজকের পত্রিকার সম্পাদক, সাবেক তথ্য কমিশনার প্রফেসর ড. মো. গোলাম রহমান। বৈঠকে অংশগ্রহণকারি মিডিয়া গেইটকীপারগণ বলেন, ইন্ডাষ্ট্রির সাথে মিডিয়ার সম্পর্ক বাড়াতে হবে এবং প্রয়োজনীয় তথ্যের প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ড. খালেদা ইসলাম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, পোল্ট্রি ডিম ও ব্রয়লার মাংস নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি রয়েছে যেগুলো দূর করা প্রয়োজন কারন ডিম কিংবা মাংসের কনজাম্পশন বাড়ানো পথে এটি একটি বড় অন্তরায়। তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যেকের প্রতি কিলোগ্রাম বডি ওয়েটের জন্য এক গ্রাম পরিমান প্রোটিন খাওয়া দরকার। প্রোটিন ঘাটতির কারণে সদ্য ভ‚মিষ্ট শিশু থেকে শুরু করে বয়স্করা নানাবিধ শারিরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। প্রফেসর খালেদা বলেন, আমাদের দেশে এক বছরের কম বয়সী শিশুদের মাঝে মৃত্যুর হার অধিক হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে প্রোটিন ঘাটতি। বয়ঃসন্ধিকালীন তরুণ-তরুণী ও গর্ভবতী মহিলাদের অবশ্যই প্রোটিন গ্রহণের পরিমান বাড়াতে হবে বলেও মন্তব্য করেন ড. খালেদা।
ডিবিসি নিউজের সম্পাদক প্রণব সাহা বলেন, পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিকে নিয়ে অনেক প্রোপাগান্ডা হয়েছে। যমুনা টিভির একজন প্রতিবেদক, পোল্ট্রি শিল্পে ট্যানারির বর্জ্য বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রফেসরের করা উদ্দেশ্যমূলক গবেষণার অসাড়তা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। এজন্য ঐ প্রতিবেদক কে ধন্যবাদ জানান তিনি। প্রণব সাহা বলেন, কিছুকাল আগেও ডাক্তাররা ডিম সম্পর্কে রোগীদের ভ‚ল তথ্য দিয়েছেন। এখন অবশ্য বলা হচ্ছে হার্টের রোগীরাও ডিম খেতে পারবেন, কুসুমসহ ডিম খাওয়া উচিত, দিনে দুটি ডিম খেলেও সমস্যা নেই। ডিম, দুধ, মাংসের উৎপাদন সম্পর্কে সরকারি সংস্থাগুলোর দেয়া তথ্যের সাথে বাস্তবতার অমিল রয়েছে বলেও মনে করেন প্রণব।
যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি দিনে দুটি করে ডিম খেয়েছেন। তিনি বলেন, শহরে প্রোটিন বিষয়ে সচেতনতা বাড়ছে তবে গ্রামাঞ্চলে এ বিষয়ক সচেতনতা বাড়াতে কাজ করা উচিত।
দীপ্ত টিভি’র হেড অব নিউজ ইব্রাহিম আজাদ, ব্রয়লার মুরগির স্বাদ আরও বাড়াতে গবেষণামূলক কাজ করার পরামর্শ দেন। টিভি টুডের এডিটর ইন চীফ মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, আমাদের দেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন সময় সাপেক্ষ একটি কাজ। এজন্য পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিকে সিরিয়াসলি কাজ করতে হবে।
গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, দি ডেইলি সান সম্পাদক এনামুল হক চৌধুরি; দৈনিক প্রথম আলো’র সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম মুকুল, চ্যানেল-২৪ এর নির্বাহী পরিচালক তালাত মামুন, ইনডিপেন্ডেন্ট টিভির চীফ নিউজ এডিটর আশিষ সৈকত ও সহযোগী সম্পাদক শামীম জাহেদী, দি বিজনেস পোস্ট এর নির্বাহী সম্পাদক নাজমুল আহসান, দেশ রূপান্তরের যুগ্ম-সম্পাদক জনাব গাজী নাসিরুদ্দীন, দৈনিক কালেরকন্ঠের বার্তা সম্পাদক খায়রুল বাশার শামীম, দৈনিক সমকালের বিজনেস এডিটর জাকির হোসেন, দৈনিক ইত্তেফাকের বিজনেস এডিটর জামাল উদ্দীন, বণিক বার্তা’র ডেপুটি সিটি এডিটর সাহানোয়ার সাইদ শাহীন, জনকন্ঠের চীফ রিপোর্টার কাওসার রহমান, দৈনিক সংবাদের চীফ রিপোর্টার সালাম জুবায়ের, দি ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের চীফ রিপোর্টার এস.এম জাহাঙ্গীর, এসএ টিভি’র বিজনেস এডিটর সালাহউদ্দিন বাবলু, যমুনা টিভির বিজনেস এডিটর সাজ্জাদ আলম খান তপু, প্রমুখ।
মিডিয়া গেইটকীপারগণ বলেন, দেশের মানুষকে সাশ্রয়ী মূল্যে ডিম, দুধ, মাংস দিতে হবে। যেহেতু এই শিল্পটি বহু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে এবং গ্রামীন নারীর ক্ষমতায়নে বড় ভ‚মিকা রেখেছে তাই সরকারের উচিত এ শিল্পকে সহায়তা প্রদান করা।
বিপিআইসিসি সভাপতি মসিউর রহমান জানান, করোনা মহামারির প্রভাবে ডিম ও মুরগির উৎপাদন কমেছে এবং কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির কারনে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। ফিড ইন্ডাষ্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের (ফিআব) সভাপতি এহতেশাম বি. শাহজাহান বলেন- পোল্ট্রি, ডেইরি ও মৎস্যখাত এদেশে নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছে। দেশের মানুষের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি মাছ, মাংস ও ফিড এখন রপ্তানি হচ্ছে। ফিআব সাধারন সম্পাদক বলেন, আমাদের দেশে ফিড তৈরির কাঁচামালের সংকট রয়েছে। অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। তাই কাঁচামাল রপ্তানি করা বোকামি। আমাদের কে ভ্যালু অ্যাডেড প্রোডাক্ট রপ্তানির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। তাঁর মতে, আগামী ২-৩ মাস পর ভারতের আর বাংলাদেশ থেকে সয়াবিন মিল আমদানির প্রয়োজন পড়বে না; উল্টো তারা রপ্তানি করবে। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সয়াবিন মিল রপ্তানির সিদ্ধানের কারনে একদিকে যেমন দেশীয় পোল্ট্রি ও ফিড ইন্ডাষ্ট্রির বড় ধরনের ক্ষতি সাধিত হলো অন্যদিকে দেশীয় সয়াবিন মিল উৎপাদকারি প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিল। এটা প্রত্যাশিত নয়।