অবমুক্তির অপেক্ষায় ১২টি বিরল প্রজাতির শকুন
প্রাণ ও প্রকৃতি
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ সিংড়া জাতীয় উদ্যানের পরিচর্যা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে রয়েছে বিরল প্রজাতির ১২টি শকুন। একসময় পুরোপুরি সুস্থ হলে এসব উদ্ধারকৃত শকুনকে রক্ষা ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় সুস্থ করে প্রতি বছরের মার্চ-এপ্রিলের দিকে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা হবে। বীরগঞ্জ সিংড়া জাতীয় উদ্যানের বনবীট কর্মকর্তা হরিপদ দেবনাথ এ তথ্য জানিয়েছেন।
প্রশস্থ ডানার ওপর ভর করে শকুন আকাশের অনেক ওপরে ওড়ে।
এদের মাথা, গলা বা ঘাড়ে পালক নেই। এদের প্রবল ডানা ঝাপটানো আর সমস্বর বিকট শব্দে মানুষজন বুঝতে পারে শকুন এসেছে। কিন্তু এখন আর সেই চিরচেনা শকুনের দেখা পাওয়া যায় না। বট, পাকুড় কিংবা অশ্বত্থের মতো বড় বড় গাছে সাধারণত লোকচক্ষুর অন্তরালে শকুন বাসা বাঁধে।
এরা সাধারণত গুহায়, গাছের কোটরে বা পর্বতের চূড়ায় ১-৩টি ডিম পাড়ে। বিভিন্ন প্রাণীর মৃতদেহ শকুনের দল মুহূর্তেই খেয়ে সাবাড় করে ফেলে। ফলে পচন ধরা গলিত মৃতদেহগুলো থেকে সংক্রামক রোগ ছড়াতে পারে না। নিঃসন্দেহে এরা মানবসমাজের জন্য উপকারী পাখি।
বীরগঞ্জের সিংড়া জাতীয় উদ্যানে পরিচর্যা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ১২ শকুনের জন্য গড়ে প্রতিদিন বয়লার মুরগি দেয়া হয়। এছাড়াও স্যালাইন,পানি ওষুধ দেয়া হয় বলে জানায় শকুনের দেখভালের তদারককারী বেলাল হোসেন। প্রতিটি শকুনকে খাদ্য হিসেবে দু’দিন পর পর দেয়া হয় আধা কেজি বয়লার মুরগী।
বীরগঞ্জ সিংড়া জাতীয় উদ্যানের বনবীট কর্মকর্তা হরিপদ দেবনাথ জানান, হিমালয় এবং ভুটানে শীতের প্রকোপ বাড়লে দল বেঁধে শকুনগুলো আসে এবং বড় বড় গাছে আশ্রয় নেয়। বিলুপ্ত প্রায় এই শকুন বিশেষ করে শীতের সময় অন্য এলাকা থেকে দিনাজপুরসহ এ অঞ্চলে অসুস্থ বা খাদ্যাভাবে ক্লান্ত অবস্থায় আসে।
ঠিকমত উড়তে না পারায় সেসব শকুনকে উদ্ধার করে দিনাজপুরের বীরগঞ্জের সিংড়া জাতীয় উদ্যানে পরিচর্যা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে আনা হয়। একসময় পুরোপুরি সুস্থ হলে সেটিকে প্রকৃতিতে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রতি বছরের মার্চ-এপ্রিলের দিকে এসব শকুনকে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করে দেয়া হয়। বর্তমানে এখানে এধরনের ১২টি শকুন রয়েছে।
উল্লেখ্য,এ অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় আহত অবস্থায় শকুন উদ্ধার করে বীরগঞ্জ সিংড়া জাতীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করা হয়। গত বছরের এপ্রিলে ২০টি শকুন সুস্থ অবস্থায় প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।
হিমালয়ের পাদদেশে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলার অবস্থানের কারণে এই এলাকায় এখনো কিছু শকুন দেখা যায়। অনেক সময় এগুলো অতিথি হয়ে আসে। তবে মানুষ যদি সচেতন হয় এবং শকুন উদ্ধার করে অথবা বনবিভাগকে সংবাদ দেয়, তাহলে উদ্ধার করে পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিচর্যার মাধ্যমে তাদের বিলুপ্তি থেকে রক্ষা করা সম্ভব। বীরগঞ্জ সিংড়া জাতীয় উদ্যানে গত ৫ বছর ধরে দেশে বিলুপ্ত ও বিপন্ন প্রায় শকুনকে বাচাঁতে আইইউসিএন বাংলাদেশ ও বন বিভাগ যৌথ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।