আজ বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস
প্রাণিসম্পদ
বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবসে সারা বিশ্বের প্রাণী সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের জন্য বিশেষ একটি দিন। প্রতি বছর এপ্রিলের শেষ শনিবার সারাবিশ্বে যথাযথ মর্যাদায় দিনটি পালিত হয়। সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, বিনামূল্যে প্রাণীর চিকিৎসা ও পরামর্শ প্রদান, টিকাদান কর্মসূচির মতো আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্বের প্রতিটি দেশ পালন করে বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়- “Veterinarian response to the COVID-19 crisis.”
ভেটেরিনারিয়ানরা কেবল প্রাণীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অবদান রাখছে তা নয়, তারা কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অশ্রান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছে।মহামারিতে বিশ্বে ভেটেরিনারিয়ানদের বীরত্বগাথা রচিত হয়েছে। ফাইজারের কোভিড ভ্যাক্সিন আবিষ্কার টিমের প্রধান ড. আলবার্ট বোরলা একজন ভেটেরিনারিয়ান। পিপিই নিরাপদে পুনঃব্যবহারের কৌশলের আবিষ্কারক এফ. হ্যাঙ্কেনসনও ভেটেরিনারিয়ান।
বিজন কুমার শীল একজন আন্তর্জাতিক মানের বাংলাদেশি ভাইরোলজিস্ট, ভ্যাকসিনোলজিস্ট এবং ভেটেরিনারিয়ান বিজ্ঞানী। এর আগে সিঙ্গাপুরে দীর্ঘদিন অবস্থান করা এই ভেটেরিনারি বিজ্ঞানী সেখানে সার্স করোনা ভাইরাস-১ এবং ডেঙ্গু ভাইরাসের র্যাপিড টেস্ট কিট উদ্ভাবন করেও অনেক আলোচিত হয়েছিলেন।
২০০১ সালে বিশ্ব ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশন ভেটেরিনারি পেশার সঙ্গে কর্মরত সকল ভেটেরিনারিয়ানদের জন্য একটি বিশেষ দিন আয়োজনের প্রস্তাব করে। যেটা নির্ধারিত হয় প্রতি বছরের এপ্রিল মাসের শেষ শনিবার। দিবসটির মূল লক্ষ্য ভেটেরিনারি পেশাকে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। প্রাণী, পরিবেশ ও মানুষের উন্নয়নে কাজ করা, খাদ্য নিরাপত্তা এবং প্রাণী পরিবহন ও কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতকরণে ভূমিকা রাখা।
বাংলাদেশে ২০০৮ সালে প্রথম দি ভেট এক্সিকিউটিভ আয়োজন করে বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবসটি। বর্তমানে বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন (বিভিএ), দি ভেট এক্সিকিউটিভ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি ছাত্র সমিতি যৌথভাবে দিনটি নানা আয়োজনের সঙ্গে উদযাপন করে থাকে।
একটি দেশের পুষ্টি বিশেষ করে প্রোটিন, আমিষের চাহিদার ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন এই ভেটেরিনারিয়ানরা।দেশের মোট প্রাণিজ আমিষের ৭৬ শতাংশ আসে ডিম, দুধ ও মাংস থেকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, ইউনিসেফ, রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ও চিকিৎসকরা করোনা থেকে সুরক্ষা পেতে বেশি করে দুধ, ডিম, মাংস খাওয়ার পরামর্শ দেন। যেগুলোর উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে ভেটেরিনারিয়ানরা। গত দশ বছরে দেশে ডিম উৎপাদন বেড়েছে চারগুণ, দুধ উৎপাদন বেড়েছে প্রায় পাঁচগুণ, মাংস উৎপাদন বেড়েছে প্রায় আটগুণ।
উল্লেখ্য, ১৯৫৯ সালে স্পেনের মাদ্রিদে বিশ্ব ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হয়। জনস্বাস্থ্যের দিক বিবেচনায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, হিউম্যান মেডিকেল সায়েন্স ও ভেটেরিনারি মেডিকেল সায়েন্সকে একীভূত করে ওয়ান হেলথ ইস্যুতে কাজ করছে। উন্নত দেশে ভেটেরিনারি ডাক্তার ও হিউম্যান মেডিকেল ডাক্তাররা এক হয়ে কাজ করে যাচ্ছে এই সংকট মোকাবিলায়। কিন্তু অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ভেটেরিনারি ডাক্তার ও মেডিকেল ডাক্তারদের সমন্বয় তেমন নেই বললেই চলে। উভয়েই সমন্বয় সাধন করে কাজ করলেই হতে পারে প্রাণিসম্পদ তথা মানবসম্পদের কল্যাণ।