আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তনে প্রাণিরোগে সংক্রমিত হচ্ছে মানুষ
কৃষি গবেষনা
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কোথাও বরফ গলছে, আবার ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে আবহাওয়া ও জলবায়ুর তারতম্য বাড়ছে রোগব্যাধি।আমাদের শরীরে যেসব রোগব্যাধি দেখা দিচ্ছে তার অধিকাংশই আসছে প্রাণিদেহ থেকে। এমনটাই জানিয়েছেন মৎস্য, ডেইরি ও পোলট্রি সেক্টর সংশ্লিষ্ট প্রাণী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
প্রাণি সম্পদ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক ডা. মোসাদ্দেক হোসাইন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের চাহিদা পূরণে বাড়ছে (মৎস্য, ডেইরি ও পোলট্রি) বাণিজ্যিক খামার। তবে এসব খামারের বায়োসিকিউরিটি নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে খামার। এসব রোগ প্রতিরোধের জন্য যেসব ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে বা ব্যবহার করা হচ্ছে, তারও প্রভাব পড়ছে খামারে উৎপাদিত মাংস, দুধ এবং ডিমে। এসব মানবদেহে প্রবেশ করে নানা রকমের রোগ তৈরি করছে। সংক্রামিত গবাদিপশুর সান্নিধ্যে বা সহচর্যে যাওয়া মানুষের শরীরেও সরাসরি ঢুকছে পশু রোগ।
তিনি আরও বলেন, অনেক ক্ষেত্রে অনেক খাদ্য, পানীয়জলের সংস্পর্শে আসছে অনেক পশু- পাখি। তাদের লালা থেকেও ছড়িয়ে পড়ছে নানা রোগ। এছাড়াও রয়েছে ট্রান্স বাউন্ডারি নানা প্রাণি রোগ। বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে আসা নানা প্রাণি স্কানিং না করেই প্রবেশ করছে দেশের অভ্যন্তরে। এসব প্রাণিদের থেকেও আমরা সংক্রামিত হচ্ছি।
ঢাকা চিড়িয়াখানার সাবেক কিউরেটর ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, পৃথিবীতে মানুষের শরীরে যত রোগ হচ্ছে তার ৭৫ শতাংশ রোগ হচ্ছে পশুদের অর্জিন। সাধারণত প্রাণির সহচর্যে আসার কারণেই নানা রোগ ছড়িয়েছে। জীবন জীবীকা হোক বা পোষ মানানোসহ নানা করণে মানুষ প্রাণিকুলের সহচর্যে আসছে।
কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতালের সাবেক প্রধান চিকিৎসক ডা. মো. শহীদউল্লাহ বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন অনেক রোগ দেখা দিয়েছে। এসব রোগ এখন শুধু পশুতেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। এসব পশুর মাংস, রক্ত, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ছে মানবদেহে। এ থেকে মানুষকে রক্ষার জন্য ওয়ার্ল্ড এনিমেল হেলফ অর্গানাইজেশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিভিন্ন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কারিকুলাম তৈরি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বন্যপ্রাণির চিকিৎসার বিষয়টিও পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। অ্যানথ্রাক্স, রাণীক্ষেত, ক্ষুরা রোগ, যক্ষা, সোয়াইন ফ্লু, বার্ড ফ্লু, মার্স, সার্স, করোনাভাইরাস, জিকা ভাইরাস শক্তিশালী হয়ে মানুষের দেহে প্রবেশ করছে। প্রাণিরোগ মানুষের দেহে প্রবেশ করে তা মহামারি আকার ধারণ করছে। বর্তমানে করোনাভাইরাস সংক্রমণে বিশ্বে মহামারি আকার ধারণ করেছে। পরিবেশের তারতম্যের কারণে তা আবার নিজে নিজে বিবর্তিতও হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, কুকুরের কামড়ে জলাতঙ্ক রোগ হয় আমরা জানি। কিন্তু এ রোগে আক্রান্ত কুকুরের লালা যেখানে পড়বে সেখানে ২০-২৫ বছর পর্যন্ত সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। কেউ খালি পায়ে সে জায়গা দিয়ে গেলে (পায়ে খত বা কাটা থাকলে) সেও আক্রান্ত হতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, কিছু রোগ আছে যা পশু থেকে মানুষ এবং মানুষ থেকে প্রাণিতে ছড়ায়। এসব রোগের কারণে আমরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি। আবার অনেক রোগ শক্তিশালী হচ্ছে। এসব রোগ নিরাময়ে দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত মাত্রার ভ্যাকসিন।
তিনি বলেন, যাতে করে এসব রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায় এজন্য আমরা বনবিভাগ এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছি। যাতে করে ট্রান্স বাউন্ডারি রোগ দেশে ছড়াতে না পারে এজন্যও আমরা কাজ করছি। দেশের প্রতিটি ল্যান্ড ও সি পোর্ট এলাকায় একটি করে কোয়ারেন্টাইন (পশুর সঙ্গ রোধক করার) হাউস করার পাশাপাশি ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। আমদানি করা পশু অবজারভেশন এবং ল্যাবরেটরি টেস্ট করেই দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।