আবারও বেড়েছে চালের দাম
কৃষি বিভাগ
উত্তরাঞ্চলের শস্যভান্ডারখ্যাত দিনাজপুরে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ফের বেড়েছে চালের দাম। প্রতি বস্তায় দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৫ টাকা।
চালের দাম বাড়ার পেছনে আড়তদাররা মিল মালিকদের দায়ী করেছেন। তবে মিল মালিকদের দাবি বাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ায় চালের দাম বেড়েছে। একইসঙ্গে খুচরা ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফা প্রবণতার অভিযোগও তাদের।
দিনাজপুর বাহাদুর বাজার চাল আড়ত ঘুরে জানা গেছে, এক সপ্তাহ আগেও যেখানে সবচেয়ে ব্যবহৃত গুটি স্বর্ণা চালের কেজিপ্রতি দাম ছিল ৩৬-৩৭ টাকা কেজি। বর্তমানে সেই চালের দাম ৪০-৪১ টাকা। একইভাবে পাইজাম চাল ৪২-৪৩-এর স্থলে ৪৫-৪৬ টাকা। বিআর উনত্রিশ ৪৬-৪৭-এর স্থলে ৪৮-৪৯ টাকা। বিআর আটাশ ৫১-৫২ এর স্থলে ৫৩-৫৪ টাকা, মিনিকেট ৫৫-৫৬-এর স্থলে ৫৭-৫৮ টাকা, উন্নত মিনিকেট ৫৯-৬০-এর স্থলে ৬০-৬১ টাকা। নাজিরশাইল ৬২-৬৩ এর স্থলে ৬৬-৬৭ টাকা, সিদ্ধ কাটারী ৯০-৯২-এর স্থলে ৯৩-৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বস্তা হিসেবে এক সপ্তাহ আগের দাম (৫০ কেজির বস্তা) গুটি স্বর্ণা চাল ১৮০০-১৮৫০-এর স্থলে ২০০০-২০৫০ টাকা। পাইজাম চাল ২১০০-২১৫০-এর স্থলে ২২৫০-২৩০০ টাকা, বিআর উনত্রিশ চাল ২৩২০-২৩৫০-এর স্থলে ২৪০০-২৪৫০ টাকা, বিআর আটাশ চাল ২৫৫০-২৬০০-এর স্থলে ২৬৫০-২৭০০ টাকা, মিনিকেট ২৭৫০-২৮০০-এর স্থলে ২৮৫০-২৯০০ টাকা, উন্নত মিনিকেট চাল ২৯৫০-৩০০০-এর স্থলে ৩০০০-৩০৫০ টাকা, নাজিরশাইল ৩১০০-৩১৫০-এর স্থলে ৩৩০০-৩৩৫০ টাকা এবং সেদ্ধ কাটারি চাল ৪৫০০-৪৬০০-এর স্থলে ৪৬৫০-৪৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। বাজার করতে আসা আবু তাহের মন্ডল বলেন, প্রতি বস্তায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে। সরকারি নজরদারির অভাবে এই দাম বৃদ্ধি করেছে আড়তদাররা। আমাদের আয় বাড়ছে না, বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম। এটি কৃত্রিম সংকট বলে জানান তিনি। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে বাইরে থেকে চাল আমদানি করা প্রয়োজন।
শ্রীভবন বসাক নামে এক ক্রেতা বলেন, সম্পা কাটারি চাল কিনলাম ২ হাজার ৯৫০ টাকা বস্তা দরে। গত মাসেই এই দাম ছিল ২৮৫০ টাকা বস্তা। এতে করে আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
খুচরা চাল ব্যবসায়ী রতন মিয়া বলেন, আগের চেয়ে দাম বেড়েছে। এ কারণে ক্রেতাদের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হচ্ছে। এখানে আমাদের তো করার কিছুই নেই।
আরেক খুচরা চাল ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, নতুন ধানের চাল কম আছে, বেড়েছে পুরাতন চালের দাম। একটি চালের বস্তায় ২০ থেকে ৩০ টাকা লাভ হয়। নতুন চালের দাম কম, বাজার যাচাই করতে পারেন।
চাল আড়তদার এরশাদ ট্রের্ডাসের স্বত্বাধিকারী এরশাদ হোসেন বলেন, পুরাতন চালের দাম বেশি। মিনিকেট, স্বর্ণা, আটাশ ও উনত্রিশ জাতের চালের দাম বেড়েছে। চাহিদা বেশি থাকলে চালের দাম বাড়ে, চাহিদা কম থাকলে চালের দাম কম থাকে। চাহিদা ও সরবরাহের ওপর এই চালের দাম নির্ভর করে।
বিকে ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী বিশ্বজিৎ কুন্ডু বিষু বলেন, ধাপে ধাপে চালের দাম বাড়ছে। ধানের দাম ৫০ টাকা বাড়লে চালের দাম ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেড়ে যায়। মিলাররা এই দাম বৃদ্ধি করে।
বাংলাদেশ মেজর ও অটো মেজর হাসকিং মিল মালিক সমিতির সহসভাপতি শহীদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন বলেন, খুচরা বাজারে অতি মুনাফার কারণে চালের দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে ধানের দামও বস্তাপ্রতি ১০০-১৫০ টাকা বেড়েছে। আমরা মিলাররা উৎপাদন খরচও উঠাতে পারছি না। চাল আমদানি হলেই ধানের বাজার ও চালের বাজার পড়ে যাবে। চাল আমদানি শুরু হলে কৃষকরাও ধান বিক্রি বেশি করবেন। ফলে দাম আরও কমে যাবে।