কালাইয়ে বিলুপ্তির পথে দেশি মাছ
মৎস্য
কালাইয়ে মুক্ত জলাশয় কমে যাওয়ায় দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে। অত্র উপজেলার ৫টি ইউপিতে নদী বা বিল না থাকলেও সরকারি খাস ও ব্যক্তি মালিকানাধীন অনেক পুকুর, ডোবা, খাল ও রাস্তার ধারে জলাশয় রয়েছে। আগের দিনে ওই সব পুকুর ডোবা সবই মুক্ত জলাশয় হিসাবে থাকত এবং এমনিতেই বর্ষাকালে প্রচুর পরিমাণে দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। এখন এসব বিলুপ্তির পথে।
এ দেশের মানুষকে আগে বলা হতো মাছেভাতে বাঙালি। একসময় মাছ থেকেই মানুষের আমিষের চাহিদার বেশির ভাগই পূরণ হতো। সে সময় সাধারণ মানুষ ও জেলেরা খুব সহজেই বিভিন্ন জাতের মাছ ধরতে পারত দেশীয় মাছের মধ্যে ছিল শিং, মাগুর, কৈ, পুঁটি, মোয়া, টাকি, টেংরা, পাবদা, বাতাসি, চিংড়ি, গুচি, বালিয়া, কাকলা, শোল, বোয়ালসহ আরো অনেক। দেশীয় মাছে ছিল স্বাদে ভরা।
বর্তমানে সরকারি খাস ও ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুরগুলো অধিক লাভের আশায় মাছচাষিদের কাছে পত্তন রাখা হয়। তারা রুই, কাতলা, পাঙ্গাস, তেলাপিয়া, বিদেশি পুঁটি, ব্রিকেট, কালবাউশ, সিলভারকাপ, গøাসকাপসহ আরো অনেক মাছ চাষ করে।
ছোটপুকুর বা ডোবায় নিজেরায় মাছ চাষ করে থাকে। উপজেলাতে মুক্ত জলাশয় একেবারেই নাই বললেই চলে। যেটুকু আছে সেগুলোতেও বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে মাছ চাষ করা হয়। মাছচাষিরা মাছ চাষ করতে গিয়ে ওই সব জলাশয়ে পোকামাকড় মারার জন্য কীটনাশক ব্যবহার করলে দেশীয় মাছগুলোও মারা যায়। তাছাড়া ফসলের জমিতে কীটনাশক ব্যবহার করলে ওই জমি ও ডোবায় থাকা দেশীয় মাছ মারা যায়। আবার দু-একটা থাকলে সেটার ডিম থেকে পোনা ফুটলেই ছোট পোনাকে এবং মা মাছকে শিকারিরা ধরে ফেলে বংশবিস্তার করতে পারে না। এভাবেই দেশীয় মাছ একেবারেই বিলুপ্তি পথে।
তবে কেউ কেউ আবার অধিক লাভের আশায় দেশীয় মাছ পুকুরে চাষ করছেন। সেগুলোতে আবার দেশি মাছের প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায় না। এভাবে নিধন হতে থাকলে বর্তমান প্রজন্ম দেশীয় মাছের শুধু নাম জানবে দেখতে না পেয়ে তারা মাছ চিনবে না। আবার অনেক সময় দেশীয় মাছগুলো বন্যার পানিতে ভেসে নদী বা সমুদ্রে যায়। মুক্ত জলাশয় কমে যাওয়ায় জেলেরা তাদের পেশা বদলিয়ে অন্য পেশায় যোগ দিচ্ছে। তারাও পুকুর লিজ নিয়ে বিভিন্ন পুকুরে মাছ চাষ করছে, কেউ কৃষিকাজে যোগ দিচ্ছে, কেউ মাছের পোনার ব্যবসা করে, আবার কেউ মাছ ক্রয়-বিক্রয় করে।
উপজেলার পুনট মালিপাড়ার জেলে তপন চন্দ্র, লাল চাঁনসহ আরো অনেকেই জানান, আমাদের বাপ-দাদার পেশা মাছ ধরা। উপজেলায় মুক্ত জলাশয় না থাকায় আমরা কোথাও মাছ ধরতে পারছি না। তাই ওই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যেতে হচ্ছে।
উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের মাছচাষি আলহাজ আব্দুল কাদের মণ্ডল বলেন, আমি দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষার জন্য কয়েকটি পুকুরে শিং, মাগুর ও পাবদা মাছ চাষ করে ফলাফল ভালো পাচ্ছি।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, দেশীয় জাতীয় মাছ বিলুপ্তির কারণ মাছের বিচরণ ক্ষেত্র পুকুর ডোবা খাল কমে যাচ্ছে। প্রজননে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে, নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের সাহায্যে মা মাছ ও পোনা মাছসহ অতিরিক্ত মাছ শিকার করা হচ্ছে। মৎস্য আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে পারলে দেশীয় প্রজাতির মাছ কিছুটা হলেও রক্ষা করা সম্ভব। সূত্র: ভোরের কাগজ