চট্টগ্রামের ”প্যারাগন হ্যাচারী” এবং প্রযুক্তির ব্যবহার
পোলট্রি
৪ নভেম্বর, ২০২১ তারিখে ওয়ান হেলথ্ পোল্ট্রি হাব, বাংলাদেশ এর একটি গবেষকদল চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে অবস্থিত প্যারাগন গ্রুপের একটি হ্যাচারী পরিদর্শন করেন। সেখানে ছিলেন ওয়ান হেলথ্ পোল্ট্রি হাব বাংলাদেশ এর জাতীয় সমন্বায়ক অধ্যাপক মোঃ আহসানুল হক, গবেষণা সহকারী-সমাজবিজ্ঞান নুসরাত আইরিন এবং মাস্টার্স শিক্ষার্থী ডা. মেহেরজান ইসলাম।হ্যাচারী ইন চার্জ মোঃ আব্দুল মতিন, গবেষকদলকে পুরো হ্যাচারীটি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখান এবং হ্যাচারীর সকল কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত করেন।
প্যারাগন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মশিউর রহমান, বর্তমানে ওয়ার্ল্ডস্ পোল্ট্রি সায়েন্স এসোশিয়েশানের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বরত। সেই সাথে তিনি ওয়ান হেলথ্ পোল্ট্রি হাব বাংলাদেশের জাতীয় উপদেষ্টা দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী সদস্য। তার সুবিন্যস্ত ব্যবস্থাপনায় প্যারাগন গ্রুপ ব্যাপক বিস্তৃতি পেয়েছে। ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত প্যারাগন গ্রুপের এই হ্যাচারীটিতে প্রতি সপ্তাহে ৫ লাখের অধিক ব্রয়লার বাচ্চা হ্যাচ হয়ে থাকে। প্রায় ৫০ জনের অধিক কর্মচারী এই পুরো হ্যাচারীর কার্যক্রমের সাথে জড়িত। অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কর্মীরা ডিম সংগ্রহ, ইনকিউবেশান, হ্যাচিং এর পর উপযুক্ত বাচ্চা বাছাই এবং খামারির কাছে সরবরাহ করা পর্যন্ত প্রতিটি কাজ যথাসময়ে দ্রুততার সাথে করে থাকেন। হ্যাচারীর ইনচার্জ মোঃ আব্দুল মতিন বলেন, “হ্যাচারীতে সদ্যজাত বাচ্চাগুলোকে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা ৩ ধরনের গ্রেড যেমনঃ এ, এ- এবং বি গ্রেডে বাছাই করে থাকেন।“ ওয়ান হেলথ্ পোল্ট্রি হাব বাংলাদেশএর গবেষক দল দেখতে পান অত্যন্ত নিপুনতার সাথেই প্রতিটি বাচ্চার প্যাকেটজাত করা হচ্ছিলো এবং সেই সাথে একটি বিশেষ খাবার দেয়া হচ্ছিলো সদ্যজাত বাচ্চাগুলোর বক্সে, যা পরিবহনের কারণে মুরগীর বাচ্চাতে পানিশূণ্যতা তৈরী হওয়াকে প্রতিরোধ করে।হ্যাচারীর ইনচার্র্জ মোঃ আব্দুল মতিনের কাছ থেকে জানা যায় বাচ্চার প্রতিটি বক্সে শীতকালে পঞ্চাশটি এবং গ্রীষ্মকালে চল্লিশটি করে বাচ্চা দিয়ে ডিলার-খামারির কাছে সরবরাহ করা হয় এবং প্রতিটি বক্সেই এক-গ্রাম পরিমাণ মিনারেল এবং ময়েশ্চার-সমৃদ্ধ এই বিশেষ খাবারটি সরবরাহ করা হয়। খামারিরা যাতে একটি সতেজ বাচ্চা পেতে পারে সেই মহত্ উদ্দেশ্যেই এই খাবারটি প্রদান করা হয়ে থাকে।
কেবলমাত্র সুস্থ বাচ্চা উত্পাদনেই প্যারাগন গ্রুপ মনোযোগী তা নয়, ওয়ান হেলথ্ পোল্ট্রি হাব বাংলাদেশএর গবেষক দল হ্যাচারীর নিগূঢ় জীবনিরাপত্তা ব্যবস্থাতেও চমত্কৃত হয়। হ্যাচারীতে প্রবেশের জন্যে যে কোন পরিবহনকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপে জীবাণুনাশ করা হয়। সেই সাথে যে কোন পরিদর্শককে হ্যাচারী প্রাঙ্গনে পৌঁছুতে দুইটি জীবনিরাপত্তা বেষ্টনী পেরুতে হয়। হ্যাচারীতে প্রবেশের পূর্বে সকলের জন্যেই দুবার করে পোশাক পরিবর্তনের নিয়ম রয়েছে। এছাড়াও হ্যাচারীর ভেতরে প্রতিটি পয়েন্টে রয়েছে জীবাণুনাশকের বন্দোবস্ত।
ওয়ান হেলথ্ পোল্ট্রি হাব বাংলাদেশএর গবেষক দল হ্যাচারীতে নতুন একটি ব্যবস্থাপনা লক্ষ্য করেন। প্রযুক্তির এই যুগে নিত্য-নতুন প্রযুক্তিগুলো প্রাচীন মুরগীর খামার বা গরুর খামারকে যে শিল্পে পরিণত করে নিয়েছে, তারই প্রমাণ এই সকল ব্যবস্থাপনা। হ্যাচারীর ইনকিউবেশান কক্ষে ছিলো এয়ার ফ্রেশার এর ব্যবস্থা। বাহিরের মুক্ত বাতাস প্রক্রিয়াজাত হয়ে জীবাণুমুক্ত ও শীতল হয়ে ইনকিউবেশান কক্ষে সরবরাহিত হয়। ডিমের ভেতর ভ্রূণ থেকে বাচ্চা হওয়ার পদ্ধতিতে কার্বন-ডাই অক্সাইডের প্রভাব, বাচ্চার গুণগত মানের উপর অনেক বিরূপ প্রভাব ফেলে। তবে এই অত্যাধুনিক ব্যবস্থা পরিবেশের মুক্ত বাতাসকে সংরক্ষণ করে একটি বিশুদ্ধ বাতাস সরবরাহ করে থাকে এই কক্ষে, যার দরুন বাচ্চার সুস্থতা এবং গুণগত মান অনেকাংশেই বেড়ে যায়।
ওয়ান হেলথ্ পোল্ট্রি হাব বাংলাদেশ এর জাতীয় সমন্বায়ক অধ্যাপক মোঃ আহসানুল হক, প্যারাগন গ্রুপএর উত্তরোত্তর শুভকামনা জানান।