১২:৪০ অপরাহ্ন

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
  • হোম
  • চায়না কমলায় কৃষকের স্বপ্ন ভঙ্গ, গাছ কেটে ফেলছেন চাষীরা
ads
প্রকাশ : ডিসেম্বর ১৫, ২০২১ ৩:১৭ অপরাহ্ন
চায়না কমলায় কৃষকের স্বপ্ন ভঙ্গ, গাছ কেটে ফেলছেন চাষীরা
এগ্রিবিজনেস

সততার সাথে আরেকটু স্বচ্ছল জীবন যাপনের স্বপ্ন দেখতেন গোলাম রসুল। কৃষকের সন্তান,তাই পরিবারে স্বচ্ছলতা আনতে কৃষিকেই বেঁচে নেন তিনি। প্রায় ৩ বছর আগে নিজের জমানো কিছু টাকা ও চাকুরীর সুবাদে জিবি ফান্ড থেকে লোন নেয়া সাড়ে ৪ লাখ টাকা দিয়ে সাড়ে ৫ বিঘা জমিতে চায়না কমলা চাষ শুরু করেন। গত বছর অল্প পরিমাণে ফল আসলেও এ বছর গাছ ভর্তি ফল আসে। আশায় বুক বাঁধেন তিনি। কমলা বিক্রি করে অনেক টাকা হবে, পরিবারে স্বচ্ছলতা আসবে। এবার থেকে স্ত্রী-সন্তান ও পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালোভাবে চলতে পারবেন। বেশ ফুরফুরে মেজাজেই ছিলেন তিনি। কিন্তু ফল বিক্রি করতে গিয়ে বাধে বিপত্তি। মুহুর্তেই সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়।

বাজারে চাহিদা নেই। ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছেনা। যাও একজনকে পেলেন তিনি তার কমলা নিয়ে বাজারে গিয়ে অর্ধেকও বিক্রি করতে পারলেন না। কমলা বিক্রির এ অবস্থা দেখে হতাশ গোলাম রসুল। ক্ষতিগ্রস্থ গোলাম রসুল এখন পরিবারের কাছে অবহেলার পাত্র। চায়না কমলা চাষে শুধু গোলাম রসুল নন এমন স্বপ্ন দেখা হাজারো তরুন উদ্যোক্তার স্বপ্ন ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেছে। চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবন নগরের নিধি কুন্ডু গ্রামের ওমর ফারুকের চায়না কমলার চারা নিয়ে দেশজুড়ে হাজার হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। চায়না কমলা বিক্রির না হওয়ার কারন হিসেবে চাষীরা জানিয়েছেন, এ কমলার মধ্যে বীজ রয়েছে। এছাড়া গাছেই কমলার রস শুকিয়ে যাচ্ছে। খেতেও সুস্বাদু না।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নের মাসলিয়া গ্রামের গোলাম রসুল জানান, তিনি বাংলাদেশ পুলিশের এ এস আই পদে কর্মরত আছেন। প্রায় ৩ বছর পূর্বে তিনি বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলে চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবন নগরের নিধিকুন্ডু গ্রামের ওমর ফারুকের চায়না কমলার চাষ নিয়ে প্রতিবেদন দেখেন। প্রতিবেদন দেখে তিনি উদ্বুদ্ধ হয়েছেন ঠিকই কিন্তু চায়না কমলা চাষ করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না। এমন সময় তার নজরে আসে চুয়াডাঙ্গা জেলার সদর উপজেলার কৃষি অফিসার তালহা জুবাইর মাসরুর পরিচালিত ইউটিউব চ্যানেল কৃষি বায়োস্কোপ। সেখানে তিনি বলেন জীবন নগরে খুব সফলতার সাথে বানিজ্যিকভাবে চায়না কমলার চাষ হচ্ছে।

তিনি ভিডিওতে বলেন, বাজারের চাইনিজ কমলা থেকেও ওমর ফারুকের কমলার স্বাদ অনেক ভালো। এমনকি ১’শ গাছ থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকা আয় হওয়ার স্বপ্ন দেখান তিনি। এই কৃষি কর্মকর্তার ভিডিও দেখার পর, কালবিলম্ব না করে ওমর ফারুকের কাছ থেকে চারা এনে সাড়ে ৫ বিঘা জমিতে চায়না কমলা চাষ করেন গোলাম রসুল। এ বছর গাছে যখন ফল আসলো তখন বিক্রি করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন। কমলার ক্রেতা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। অনেক খোঁজা খুঁজির এক পর্যায়ে একজনকে পেলেও তিনি বাগান থেকে কমলা নিয়ে বাজারে অর্ধেকটাও বিক্রি করতে পারলেন না।

গোলাম রসুল দুঃখ ভারাক্রান্ত কন্ঠে জানান, কমলা চাষ করতে গিয়ে লাখ লাখ টাকার ক্ষতিতে পড়ে পরিবারের কাছে তিনি আজ অবহেলার পাত্রে পরিণত হয়েছেন তিনি আক্ষেপ করে বলেন তালাহা সাহেব তার ইউটিউবে এখনও চায়না কমলার প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তার সর্বশেষ ভিডিওতে তিনি ছবি তোলার জন্য হলেও চায়না কমলা গাছ লাগাতে বলে কৃষকের সাথে মস্করা করছেন। কোথা থেকে চারা কিনবেন সেটিও বলছেন খামারীর বাগানে দাঁড়িয়ে। সারা বাংলাদেশে হাজারো কৃষকের যে ক্ষতি হয়েছে এর জন্য তালহা সাহেবকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি করেন তিনি। আবেগ তাড়িত হয়ে গোলাম রসুল চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কৃষি অফিসার তালহার ফাঁসি দাবি করেন। তিনি কৃষিতে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ওমর ফারুক ও কৃষি অফিসার তালহা জুবাইর মাসরুরের পদক কেড়ে নেওয়ারও দাবি করেন।

চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার বিঞ্চুপুর গ্রামের সাইদুল ইসলাম তালহা জোবাইয়ের মাসরুরের ইউটিউব চ্যানেল কৃষি বায়োস্কোপ দেখে ৪ বিঘা জমিতে চায়না কমলা লাগান। ফল আসার পর তার পূর্ব পরিচিত ঢাকার এক ব্যপারি এসে কমলা খেয়ে বলেছে এটা ঢাকাতে বিক্রি হয়না। কাজেই চায়না কমলা তারা কিনতে পারবে না। তাই এ বছরের অক্টোবর মাসে তার ৪ বিঘা জমির সব কমলা গাছ কেটে ফেলেছেন। তার মোট ক্ষতির পরিমাণ ৪ লাখ টাকা। তিনি জানান, গাছ কাটার পূর্বে চুয়াডাঙ্গা সদরের কৃষি কর্মকর্তা তালহা জোবাইয়ের মাসরুর সাহেবের কাছে গিয়েছিলেন। তালহা সাহেব তাকে বলেন, তুমি এতো লাগিয়েছো কেন। দুই চারটি গাছ লাগানো ভালো ছিল। কৃষি অফিসার তাকে গাছ কেটে ফেলার পরামর্শ দেন।

ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষি উদ্যোক্তা মফিজুর রহমান মাফি বলেন, তিনি ইউটিউব দেখে ২০১৯ সালে সাড়ে তিন বিঘা জমিতে চায়না কমলা চাষ করেন। এবছর গাছে অনেক ফল এসেছে। কিন্তু কোয়ালিটি ভালো না হওয়ায় তিনি একটি ফলও বাজারজাত করেননি। চায়না কমলা লাগিয়ে তার প্রায় ৪লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনিও খুব দ্রুতই গাছগুলো কেটে ফেলবেন বলে জানান।

এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সদরের কৃষি অফিসার তালহা জোবাইয়ের মাসরুরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বাংলাদেশে কমলা চাষ হচ্ছে এটা বেশ ভালোলাগার একটি বিষয় ছিল। ভালোলাগা থেকে তিনি জীবননগরের নিধিকুন্ডু গ্রামের ওমর ফারুকের বাগানের চায়না কমলা নিয়ে প্রতিবেদন করেছিলেন। কিন্তু তিনি ওই ভিডিওতে কাউকে বানিজ্যিকভাবে চায়না কমলা লাগানোর পারমর্শ দেননি। তিনি বলেন কৃষক চাষ করার পূর্বে আমার সাথে যোগাযোগ করলে আমি তাদেরকে বাণিজ্যিকভাবে চায়না কমলা চাষে নিরুৎসাহিত করতাম।

শেয়ার করুন

ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop