দারকিনা মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন করল বিএফআরআই
মৎস্য
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা অবশেষে দেশীয় প্রজাতির দারকিনা মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল উদ্ভাবনে সফল হয়েছেন। গত মার্চে ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহস্থ স্বাদুপানি কেন্দ্রে এ সফলতা অর্জিত হয়।
এর আগে, খলিশা, বৈরালী, বাতাসি, পিয়ালিসহ দেশীয় ও বিলুপ্তপ্রায় ৩১ প্রজাতির মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ কৌশল উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছে মৎস্য ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা।
ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান, বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় সব প্রজাতির মাছের পুনরুদ্ধার কার্যক্রমের অধীনে চলতি বছর প্রথম সুস্বাদু দারকিনা মাছের কৃত্রিম প্রজননে এই সফলতা অর্জিত হয়েছে। গত মার্চ মাসে ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহস্থ স্বাদুপানি কেন্দ্রে এ সফলতা অর্জিত হয়। গবেষক দলে ছিলেন ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো: রবিউল আউয়াল, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো: আশিকুর রহমান ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো: শাহাআলী। এ বছর আরো আটটি দেশীয় মাছের প্রজনন কৌশল উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা চলছে।
তিনি আরো জানান, চলতি বছর বিগত দুই-তিন বছরে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ঢেলা, রানী, বাতাসি, পিয়ালি, খলিশা ইত্যাদি মাছের ব্যাপক পোনা উৎপাদনের পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছে। ফলে এসব দেশীয় মাছের চাষাবাদে পোনা প্রাপ্তি সহজতর হবে এবং উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। গবেষণার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে সব দেশীয় মাছকে খাবারের টেবিলে ফিরিয়ে আনা হবে। এ লক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বিএফআরআই সূত্র জানিয়েছে, একসময় দেশের যে কোনো জলাশয় বিশেষ করে খাল-বিলের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে দারকিনা মাছটি চোখে পড়ত। দলবেঁধে চলাচল করত তারা। মাছটিকে স্থানীয়ভাবে ডাইরকা, ডানখিনা, দাড়কিনা, ডানকানা, দারকি, দারকা, চুক্কনি, দাইড়কা ইত্যাদি নানা নামে ডাকা হয়। এক সময়ের বহুল পরিচিত ও সুস্বাদু এ মাছটি এখন বিলুপ্তির পথে। এ মাছের পুষ্টিগুণ অন্যান্য ছোট মাছের তুলনায় অনেক বেশি। প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য মাছে ভিটামিন-এ ৬৬০ মাইক্রোগ্রাম আরএই, ক্যালসিয়াম ৮৯১ মিলিগ্রাম, আয়রণ ১২ দশমিক শূন্য মিলিগ্রাম এবং জিংক ৪ মিলিগ্রাম পাওয়া যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, মাছটির প্রজননকাল মার্চ থেকে শুরু হয়ে জুলাই মাস পর্যন্ত হলেও মে-জুলাই এদের সবোর্চ্চ প্রজনন মৌসুম। মাছের ডিম্বাশয় মার্চ মাস থেকে পরিপক্ব হতে শুরু করে। গত মার্চের শেষ দিকে কৃত্রিম প্রজননের জন্য পরিপক্ব স্ত্রী ও পুরুষ মাছ নির্বাচন করে পুকুর থেকে তা সংগ্রহ করা হয়। পরিপক্ব স্ত্রী মাছের জননেন্দ্রীয় গোলাকার ও ফোলা হয় কিন্তু পুরুষ মাছের জননেন্দ্রীয় পেটের সঙ্গে মেশানো, লম্বাটে ও ছোট হয়। কৃত্রিম প্রজননের ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা পূর্বে স্ত্রী ও পুরুষ মাছ (১.৫-৩ গ্রাম) পুকুর থেকে সংগ্রহ করে হ্যাচারির সিস্টার্নে রাখা হয়। এরপর কৃত্রিম প্রজননের জন্য স্ত্রী ও পুরুষ দারকিনা মাছকে পিজি হরমোন ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়।
ইনজেকশন দেওয়ার ৬-৭ ঘণ্টা পরে স্ত্রী মাছ ডিম দেয়। ডিম দেওয়ার ১৪-১৬ ঘণ্টার মধ্যে নিষিক্ত ডিম হতে রেণু বের হয়ে আসে। রেণুর ডিম্বথলি ৬০-৭২ ঘণ্টার মধ্যে নিঃশেষিত হওয়ার পর প্রতিদিন তিন-চার বার মুরগির সিদ্ধ ডিমের কুসুম খাবার হিসেবে সরবরাহ করা হয়। দুই-তিন দিন পর রেণু পোনাকে নার্সারি পুকুরে স্থানান্তর করা হয়।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০৮-২০০৯ সালে চাষের মাধ্যমে দেশীয় মাছের উৎপাদন ছিল ৬৭ হাজার মেট্রিক টন। দেশীয় মাছের পোনা উৎপাদন ও চাষাবাদ প্রযুক্তি উদ্ভাবন হওয়ায় ২০২০-২১ সালে উৎপাদন ৪ গুণ বেড়ে ২ দশমিক ৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে।
সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ/এআর