দিনাজপুরে চালের বাজারে অস্থিরতা
এগ্রিবিজনেস
দিনাজপুরে ১৩টি উপজেলায় চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। কয়েকজন মিল মালিক সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়াচ্ছেন দফায় দফায়। এর ফলে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ৪ থেকে ৬ টাকা। আর ঐতিহ্যবাহী কাটারিভোগ চালের দাম বেড়েছে ১০ টাকা।
জানা গেছে, ধানের জেলা হিসেবে পরিচিত দিনাজপুরে মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি চালের দাম বেড়েছে প্রকারভেদে ৪ থেকে ৬ টাকা। আর ৫০ কেজি বস্তায় বেড়েছে ২শ থেকে ৩শ টাকা। তবে কাটারি চালের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি কাটারি চালের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। চাল বিক্রেতারা বলছেন, মিল মালিকরা দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় বেশি দরে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে। আর মিল মালিকরা বলছেন, বাজারে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেশি, এ কারণে বেড়েছে চালের দাম।
দিনাজপুরের প্রধান চালের বাজার বাহাদুর বাজারে গত রবিবার গিয়ে দেখা যায়, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি
কেজি নাজিরশাইল চাল ৬২ থেকে বেড়ে ৬৮ টাকা, গুটি স্বর্ণা ৪০ থেকে বেড়ে ৪৫ টাকা, বিআর-২৮ চাল ৪৮ থেকে বেড়ে ৫৪ টাকায়, বিআর-২৯ চাল ৪৪ থেকে বেড়ে ৪৮ টাকায় এবং প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৫৫ থেকে বেড়ে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি বস্তায় চালের দাম বেড়েছে প্রকারভেদে ২শ থেকে ৩শ টাকা পর্যন্ত। এ দাম ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে বলে জানান চাল বিক্রেতারা।
প্রায় সব চালের দাম বাড়লেও দিনাজপুরের বিখ্যাত কাটারিভোগ চালের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে এই কাটারিভোগ চালের দাম বেড়েছে প্রতি কেজি ১০ টাকা। দুই সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি কাটারিভোগ চালের দাম ৯০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১শ টাকায়।
বাহাদুর বাজারের চাল বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন জানান, মিল মালিকরা চালের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে। তাই তাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে ক্রেতাদের সঙ্গে তাদের প্রায় বচসা হচ্ছে। তিনি বলেন, দাম বেড়ে যাওয়ায় চালের বিক্রি কিছুটা কমেছে। বেশি দাম থাকার কারণে ক্রেতারা বাজারে ঘোরাঘুরি করছেন। বাজার নিয়ন্ত্রণে বিদেশ থেকে চাল আমদানির পাশাপাশি খোলাবাজারে চাল বিক্রির ওপর গুরুত্বারোপ করেন দীর্ঘদিনের চাল বিক্রেতা লিয়াকত আলী।
বাহাদুর বাজারের আরেক চাল ব্যবসায়ী আফসার আলী জানান, ধাপে ধাপে চালের দাম বাড়ছে। বাজারে ধানের দাম ৫০ টাকা বাড়লে মিল মালিকরা চালের দাম ১০০ থেকে ২০০ টাকা বাড়িয়ে দেন।
দিনাজপুর চালকল মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইকবাল চৌধুরী জানান, তারা বাজারে ধান কিনে চাল উৎপাদন করে বিক্রি করেন। বেশি দামে ধান কিনে চাল উৎপাদন করতে তাদের উৎপাদন খরচ বেশি পড়ছে। উৎপাদন খরচের সঙ্গে সমন্বয় করেই তাদের চাল বিক্রি করতে হচ্ছে। এ কারণেই বেড়েছে চালের দাম।
বাংলাদেশ মেজর ও অটো মের হাসকিং মিল মালিক সমিতির সহসভাপতি শহীদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন জানান, কৃষকরাও এখন অনেক স্বাবলম্বী। অনেক কৃষকই ধান মজুদ করে রেখেছেন। দাম বেশি না হলে তারা ধান বাজারে ছাড়েন না। এ কারণে বাজারে ধানের দাম বেড়েছে। তার প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে। তবে কৃষকরা ধানের ভালো দাম পেলে তারা ফসল উৎপাদনে আরও বেশি আগ্রহী হবেন এবং এতে দেশে খাদ্য উৎপাদনও বাড়বে। এজন্য কৃষকরা লাভবান হওয়ায় বিষয়টিকে তিনি দেশের জন্য ভালো বলে উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, দিনাজপুরে প্রতিবছর চাল উৎপাদন হয় ১৪ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি। এই অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিবছর ৯ লাখ মেট্রিক টন চাল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়।