দেশের মৎস্য সম্পদের জন্য হুমকি সাকার ফিস
মৎস্য
অ্যাকুরিয়ামে চাষ করা বিদেশি প্রজাতির রাক্ষুসে মাছ ছড়িয়ে পড়েছে দেশের নদী ও জলাশয়ে। দেশীয় মাছের জন্য ক্ষতিকর এই মাছটির কারণে হুমকির মুখে পড়ছে দেশের মৎস্য সম্পদ। ‘সাকার’ ফিস নামে পরিচিত মাছটি অন্য মাছ ও জলজ প্রাণীর পোনা খেয়ে ফেলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন সরকারি গবেষণা।
বুড়িগঙ্গা, ঢাকার ময়লা আবর্জনা গর্ভে ধারণ করে খরস্রোতা এই নদীর পানি এখন বিষাক্ত। এবার বুড়িগঙ্গায় বাসা বেঁধেছে এক রাক্ষুসে মাছ, যার জন্য হুমকির মুখে দেশের মৎস্য সম্পদ। মাছটির নাম ‘সাকার মাউথ ক্যাটফিস’। তবে দেশে পরিচিত ‘সাকার ফিস’ নামে। অ্যাকুরিয়ামে চাষযোগ্য বিদেশি প্রজাতির এই ক্ষতিকর মাছটি প্রায়ই এখন দেখা মিলছে বুড়িগঙ্গাসহ দেশের বিভিন্ন নদ-নদী, হাওর ও জলাশয়ে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- এই মাছ এলো কোত্থেকে?
নারায়ণগঞ্জ মৎস্য কর্মকর্তা বলছেন, মাছটা হয়তো কারও অ্যাকুরিয়ামে ছিল। কোনো কারণে তারা হয়তো মাছটি সেখান থেকে আশেপাশে ডোবা, খাল বা নদীতে। এর থেকে এখন বুড়িগঙ্গায় আমরা প্রচুর পরিমাণে সাকার ফিস দেখতে পাচ্ছি।
নদী গবেষকরা বলছেন, মাছটির পাখনা খুব ধারালো। ফলে অল্প আঘাতেই অন্য মাছের দেহে ক্ষত তৈরি করে। এতে প্রথমে পচন এবং পরে মারা যেতে থাকে দেশি মাছগুলো। তাই যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে জীববৈচিত্রের জন্য এই মাছ মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বলেন, যেহেতু অন্য কোনো মাছ নদীতে বাঁচতে পারে না, বিশেষ করে ঢাকার চার নদীতে। সেক্ষেত্রে এই মাছগুলো যেহেতু অক্সিজেন ছাড়া অনেক সময় বেঁচে থাকতে পারে, তাই এরা সারভাইভাল ফর দ্যা ফিটেস্টে দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকে। এটাই বাস্তবতা। আমাদের প্রকৃতি, পরিবেশ ও জীব বৈচিত্রের সঙ্গে যে দেশীয় মাছগুলো আছে, সেগুলোর জন্য এটি খারাপ।
সাকার ফিস জলজ পোকামাকড় ও শ্যাওলার পাশাপাশি ছোট মাছ ও মাছের পোনা খেয়ে থাকে। তাই এই মাছ জালে ধরা পড়লে, ফের নদীতে না ফেলার পরামর্শ তাদের।
মোহাম্মদ এজাজ আরও বলেন, নদীতে মাছ ধরতে গেলে জালে এ মাছগুলো উঠছে। পরে মাছগুলো আবার জলাশয়ে ফেলে দেওয়া হচ্ছে, এটা বন্ধ করতে হবে।
ধারণা করা হচ্ছে, ইউরোপের এক কূটনীতিক মেয়াদ শেষে চলে যাওয়া আগে ঢাকার গুলশান লেকে এই মাছটি ছেড়ে দেন। এরপর সেখান থেকেই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এটি।