পরিত্যক্ত দ্বীপে মিশ্র ফল বাগান করে তাক লাগিয়েছেন সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা
কৃষি বিভাগ
কাপ্তাই হ্রদের পাশে রাঙ্গাপানি এলাকায় পরিত্যক্ত দ্বীপের ১০ একর জমিতে মিশ্র বাগান করে সফল হয়েছেন রাঙ্গামাটির কৃষি উদ্যোক্তা সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা।
রাঙ্গামাটির এ সফল কৃষি উদ্যোক্তা জানান, ২০১৬ সালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কাপ্তাই হ্রদ ঘেষে থাকা রাঙ্গামাটির সদরের মগবান ইউনিয়নের সোনারাম কার্বারী পাড়া এলাকায় সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা তার পরিত্যক্ত দ্বীপে গড়ে তোলেন মিশ্র ফলজ বাগান। মিশ্র ফলজ বাগান করার পর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এ বাগানই তাকে এনে দিয়েছে ব্যাপক সফলতা।
পরিত্যক্ত পাহাড়ী জমিতে মিশ্র ফল বাগান করে সুশান্ত বর্তমানে রাঙ্গামাটির সফল কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। তার বাগানে কাজ করছে আরো অনেক বেকার যুবক। মিশ্র বাগানের পাশাপাশি গাছের চারাও বিক্রি করছেন তিনি।
তার বাগানে বল সুন্দরি বড়ই, বিদেশী রেড লেডি পেঁপে, বিলাতি ধনিয়া পাতা, লিচু, লটকন, মাল্টা, কলা, তেতুল, সুপারি, বেল, জাম্বুরা, কাঠাল, রাম্বুটান, পেয়ারা, আলু বোখরা, দারু চিনিসহ বিভিন্ন ধরনের মিশ্র ফল বাগান রয়েছে।
বর্তমানে তার বাগানে বিদেশী জাতের রেড লেডি পেঁপে, জাম্বুরা, বেলসহ বেশ কয়েকটি ফল বিক্রির উপযোগী হয়েছে। ফুল এসেছে বল সুন্দরি বড়ই গাছে। আরো কয়েক মাস পর আরো কিছু ফল বিক্রির উপযোগী হবে বলে জানিয়েছেন এ কৃষি উদ্যোক্তা। তবে সরকারী সহায়তা পেলে শহর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকা কাপ্তাই হ্রদ বেষ্টিত এসব পরিত্যক্ত দ্বীপ এলাকায় আরো মিশ্র ফলজ বাগান করা সম্ভব বলে জানান সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা।
সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যার বাগানে কাজ করে সফল স্বাবলম্বী হওয়া যুবক সুকুমার চাকমা জানান, আমিসহ আরো ১০ থেকে ১২ জন বেকার যুবক এ বাগানে কাজ করে পরিবারের চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি নিজেরা অনেকটাই স্বাবলম্বী। ভবিষ্যতে তারা ও সম্মিলিতভাবে মিশ্র ফলজ বাগান করার পরিকল্পনা করছেন বলে জানান।
রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক জানান, পাহাড়ের বিভিন্ন পরিত্যক্ত জমিতে ব্যক্তিগত ও সম্মিলিতভাবে মিশ্র ফল বাগান পাহাড়ের ফলের চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি দেশের অন্যান্য জেলাগুলোতে ও কৃষকরা সরবরাহ করছে। এতে পার্বত্য এলাকায় কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি মিশ্র ফলজ বাগান কৃষি ক্ষেত্রে ভালো একটি পরিবর্তন এনেছে। তিনি জানান, মিশ্র ফলজ বাগান নিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় কোন প্রকল্প না থাকলে ও মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে।
মিশ্র ফলজ বাগানের বিষয়ে প্রকল্প গ্রহণে ভবিষ্যত উদ্যোগ নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে এ কৃষি কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে সরকারীভাবে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আগামী ৫বছরের জন্য কাজু বাদাম ও কফি চাষের একটি প্রকল্প চালু হবে। এসব প্রকল্পে পাহাড়ের পরিত্যক্ত জমিকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
পাহাড়ে পরিত্যক্তভাবে পড়ে থাকা জমিগুলো মিশ্র বাগান চাষের আওতায় আনতে পারলে ফল উৎপাদনে দেশের অনেক অনেক চাহিদা পূরণ করা সম্ভব বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।