ফুলের ভালো দাম পেয়ে হাসি ফুটেছে চাষিদের মুখে
এগ্রিবিজনেস
ফুলের সম্রাজ্যখ্যাত যশোরের গদখালী এলাকার কৃষক আলমগীর হোসেন বুদ্ধিজীবী দিবস আর বিজয় দিবসে লক্ষাধিক টাকার ফুল বিক্রি করেছেন তিনি। প্রায় দুই বছর পর দুই বিঘা জমিতে উৎপাদন করা ফুল ভালো দামে বিক্রিতে তার মুখে হাসি ফুটেছে।
তিনি জানান, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে কিছুদিন আগেও ফুল চাষীদের গলার ফাঁস হয়ে তাদের সব স্বপ্নসাধ কেড়ে নিয়েছিল। চলতি বছরে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ফুলের ব্যাপক চাহিদা ও ভালো দাম থাকায় সেই ফাস এখন চাষীদের গলার মালা হয়ে উঠেছে।
দুই দিবস ঘিরে আগের তুলনায় বেচাকেনা বেড়েছে গদখালীর ফুল বাজারে। চাহিদা বেশি থাকায় আগের বাজারদর থেকে বেশি দামে ফুল বিক্রি হয়েছে। প্রতিদিন ভোরে এই ফুলের হাট বসে গদখালীতে। গত তিন দিনে বাজারটিতে দেড় কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়েছে গাঁদা ফুল। বাজারে প্রতি হাজার গাঁদা ফুল বিক্রি হয়েছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা দরে। যা আগে দাম ছিল দেড় শ’ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৫০-৩০০ টাকা। একেকটি গোলাপ বিক্রি হয় ৪-৬ টাকায়, যা আগে ছিল দেড় থেকে ২ টাকা। রজনীগন্ধা একেকটি বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৮ থেকে ১০ টাকায়, যা আগে ছিল ৭ থেকে ৮ টাকা। রঙিন গ্লাডিউলাস প্রতিটি মান ভেদে বিক্রি হয়েছে ৬ থেকে ১৫ টাকায়, যা পূর্বে ছিল ৩-৬ টাকা। জারবেরা বিক্রি হয়েছে ১২ থেকে ১৪ টাকায়, যা আগে দাম ছিল ৬ থেকে ৮ টাকা। ফুল বাঁধাইয়ের জন্য কামিনীর পাতা বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা আঁটি, যা আগে ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। জিপসির আঁটি বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। যা আগে বিক্রি হতো ২০ থেকে ২৫ টাকায়।
ফুল চাষিরা জানিয়েছেন,মাস খানেক আগের থেকে বর্তমানে প্রতিটি ফুলের দাম দ্বিগুন হয়েছে। আসছে ১৩ ফেব্রুয়ারি পয়লা ফাল্গুন, ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা ও মহান শহীদ দিবস এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের আগ মুহুর্তে ফুলের দাম আরো ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষকেরা প্রায় দুই বছরের করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের সারাবছরের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে তারা আশা করছেন।
পানিসারার পটুয়াপাড়া গ্রামের ফুল চাষী আলমগীর হোসেন বলেন, করোনার কারণে গত বছর এই সময়ে ১০ হাজার টাকার ফুলও বিক্রি করতে পারেনি। এবার ১৫ কাটা জমির জারবেরা আর দেড় বিঘা জমির গাঁদা থেকে এই দুই দিবসে ৫০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করতে পেরেছি। করোনায় সারা বছর ফুল বিক্রি ছিলো না। আশা করছি, সামনের চারটি অনুষ্ঠানে গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবো।’
হাড়িয়া গ্রামের কৃষক মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘দেড় বিঘা জমিতে চীনের লং স্টিক রোজ জাতের গোলাপ ফুলের চাষ এ অঞ্চলে আমিই প্রথম শুরু করেছিলাম। করোনা পরিস্থিতিতে ফুল বিক্রি হয়নি। বাগান পরিচর্যায় খরচও বাড়ছিলো। যে কারণে বাগান পরিচর্যা অনেকটা বাদ দিয়েছিলাম। এবার করোনা কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় ফুল চাষ শুরু করি। ডিসেম্বর থেকে ফুলের চাহিদা বেড়েছে। সেই সাথে আগের চেয়ে দামও বেড়েছে কয়েকগুণ। বিজয় দিবস উপলক্ষে ৭০ হাজার টাকার মতো ফুল বিক্রি হয়েছে। এ বছর ফেব্রুযারি মাসে দুই লাখ টাকার গোলাপ ও দেড় লাখ টাকার চীনের লং স্টিক ফুল বিক্রি হবে বলে আশা করছি। হাঁড়িয়া গ্রামের আশরাফ হোসেন বলেন, ‘১৭ কাঠা জমির গাঁদা ফুল বিক্রি করেছি ৭০ হাজার টাকায়। গত বছর মে মাসে আম্ফানের সময় একই খেতে গাঁদা ফুল চাষ করেছিলাম। তখন মাত্র দু শ টাকার ফুল বিক্রি করতে পেরেছি।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির (বিএফএস) কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, যশোর জেলার আট উপজেলায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়। তার মধ্যে ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী-পানিসারার প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কৃষক ৬ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ করছেন। ‘প্রায় দুই বছর ধরে করোনাভাইরাস, লকডাউন, আম্ফান ঘূর্ণিঝড় ফুলচাষিরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। গত তিন দিনে দেড় কোটি টাকার ফুল বিক্রি হওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে।’