ফেসবুক ডাক্তার হতে সাবধান…
পোলট্রি
আমাদের দেশে কেউ অসুখে আক্রান্ত হলে বেশিরভাগ মানুষই সর্বপ্রথম নিজেই নিজের মত করে ঔষধ সেবন করেন কিংবা ফার্মেসিতে যেয়ে সমস্যার কথা বলে ঔষধ কিনে আনেন । একইভাবে পোল্ট্রি খামারিগন যদি সমস্যায় পড়েন তাহলে নিজেই ডাক্তারি করেন, না হয় পাশের খামারির পরামর্শে ঔষধ খাওয়ান । বর্তমানে এক শ্রেণির খামারি দেখা যায় যারা মুরগির সমস্যা হলে ফেসবুকে পোল্ট্রি সংক্রান্ত বিভিন্ন গ্রুপে পোষ্ট দিয়ে তার প্রতিকার/চিকিৎসা চান আর খামারিরাও নিজের মেধা, প্রজ্ঞা এবং অভিজ্ঞতা দিয়ে দারুণ দারুণ সব পরামর্শ দেন । বাস্তবতা হচ্ছে এইসব পরামর্শ কতটা যুক্তিযুক্ত কিংবা খামারীবান্ধব ?
এক খামারি সেদিন পোষ্ট দিলেন যে তার ব্রয়লার মুরগির বয়স ২০ দিন, অনবরত খাদ্য ছিটাচ্ছে। সমাধান কি ? এই খামারি খুব বিপদেই পড়ে এই পোষ্ট দিয়েছেন আমি নিশ্চিত কিন্তু এই পোষ্টে প্রায় ৪০-৫০ জন কমেন্ট করে সমাধান দিয়েছেন যা হয়ত সেই খামারির বিপদ আরোও বাড়িয়ে দিবে । ১ টা সমস্যায় যদি ৩০-৪০ টা সল্যুশন পাওয়া যায় তাহলে ব্যাপারটা হয়ে ওঠে “কোনটা রেখে কোনটা নিবো” এই টাইপের । সল্যুশনগুলার দিকেও একটু নজর দেই -কয়েকজন কমেন্ট করেছেন আমাশয় হয়েছে, আর বেশিরভাগই দিয়েছেন ট্রিটমেন্ট । কেউ এনপ্রোভিন দিতে বলেছেন, কেউ এনজাইম, কেউ কক্সিকিউর, আরেকজন এপ্রোলিয়াম, অন্যজন সিপ্রোসিন, কেউবা টলটাজরিল, কেউ রেনামাইসিন আবার কেউ কেউ সিপ্রোসিন, এপ্রোলিয়াম, রেনামাইসিন একসাথে চালাতে বলেছেন, সাথে এনজাইম । রুবেল নামের এক ভদ্রলোক দেখলাম কমেন্টে নিজের নাম্বার দিয়ে ফোন দিতে বললেন চিকিৎসার জন্য । খামারি সেজে আমি নিজেই ফোন দেই, দেখি তিনি কি বলেন । একই সমস্যার কথা বলে সমাধান চাইলাম, বললেন আয়রনের সমস্যা, এনটক্স দেন ২৪ ঘন্টা, ঠিক হয়ে যাবে। পরিচয় জানলাম, তিনি একজন খামারি।
আরেকজন খামারি তার মুরগির সমস্যার কথা লিখে গ্রুপে পোষ্ট দিয়েছেন, সমস্যাটা হলো মুরগির বয়স ২৩ দিন, ৯০০ মুরগির মাঝে ৫০-৬০ টা মুরগি মাথা উপর করে হা করে শ্বাস নিচ্ছে, কি করবেন । এই পোষ্টেও প্রায় ৫০ এর অধিক কমেন্ট ও সল্যুশন । কেউ বলছে ঠান্ডা লেগেছে, কেউ বলছে পেটে পানি জমেছে, কেউ বলছেন ফাঙ্গাসের সমস্যা আবার কেউ বলছেন রানীক্ষেত হতে পারে আর একদল তো ফ্রি তে চিকিৎসা দিয়েছেন – কেউ ব্রডিল, কেউ টাইলোডক্স, কেউ সিপ্রোসিন, আরেকজন টিলমোকসিন ও ডক্সিসাইক্লিন, অন্যজন পালমোকেয়ার, লিভোফ্লক্সাসিন, এমোক্সাসিলিন, নাপা, ক্যালিক্স, টু প্লাস দিতে বললেন, কেউবা আবার মাইক্রোনিডের সাথে ডক্সিভেট দিতে বললেন ।
একটা সমস্যার জন্য যদি এতগুলা সল্যুশন হয় তাহলে খামারির অবস্থা কি হতে পারে ভাবা যায় ! আমাদের দেশে খুবই অবাক করা বিষয় যে, ভেটেরিনারিয়ানগন যে পরিমান ফ্রি তে চিকিৎসা দেন তা অন্য কোন দেশে আছে কিনা সন্দেহ । এমনও হয়েছে যে নিজের ফার্ম দেখতে গিয়েছি অন্য ফিড ব্যবহার করা পাশের খামারি তার মুরগি দেখানোর জন্য দাঁড়িয়েছিলেন ঘন্টারও বেশি সময় । এমনটা অনেকের ক্ষেত্রেই ঘটে এবং ফ্রি তে চিকিৎসা দিচ্ছেন (কেউ কেউ স্বল্প ভিজিটে) এমন হাজার হাজার উদাহরণ দেওয়া যাবে । এছাড়া ফোনেও ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার ভালো সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন নিজের খামারকে ঝুঁকির মুখে ফেলছেন ?
মুরগির খাবার ছিটানোর অসংখ্য কারণ আছে, সত্যিকারের কারণ না জেনেই চিকিৎসা দেওয়াটা যেমন বোকামি তেমনি মুরগির প্রতি বড় ধরনের এক নিষ্ঠুরতা । মুখ হা করে শ্বাস নেওয়ার ক্ষেত্রেও একই কথা । এইসব ফেসবুক ডাক্তারদের থেকে সাবধান থাকা জরুরি । আমাদের স্মার্ট খামারি ভাইগন, আসুন আমরা শুধু ফেসবুকে পোষ্ট দেওয়ার মাধ্যমে স্মার্টনেস না দেখিয়ে নিজেদের কাজের মাধ্যমে আরোও বেশি স্মার্ট হই…
ডাঃ খালিদ হোসাইন সম্পাদক