বিলুপ্তির পথে বজেন্দ্র বর্মনের বকপাখির অভয়াশ্রম
প্রাণ ও প্রকৃতি
পরিচর্চা, সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দিনে দিনে হারিয়ে যেতে বসেছে শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বজেন্দ্র চন্দ্র বর্মনের বাড়ির বকপাখির অভয়াশ্রম।
জানা গেছে, দেশ স্বাধীনের পূর্ব থেকেই বজেন্দ্র চন্দ্র বর্মনের বাড়িতে বক পাখির এ অভয়াশ্রমটি গড়ে উঠে। নালিতাবাড়ী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে বাঘবের ইউনিয়নে বজেন্দ্র চন্দ্র বর্মনের বাড়িতে এ বকপাখির অভয়াশ্রমটি। শেরপুর জেলা সদর থেকে প্রায় ২৮ কিলোমিটার দূরে।
শতশত বক পাখি তাঁর বাড়ির বাঁশ ঝাড়ে অবস্থান করে। শুধু বক পাখিই নয়। বকপাখির পাশাপাশি অন্যান্য পাখিও ছিল এ অভয়াশ্রমে। এক সময় এসব পাখির কলকাকলীতে বজেন্দ্র চন্দ্র বর্মনের বাড়ি ও চারপাশ মুখরিত হয়ে উঠতো।
এসব পাখির অভয়ারণ্য দেখতে প্রতিদিন বহু দূর দুরান্ত থেকে শতশত মানুষের ভিড় জমে উঠতো ওই বাড়িতে। বজেন্দ্র চন্দ্র বর্মন বক পাখিগুলোকে নিজে পরিচর্চা করতেন। বকগুলো তার ঘরে নেমে এসেও আহার করতো। বজেন্দ্র চন্দ্র বর্মনের ইশারায় তার শরীরে এসে বসতো বক পাখিগুলো। তখন থেকেই বজেন্দ্র চন্দ্র বর্মনের বাড়িটি বক বাড়ি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
বছর কয়েক আগে বজেন্দ্র চন্দ্র বর্মনের মৃত্য হয়। তিনি মারা যাওয়ার পর থেকেই বিপর্যয়ের মুখে পরে পাখিগুলো। বর্তমানে বজেন্দ্র চন্দ্র বর্মনের ছেলে-মেয়ে নাতি নাতনীরা পরিচর্চা ও দেখাশুনা করলেও তা বজেন্দ্র বর্মনের সমতুল্য নয়। ফলে পরিচর্চা, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও পাখি শিকারীদের অত্যাচারে দিনে দিনে বকগুলো এখন প্রায় বিলপ্তির পথে।
বজেন্দ্র চন্দ্র বর্মনের ছেলে সতিন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, তারা সংখ্যালঘু হওয়ায় প্রতিবেশিরা অনেকেই তাদের কথা কর্ণপাত করেন না। তারা রাতের আধারে বাঁশ ঝাড়ে উঠে পাখিগুলোকে ধরে নিয়ে যায়। কাউকে কিছু বলতে গেলে শিকারীরা উল্টো তাদের উপর চড়াও হয়।
বজেন্দ্র চন্দ্র বর্মনের ছেলে সুকেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, পাখির অবস্থান ও পদচারণার কারণে তাদের বাঁশ ঝাড়টি বেড়ে উঠতে পারছে না। এতে বর্তমানে যে পরিমানে পাখি রয়েছে তার অবস্থানের ক্ষেত্রে স্থান সংকুলান হয়ে উঠছে না।
তিনি জানান, এখনও যে পরিমানের পাখি রয়েছে তা দেখার জন্য প্রতিদিন লোকজন ভিড় করে। বজেন্দ্র চন্দ্র বর্মনের ছেলে রমেশ চন্দ্র বর্মন জানান, বর্তমানে যে পরিমানের বক পাখি রয়েছে সরকারিভাবে রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে এখনও অভয়াশ্রমটি টিকিয়ে রাখা সম্ভব। বকগুলো আহার করতে গেলে আশপাশের শিকারীরা ধরে নিয়ে যায়।
আবার রাতের অন্ধকারে প্রতিবেশিরা বাঁশ ঝাড়ে উঠে ধরে নিয়ে যায়। তার মতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বকপাখির অভয়াশ্রমটি রক্ষার পাশাপাশি আরো বৃদ্ধি করাও সম্ভব। তিনি বলেন, পাখির অভয়াশ্রমটি টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আশ্বাসও পাওয়া গেলেও কোন কাজ হয়নি।