মাছ বিক্রি করে ‘হাফ মিলিয়নিয়ার’ ভৈরবের উদ্যোক্তা লামিয়া
মৎস্য
‘গুড ফুড’ নামের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে প্রতি মাসে লাখ টাকারও বেশি প্রসেসিং মাছ বিক্রি করেন কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার নারী উদ্যোক্তা লামিয়া চৈতি। শুধুই অনলাইনে না, বর্তমানে অফলাইনে কিংবা ফোন কলের মাধ্যমেও মাছ বিক্রি করছেন তিনি।
জানা যায়, রাতে মাছের আড়তে ঘুরে ঘুরে মাছ কেনা থেকে শুরু করে, কাটাকুটি, ওয়াশ করা, প্যাকেজিং, বক্স করা, গ্রাহকদের ঠিকানায় পাঠানো ইত্যাদি সব কাজেই তিনি নিজেই করেন। এসব কাজে বেশ কিছু নারীর কর্মসংস্থানও তৈরি হয়েছে।তাঁর কাজে সহায়তা করেন বাবা মিজানুর রহমান, বোন চিশতিয়া, ভাই সামি ও সাইফ। আট মাস আগে ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় লামিয়ার বিয়ে হয়। সুখের বিষয় হলো-স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়িসহ সেখানকার সবাই তাঁর এই কাজকে সমর্থন ও সহযোগিতা করছেন। বিশেষ করে স্বামী আজফার উল আলমের অনুপ্রেরণা এখন যেন তাঁর সব সময়ের সঙ্গী।
লামিয়া চৈতি ফেসবুকে নারী উদ্যোক্তাদের প্ল্যাটফর্ম উইম্যান অ্যান্ড ই-কমার্সের (উই) একজন হাফ মিলিয়নিয়ার। সম্প্রতি তিনি এই ফোরামের কিশোরগঞ্জ জেলার সহ-প্রতিনিধি মনোনীত হয়েছেন।
প্রক্রিয়াজাতকরণ করে বিক্রি ছাড়াও লামিয়া মাছ দিয়ে বিভিন্ন খাবার তৈরি করে বিক্রির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। ভবিষ্যতে ফিস বল, ফিস সসেস, ফিস রোল, ফিস মিনস, ফিস ফ্রাই, ফিস আচার, ফিস কেক ইত্যাদি তৈরি করে বিক্রি করার চিন্তা করছেন। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটি ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রামের (এনএটিপি-২) আওতায় লামিয়াকে তিন লাখ টাকা অনুদানের জন্য প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে।
লামিয়া চৈতি জানান, ‘দেশব্যাপী ভৈরবসহ হাওরাঞ্চলের মিঠাপানির মাছের সুনাম রয়েছে। বিভিন্ন এলাকার লোকজন এই অঞ্চলের মাছের স্বাদ নিতে মুখিয়ে থাকেন। অনেকেই ভৈরবে অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মাছের আড়তে ছুটে আসেন মাছের জন্য। আর যারা আসতে পারেন না, তাঁরা থাকেন আক্ষেপ নিয়ে। সেই ভাবনা থেকেই আমি প্রসেসিং মাছের ব্যবসা শুরু করি।’
বর্তমানে লামিয়ার মাছ যাচ্ছে ভৈরবসহ ব্রাক্ষণবাড়িয়া, কক্সবাজার, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায়। এক লাখ টাকার মাছ বিক্রিতে তাঁর বেশ ভালো মুনাফা হয় বলে জানান তিনি। মাছের সঙ্গে তিনি বর্তমানে যোগ করেছেন রেডি টু কুক হাঁস এবং কবুতরের মাংস। যার মাসিক গড় বিক্রি হচ্ছে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। শতকরা ১০ টাকা লাভে তিনি ভোক্তার বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন এই দুই প্রকারের মাংস।
ভৈরব উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. লতিফুর রহমান জানান, ‘লামিয়া চৈতি অনেকদিন ধরে অনলাইনে প্রসেসিং মাছের ব্যবসা করছেন সফলতার সঙ্গে। মাছের চাহিদা বাড়াতে তাঁর মাধ্যমে আমরা মাছের তৈরি বিভিন্ন খাবার তৈরির একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। সেজন্য আমরা তাঁকে তিন লাখ টাকা অনুদানের জন্য প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি।’