১০:২০ পূর্বাহ্ন

রবিবার, ২২ ডিসেম্বর , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
  • হোম
  • রাজশাহীতে সর্বস্বান্ত হয়ে ৬০ ভাগ ডিম উৎপাদনকারী খামার বন্ধ
ads
প্রকাশ : মে ১, ২০২১ ১০:৪৮ পূর্বাহ্ন
রাজশাহীতে সর্বস্বান্ত হয়ে ৬০ ভাগ ডিম উৎপাদনকারী খামার বন্ধ
পোলট্রি

চরম দুঃসময় অতিক্রম করছেন রাজশাহীতে মুরগির ডিম উৎপাদনকারী খামারিরা। অস্বাভাবিকভাবে কমেছে ডিমের দাম। সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে ডিমের দাম সর্বনিম্ন।

বেড়েছে মুরগির খাবারের দাম। ফলে উঠছে না উৎপাদন ব্যয়। পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে ডিমপাড়া মুরগি। ইতোমধ্যে খামারগুলোর অর্ধেকেরও বেশি মুরগি মরে গেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সর্বাত্মক লকডাউন। ফলে মাত্র মাস দুয়েকের মধ্যে রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠ এবং জেলার শতকরা ৬০ ভাগ ডিম উৎপাদনকারী খামার বন্ধ হয়ে গেছে। এতে খামারিরা হারিয়েছেন কয়েকশ কোটি টাকার বিনিয়োগ।

পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন রাজশাহী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক জানান, চার মাস আগেও রাজশাহীতে মুরগির ডিম উৎপাদনকারী লেয়ার মুরগির খামার ছিল দুই হাজার। এসব খামারে মুরগির সংখ্যা ছিল প্রায় ২০ লাখ। গত ডিসেম্বর থেকে ধারাবাহিকভাবে মুরগির ডিমের দামে ধস নেমেছে। ডিমপ্রতি এক থেকে দেড় টাকা দাম কমেছে। তার ওপর নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে মুরগি। ফলে ইতোমধ্যে অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে।

রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠ খড়খড়ি এলাকার খামারি আবদুল হামিম বলেন, পুঠিয়া উপজেলা সদরে আমার একটি লেয়ার মুরগির খামার ছিল। খামারে ডিমপাড়া মুরগি ছিল প্রায় নয় হাজার। খামার তৈরিতে অবকাঠামোগত ব্যয়সহ খরচ হয়েছে প্রায় ৪৮ লাখ টাকা। কিন্তু গত কয়েক মাস থেকে ডিমের দাম পড়ে গেছে। এছাড়া নানা ধরনের রোগে মরে গেছে প্রায় তিন হাজার মুরগি। সর্বশেষ ১৫ এপ্রিল মাত্র ২২ লাখ টাকায় এক ব্যক্তির কাছে খামারটি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছি। ফলে আমার লোকসান হয়েছে ২৬ লাখ টাকা। ডিম উৎপাদনকারী লেয়ার খামার করে এখন আমি চোখে সর্ষের ফুল দেখছি।

জেলার পবা উপজেলার হরিয়ান ইউপির মল্লিকপুর গ্রামের লেয়ার মুরগির বড় খামারি রেজাউল করিম বলেন, আমার খামারে চার মাস আগেও ১৩ হাজার মুরগি ছিল। গত দুই মাসে রানীখেত রোগ এবং সালমোনিলা জীবাণুতে আক্রান্ত হয়ে চার হাজার মুরগি মরে গেছে। এসব রোগ হলে মুরগির খাওয়া কমে যায়, পাতলা পায়খানা হয় এবং ডিম পাড়া বন্ধ করে দেয়। একপর্যায়ে ওজন কমে মুরগি মারা যায়। কিছু মুরগি বিক্রি করেছি। এখন খামারে মাত্র দেড় হাজার মুরগি রয়েছে।

তিনি বলেন, খামার তৈরি খরচ বাদ দিয়ে বাচ্চা থেকে ডিমপাড়া পর্যন্ত এক হাজার মুরগির জন্য ব্যয় হয় ৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে শুধু খাবারই লাগে চার লাখ টাকা। এছাড়া রয়েছে ওষুধ, শ্রমিক এবং বিদ্যুৎ বিলসহ আনুষঙ্গিক খরচ। বর্তমানে সাদা ডিম আমরা আড়তদারদের কাছে সাড়ে চার থেকে চার টাকা ৭০ পয়সায় বিক্রি করছি। আর লাল ডিমের দাম সাড়ে পাঁচ থেকে পাঁচ টাকা ৬০ পয়সা। প্রতিটি সাদা ডিমে সাড়ে পাঁচ টাকা এবং লাল ডিমে সাড়ে ছয় টাকা উৎপাদন ব্যয় হয়। ফলে প্রতিটি সাদা এবং লাল ডিমে আমাদের এক টাকার বেশি লোকসান হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমার প্রায় ২০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। বর্তমানে যে অবস্থা, তাতে অচিরেই খামার বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছি।

রাজশাহীর পবা উপজেলার খোলাবোনা এলাকার আরেক খামারি জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমার খামারে সাড়ে পাঁচ হাজার ডিমপাড়া মুরগি ছিল। মাইকোপ্লাজমা রোগে নাক-মুখ ফুলে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যায় প্রায় তিন হাজার মুরগি মরে গেছে। ডিমের দাম পড়ে যাওয়ায় বাকি মুরগিও বিক্রি করে দিয়েছি। খাবারের দোকানে এখন আমার ঋণ আছে সাড়ে চার লাখ টাকা। ফলে একরকম বাধ্য হয়েই খামার বন্ধ করে দিয়েছি।

জেলার বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভা সদরের মুরগির খামারি মুরসালিন আলী জানান, তার খামারে ডিমপাড়া মুরগি ছিল সাড়ে আট হাজার। ইতোমধ্যে বিভিন্ন রোগে দেড় হাজার মুরগি মারা গেছে। বেড়েছে মুরগির খাবারের দাম। খাবারের ডিলারের কাছে সাড়ে সাত লাখ টাকা ঋণ হয়েছে। ফলে এখন খামার বন্ধ না করলে বড় লোকসানের মুখোমুখি হতে হবে।

শুক্রবার সকালে মহানগরীর মাস্টারপাড়া এলাকার বড় ডিম ব্যবসায়ী আলহাজ জলিল মিয়ার আড়তে গিয়ে দেখা গেছে, একশ লাল ডিম সাড়ে পাঁচশ টাকা এবং সাদা ডিম ৪৬০ টাকা দামে খামারিদের কাছ থেকে কিনছেন। আর তিনি খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে লাল ছয়শ এবং সাদা ডিম পাঁচশ টাকা করে বিক্রি করছেন। তিনি জানান, এক মাস আগেও একশ লাল এবং সাদা ডিমের দাম একশ থেকে ১৩০ টাকা বেশি ছিল। তবে দোকানে খুচরা ব্যবসায়ীরা হালি প্রতি লাল ডিম ২৮ টাকা এবং সাদা ডিম ২৫ টাকা দামে বিক্রি করছেন।

এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. ইসমাইল হক বলেন, বর্তমানে লকডাউন এবং রমজানের কারণে পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ যাচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে মুরগি মারা যাচ্ছে। তবে আমরা খামারিদের পরামর্শ দিচ্ছে। খামারিরা বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারলে এ সংকট থাকবে না বলে আমরা মনে করি।সূত্র: যুগান্তর

শেয়ার করুন

ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop