লালমনিরহাটে প্রথমবারের মতো চাষ হচ্ছে সুপারফুড ‘চিয়া বীজ’
কৃষি বিভাগ
প্রথমবারের মতো লালমনিরহাটে চাষ হচ্ছে সুপারফুড চিয়া বীজ। আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলার ৯ কৃষক ২১৩ শতাংশ জমিতে চিয়া বীজ চাষ করেছেন। আশানুরূপ ফলনের প্রত্যাশা করছেন তারা।
আদিতমারী উপজেলার জামুরটারী গ্রামের কৃষক আবু ফরহাদ জানান, কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিনি এই নতুন ফসল ১১ শতাংশ জমিতে চাষ করেছেন। কৃষি বিভাগ বীজ সরবরাহ করেছে এবং চাষ পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়েছে।
‘এর আগে এই ফসল কোনোদিন দেখিনি। কৃষি বিভাগ থেকে জেনেছি, এই ফসল মানব শরীরের জন্য খুবই উপকারী। বাজারে এই ফসলের মূল্য অনেক বেশি। ভালো ফলন ও বাজার সুবিধা পেলে আগামীতে আরও বেশি জমিতে এই ফসল চাষ করব’, বলেন তিনি।
কালীগঞ্জ উপজেলার হরবানিনগর গ্রামের কৃষক মোজাম্মেল হক জানান, কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিনি ৩৩ শতাংশ জমিতে চিয়া বীজ চাষ করেছেন। আশানুরূপ ফল পাবেন বলে প্রত্যাশা করছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘চিয়া বীজ হলো সুপারফুড। উৎপাদিত চিয়া বীজ আমি নিজে খাব এবং বিক্রিও করব। বাজার সুবিধা পেলে কৃষকরা লাভবান হবেন। ফলে তারা আগামীতে আরও বেশি জমিতে এই বীজ চাষে আগ্রহ পাবেন।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চিয়া বীজ মধ্য আমেরিকার একটি উদ্ভিদ। পুদিনার একটি প্রজাতি। বিভিন্ন পোষক পদার্থের উপস্থিতির জন্য এটিকে সুপারফুড বলা হয়। প্রতি বিঘা জমিতে চিয়া বীজ উৎপাদন করতে খরচ হয় ১২-১৫ হাজার টাকা। বীজ উৎপাদন হয় ৭০-৮০ কেজি। প্রতি কেজি বীজ বিক্রি হয় ৭০০-১০০০ টাকা দরে। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে চিয়া বীজ বপন করতে হয়। ফলন ঘরে তোলা যায় মার্চের শেষ থেকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। চিয়া বীজ উৎপাদনে জৈবসারের ব্যবহার বেশি করতে হয়।
বিভিন্ন গবেষণার সূত্র উল্লেখ করে কৃষি বিভাগ জানায়, শর্করা, ফাইবার, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাসসহ একাধিক খনিজ পদার্থ রয়েছে চিয়া বীজে।
এ ছাড়া, একাধিক ভিটামিন ও প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট রয়েছে চিয়া বীজে। রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডও। ফলে শরীরে পাচনতন্ত্র ও মেটাবলিজমের জন্য অত্যন্ত উপকারী চিয়া বীজ।
চিয়া বীজে ফাইবারের পরিমাণ থাকে অনেক। প্রয়োজনীয় ফাইবার পাওয়া যায় এই বীজ থেকে। ফাইবারের প্রাধান্যের কারণে হজম প্রক্রিয়া ভালো থাকে।
চিয়া বীজ পাচন প্রক্রিয়া ঠিক রাখায় কমতে পারে ওজনও। এ ছাড়াও, শরীরে অতিরিক্ত চর্বি কমাতেও সহায়ক। চিয়া বীজ খেলে শরীরে কোলেস্টেরলের সমস্যা কমে। রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এই বীজ।
ফল বা দইয়ের মতো বিভিন্ন ধরনের খাবারের সঙ্গে খেতে হয় এই বীজ। পানিতে ভিজিয়ে রেখেও খাওয়া যায়। শরবতে ব্যবহার করা যায়। লেবুর রসের সঙ্গে বা দুগ্ধজাত পদার্থের সঙ্গে মিশিয়েও খাওয়া যায়।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামীম আশরাফ জানান, ‘লালমনিরহাটের মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আশানুরূপ চিয়া বীজ উৎপাদনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। প্রথমবারের মতো এই বীজ উৎপন্ন হচ্ছে জেলায়। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে এবং সহযোগিতা করা হচ্ছে। আগামীতে আরও বেশি কৃষককে চিয়া বীজ উৎপাদনে আগ্রহী করা হবে।’