সাইলেজ তৈরির এ টু জেড
কৃষি গবেষনা
সাইলেজ কি?
বায়ুশূন্য অবস্থায় সবুজ ঘাসকে ভবিষ্যতের জন্য প্রক্রিয়াজাত করে রাখার প্রক্রিয়াকে সাইলেজ বলা হয়।
সাইলেজ কেন করা প্রয়োজন?
বর্ষা মৌসুমে সবুজ ঘাসে ময়েশচ্যার বেশি থাকার কারনে শুকাতে সমস্যা হয়, আর শুকানো হলে পুষ্টিমান কমে যায়। তাই সারাবছর সঠিক পুষ্টিমান সমৃদ্ধ ঘাস গরুকে খাওয়াতে সাইলেজ হতে পারে উত্তম প্রক্রিয়া। কাঁচা ঘাসের তুলনায় এই প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করে রাখা ঘাসের গুনগত ও খাদ্যমান বেশি। সাইলেজ প্রক্রিয়ায় ঘাস ১২ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখা যায়।
কোন কোন ঘাস সাইলেজ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করা যায়?
বর্ষামৌসুমে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়; দেশীয় ঘাস যেমন দুর্বা, বাকসা, আরাইল, সেচি, দল ইত্যাদি।
গাছের পাতা যেমনঃ ধৈঞ্চা, ইপিল-ইপিল জমিতে চাষ করা উন্নত জাতের ঘাস যেমনঃ নেপিয়ার, পাকচং, জার্মান, ভূট্টা, সুদান, পারা, সরগম ইত্যাদি।
★ সাইলেজ তৈরিঃ
ধাপ-১ঃ ঘাস সংগ্রহ
ফুল আসার আগে একই পরিপক্বতার ঘাসগুলো কেটে নিতে হবে।
সবুজ ঘাসের মধ্যে সবচেয়ে ভালো সাইলেজ হয় ভুট্টার। কারন এই সাইলেজে কান্ড, পাতার সাথে ভুট্টাও থাকে যার ফলে দানাদার খাদ্যের চাহিদাও অনেকটায় পূরণ হয়। এজন্য আধা কাঁচা ভু্ট্টা থাকার সময় সংগ্রহ করা ভালো।
ধাপ-২ঃ ঘাস শুকিয়ে নেওয়া
ঘাসগুলোকে একদিন রোদে শুকিয়ে নিতে হবে যেন ভেজাভাবটা না থাকে। নেপিয়ার ঘাস কাটার পর এতে Dry Matter(DM) থাকে ১৫-২০%। একদিন রোদে শুকানো হলে তা ৩০% এর কাছাকাছি হয়। যা সাইলেজ তৈরির জন্য উপযুক্ত।
অন্যদিকে গাছের পাতা কিংবা আগাছা ৪ঘন্টা রোদে শুকিয়ে নিলেই ৩০% DM থাকে।
ড্রাই ম্যাটার-৩০% আছে যেভাবে বুঝবেনঃ
• কান্ডটি আর্দ্র কিন্তু ভেজা না।
• হাতে নিয়ে চাপ দিলে আগের অবস্থানে যাবে না।
ধাপ-৩ঃ ঘাস ছোট ছোট টুকরো করে নেওয়া
১-৩ ইঞ্চি পরিমাণ করে কেটে নিতে হবে। বেশিপরিমাণে কাটার জন্য বাজারে মেশিন আছে যাকে ‘চপ কাটার’ বলে।
ধাপ-৪ঃ ফার্মেন্টেশন বা গাঁজন প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করার জন্য চিনি জাতীয় উপাদান যুক্ত করতে হবে। এজন্য লালিগুড় বা মোলাসেস ব্যবহার করা যেতে পারে। তাছাড়া লাল চিনিও ব্যবহার করা যায়। (বিঃদ্রঃ ভুট্টা, জার্মান ঘাসে পর্যাপ্ত পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট থাকার কারনে মোলাসেস প্রয়োগ করার প্রয়োজন পড়ে না)
প্রতি ১০০ কেজি ঘাসের জন্য ২-৩% বা ২-৩ কেজি মোলাসেস প্রয়োগ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মোলাসেসের সাথে একই পরিমাণ পানি যুক্ত করতে হবে। কিভাবে প্রয়োগ করতে হবে তা (ধাপ-৫) এ পাবেন।
ধাপ-৫ঃ এবার সংরক্ষণের জন্য সিলো বা পাত্র ঠিক করতে হবে।
এজন্য প্লাস্টিক ব্যাগ বা বস্তা, ড্রাম ব্যবহার করা যায়। তাছাড়া মাটিতে পুঁতেও সংরক্ষণ করা যায়।
প্লাস্টিক ব্যাগ, ড্রামে সংরক্ষণঃ
• ব্যাগটি যেন কোনোরকম ছেঁড়া না হয়।
প্রথমে মোলাসেস এবং পানি মিশ্রিত দ্রবণের অর্ধেক পরিমাণ ঘাসে প্রয়োগ করতে হবে।
তারপর সেই ঘাস ব্যাগে কয়েকধাপে ভরতে হবে। এক ধাপ ভরার পর ভালোভাবে চাপ দিতে হবে যেন ঘাসগুলোর মাঝে ফাঁকা না থাকে, ফাঁকা থাকলে সেখানে বাতাস থেকে যাবে, যার ফলে সাইলেজ ভালো না হওয়ার ধরুন বেশিদিন ঠিক থাকবে না।
• তারপর মোলাসেস মিশ্রিত পানি আবার খানিকটা প্রয়োগ করতে হবে।এভাবে কয়েকধাপে ব্যাগ কিংবা ড্রামে ভালোভাবে ভরে শক্তভাবে মুখ বন্ধ করে রাখতে হবে যেন বাতাস প্রবেশ না করতে হবে।
মাটিতে পুঁতে সংরক্ষণঃ
• এ পদ্ধতিতে সংরক্ষণের জন্য উঁচু স্থান নির্বাচন করতে হবে।
• প্রয়োজনীয় পরিমাণ গর্ত করে পলিথিন দিয়ে দিতে হবে।
• কয়েকধাপে সমপরিমাণে মোলাসেস এবং পানি মিশ্রিত ঘাস বিছিয়ে দিয়ে আবার মোলাসেস মিশ্রিত পানি প্রয়োগ করতে হবে।
• পা দিয়ে ভালোভাবে চাপ দিয়ে কম্পেক্ট করতে হবে।
তারপর উপরে আবার পলিথিন দিয়ে শক্ত করে বেঁধে মাটি চাপা দিতে হবে।
ধাপ-৬ঃ উক্ত প্রক্রিয়াটি ১-২ দিনের মাঝে শেষ করতে হবে।
সাইলেজ আরো পুষ্টিসমৃদ্ধ করার জন্য পোল্ট্রির জন্য ব্যবহৃত লিটার, অব্যবহৃত কলা, কলার খোসা, মিষ্টি আলু, আখের খোসা ও যুক্ত করা যায়।
ভালোভাবে সাইলেজ তৈরি করলে সর্বোচ্চ ১০-১২ বছর সংরক্ষণ করা যায় এবং পুষ্টিগুণাগুণ অক্ষুণ্ণ থাকে।
★ সাইলেজ প্রস্তুতের পূর্বে ঠিক করতে হবে কতগুলো গবাদিপশুকে কতদিনের জন্য দৈনিক কত কেজি করে খাওয়ানো হবে। তারপর জায়গার মাপ নির্ধারণ করতে হবে।
মোঃ রকিবুল ইসলাম
শিক্ষার্থী, ব্যাচেলর অব ভেটেরিনারি সাইন্স এ্যান্ড এনিম্যাল হাসব্যান্ড্রি,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ