সিভাসুতে প্রথমবারের মতো ইন্টার্ন শিক্ষার্থীদের পেশাগত দক্ষতা বিষয়ক কর্মশালা
ক্যাম্পাস
সিভাসুতে বর্তমানে ইন্টার্নরত ভেটেরিনারি শিক্ষার্থীদের জন্যে পেশাগত দক্ষতা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের উপর গত ২৮ মে থেকে ৮ জুন, ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত ১০ দিনব্যাপী একটি কর্মশালা আয়োজন করে। ইউনিভার্সিটি অব্ব্রিস্টল (ইউকে) এবং সেন্ট জর্জেস ইউনিভার্সিটি (গ্রেনাডা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ) এর সমন্বয়ে সিভাসু এই কর্মশালাটি আয়োজন করে। এতে অংশগ্রহণ করে সিভাসুর ইন্টার্নরত ৩০ জন শিক্ষার্থী।
ডিভিএম ডিগ্রী লাভের পর একজন ভেটেরিনারিয়ানের কর্মজীবনের শুরুতে যে যে পেশাগত দক্ষতার অভাবে কর্মক্ষেত্রে নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয় সেই বিষয়গুলো একটি গুণগত গবেষণালব্ধ ফলাফলের মাধ্যমে নির্ণয় করা হয় এবং সেই অনুযায়ী এই কর্মশালাটির আয়োজন করা হয়।১৫ জন করে মোট দুইটি দল গঠন করে ১০দিনের (৫দিন, প্রতি দল) জন্যে এই কর্মশালাটির পরিকল্পনা করা হয়। এই কর্মশালায় প্রাধান্য দেয়া হয়, স্নাতক ডিগ্রী লাভের পর একজন ভেটেরিনারিয়ানের জন্যে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কাজ করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো।কর্মশালার প্রথম দিনে সিভি (জীবন বৃত্তান্ত) প্রস্তুত, কভার লেটার (পরিচিতি পত্র), মোটিভেশনাল লেটার (অনুপ্রেরণা পত্র) প্রস্তুত এবং ইন্টার্নশিপের দীর্ঘসময়টিকে একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি কাঙ্ক্ষিত চাকরির পরীক্ষার জন্যে প্রস্তুতি গ্রহণের ক্ষেত্রে সময়কে সামঞ্জস্য করার বিষয়ে একটি প্রেক্টিক্যাল পর্ব রাখা হয়। দ্বিতীয় দিনে সরকারি চাকরি পরীক্ষার জন্যে কার্যকরী প্রস্তুতি পরিকল্পনা বিষয়ে একটি আলোচনা পর্ব সংযোজন করা হয়।কর্মশালার তৃতীয় দিনে সরকারি ও বেসরকারি কর্মক্ষেত্রে ভেটেরিনারিয়ানের নৈতিক আচরণ বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়। পরিকল্পনার চতুর্থ দিনে ইভিডেন্স বেইসড ভেটেরিনারি মেডিসিন (প্রমাণ ভিত্তিক ভেটেরিনারি মেডিসিন) গুরুত্ব এবং প্রয়োগ বিষয়ে আলোচনা রাখা হয়। সপ্তাহের শেষ দিনে ভেটেরিনারিয়ান হিসেবে খামারির সাথে কার্যকরী ব্যবহার এবং উদ্যোক্তা হবার বিভিন্ন দিকগুলো আলোচনা করা হয়।
পেশাগত দক্ষতা কার্যক্রম এর সমন্বয়ক অধ্যাপক মোঃ আহসানুল হক এর তত্ত্বাবধানে, প্রকল্পটির গবেষণা সহায়ক ডা. আবদুল্লাহ আল সাত্তার সহ ভেটেরিনারি ইপিডেমিওলজি বিষয়ে মাস্টার্সরতশিক্ষার্থীদের সহায়তায় প্রতি দলের জন্যে এই পর্বগুলো পরিচালনা করা হয়। কার্যক্রমটির বিভিন্ন বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টল থেকে অধ্যাপক সারাহ বেইলি এবং সেন্ট জর্জেস ইউনিভার্সিটি থেকে সহযোগী অধ্যাপক
টালিয়া গুটিন সহযোগীতা করেন।
২-সপ্তাহব্যাপী প্রশিক্ষণের বিভিন্ন পর্বে রিসোর্স পার্সনের দায়িত্বে ছিলেন সিভাসু থেকে অধ্যাপক আব্দুল আহাদ, অধ্যাপক মোহাম্মদ রাশেদুল আলম, অধ্যাপক মোঃ মিজানুর রহমান, অধ্যাপক আমির হোসেন সৈকত, সহযোগী অধ্যাপক মাহবুব আলম, সহযোগী অধ্যাপক আহাদুজ্জামান, সহকারী অধ্যাপক এস. এম. মোকাদ্দেস আহমেদ দিপু, সহকারী অধ্যাপক সাজেদা আক্তার এবং সহকারী অধ্যাপক রিদোয়ান পাশা।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে রিসোর্স পার্সন হিসেবে ছিলেন ডা. ফরহাদ হোসেইন (সাবেক পরিচালক, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর), ডা. রুমন তালুকদার (উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা), ডা. সেতু ভূষণ দাশ (উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা), ডা. মোঃ ইবরাহিম খলিল (বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা), ডা. অজয় দেবনাথ (ভেটেরিনারি সার্জন) এবং ডা. মোঃ আব্দুল কাদের (ভেটেরিনারি সার্জন)। বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন পর্বে রিসোর্স পার্সন হিসেবে যুক্ত ছিলেন ডা. আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম (সহকারী মহাব্যবস্থাপক, কাজী ফার্ম লিমিটেড), ডা. সজীব দেবনাথ (প্রতিষ্ঠাতা, স্কাইটেক এগ্রোফার্মা), ড. রুবাইয়াত বিনতে হাসান (কনসালটেন্ট, ইউনিসেফ, মিয়ানমার), ডা. সাদ্দাম হোসেন (প্রধান কার্যনিবাহী কর্মকর্তা, বার্ড এন্ড পেট এনিম্যাল ক্লিনিক)এবং ডা. পার্থ সামন্ত (প্রধান কার্যনিবাহী কর্মকর্তা, এন্টিটি)।
কর্মশালার শেষ দিনে সমাপনী অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট ও পুরষ্কার প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানটিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক এ.এস.এম লুত্ফুল আহসান, উপাচার্য, সিভাসু। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক এ.কে.এম. সাইফুদ্দিন, পরিচালক, বহিঃর্বিভাগ, অধ্যাপক গউজ মিঞা, পরিচালক, আইকিউএসি (ইন্টার্নাল কোয়ালিটি এসিউরেন্স সেল) এবং ডা. ফরহাদ হোসেইন, সাবেক পরিচালক, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।আরোও উপস্থিত ছিলেন অন্যান্য বিভাগীয় প্রধানবৃন্দ ও সদস্যবৃন্দ, রিসোর্স পার্সন, কোর্সটিতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং এপি-মাস্টার্স ফেলো।অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ লুত্ফর রহমান, ডিন, ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক এ. এস. এম লুত্ফুল আহসান পেশাগত দক্ষতা কার্যক্রমটির জন্যে প্রয়োজনীয় চাহিদা গুলো পূরণের লক্ষ্যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন এবং তিনি একটা শিক্ষা বিষয়ক গবেষণা প্রস্তাব (অর্থনৈতিক সহায়তা সাপেক্ষে) পাশের প্রতিশ্রুতি দেন।তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “কেবল চাকরি না খুঁজে, চাকরিদাতাও হতেহবে। শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে হবে।শিক্ষার্থীদের লিডারশিপ গুণাবলি তৈরি করা অতীব জরুরি।”
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে, ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ লুত্ফর রহমান বলেন, “ভেটেরিনারি শিক্ষার্থীদের ব্যস্ত একাডেমিক সময়ের উপযুক্ত বিষয় বা সময় নির্ধারণ করে, এই পেশাগত দক্ষতা ভিত্তিক বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে, কেননা বর্তমান যুগে চাকরি পাবার ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থীকে একাডেমিক দক্ষতার পাশাপাশি পেশাগত দক্ষতা থাকাওজরুরি।”
ইন্টার্ন ভেটেরিনারি শিক্ষার্থীদের মতে, মাঠপর্যায়ে কাজে নামার পূর্বে পেশাগত দক্ষতাভিত্তিক কোর্স বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এধরনের কার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে চালু করা হলে, তাদের এবং পরবর্তী ভেটেরিনারি প্রজন্মের জন্যে কর্মক্ষেত্রে আরো সফলতার সাথে কাজ করা সম্ভব হবে।