সিভাসুর উপাচার্য হতে হবে সিভাসু থেকেই- সহমত জানালো সিভাসু এলামনাই
ক্যাম্পাস
জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত দ্বিতীয় স্বাধীনতায় দেশের জীর্ণতা সংস্কারের এই বিশেষ সময়টিতে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও শুরু হয়েছে সংস্কার আয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কাঠামোতে পরিবর্তন আনয়নের লক্ষ্যে উপাচার্য পরিবর্তন হয়। উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং কর্মচারীবৃন্দের চাহিদা মোতাবেক চার বছর মেয়াদে উপাচার্য মহোদয়গণ নিয়োগ পান।
তারই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) – এও নব্য উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে উত্ফুল্লতা পরিলক্ষিত হয়। যেই আনন্দে ভাটা পড়ে, যখন সিভাসু শিক্ষার্থী সমাজে খবর পৌঁছে প্রাণের ক্যাম্পাসে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাবেন অন্য কোনো কৃষি বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
দীর্ঘ বছর অনিয়ম শেষে শিক্ষার্থীদের মনে যখন বিশ্ববিদ্যালয়কে ঢেলে সাজানোর স্বপ্ন জাগে, সেই সময়ে এধরনের সংবাদ তাদের মাথায় বাজ পড়ার চেয়ে কিছুটা কম নয়। এই প্রধান তিনটি অনুষদ নিয়ে চলমান এই বিশ্ববিদ্যালয়টির হাজারো শিক্ষার্থী উচ্চতর (মাস্টার্স∕পিএইচডি∕পোস্টডক) গবেষণার স্বার্থে বিদেশে অধ্যয়ন করছেন। প্রতিবছরই বিভিন্ন অনুষদের বিভিন্ন সেমিস্টারের শিক্ষার্থীরা দেশের অভ্যন্তরে ও বাহিরে ইন্টার্নশিপ এবং এক্সটার্নশিপের সুযোগ পেয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে আধুনিক সুবিধা সমেত একটি ভেটেরিনারি হাসপাতাল, যেখানে প্রতিদিন সুলভমূল্যে বিভিন্ন পোষাপ্রাণী ও গবাদি পশুর উন্নত চিকিত্সা প্রদান করা হয়। রয়েছে প্রাণীদের জন্যে আল্ট্রাসনোগ্রাফী, এক্স-রে সহ নানা ধরনের আধুনিক ল্যাব-টেস্ট সুবিধা। ৭-একরের ছোট্ট ক্যাম্পাসটিতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে উন্নতমানে গ্র্যাজুয়েট তৈরী করার অদম্য প্রচেষ্টা করছেন।
ফ্যাসিবাদের দীর্ঘসময়ে অনেক শিক্ষকই শিকল ভেঙ্গে মুক্তচিন্তা করার অবকাশ পাননি। শিক্ষার্থীরা পারেনি নিজের বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজের মতো করে পেতে। সংস্কারের এই মুহুর্তে শিক্ষার্থীরা চান তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো যোগ্য শিক্ষক তাদের উপাচার্য হবেন, যিনি স্বপ্ন দেখবেন সিভাসুকে বিশ্ব রেঙ্কিং এ উন্নীত করার, উন্নত ক্যান্টিন, লাইব্রেরি এবং আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাক্ষেত্র তৈরী করার। যিনি হবেন ফ্যাসিবাদ বিরোধী। যার প্রশাসনিক পারদর্শিতায় শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা এবং যোগ্য করে তোলার নানা প্রক্রিয়া প্রস্ফূটিত হবে। এবং শিক্ষার্থীরা ভাবেন, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক দিয়ে এই সম্ভাবনাময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাবনাগুলোকে আলোকিত করা সম্ভব নয়। নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকই যথাযথ কার্যকরী ভূমিকা নিয়ে তাদের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারেন।
একজন সিভাসু এলামনাই জানান, “আমরা সকল শিক্ষককে সম্মান করি। তবে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে উপাচার্য করে পাবার অভিজ্ঞতা সিভাসু’র রয়েছে। এবং তা সুখকর অভিজ্ঞতা ছিলো না।” তারা আরো জানান. সিভাসুতে ৬৭ জন শিক্ষকের মাঝে ১২জন-ই গ্রেড-১ পর্যায়ের।
পরিশেষে, শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তারা অত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মানসম্মত ও একাগ্রতাসম্পন্ন উপাচার্য না পাওয়া অবধি তাদের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখবেন। ৪ অক্টোবর সিভাসুর কনফারেন্স কক্ষে এক আলোচনা সভায়, শিক্ষার্থীদের এই সিদ্ধান্তের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন সিভাসু এলামনাই। এর পূর্বে ৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারীবৃন্দ শিক্ষার্থীদের সাথে একমত প্রকাশ করেন।
শিক্ষার্থীদের কর্মসূচীতে রয়েছে ঢাকায় ঊর্ধ্বতন বিভাগে সরাসরি স্মারকলিপি প্রদান, মশাল মিছিল, কালো পতাকা ও ব্যাজ ধারণ সহ বিক্ষোভ সমাবেশ।