হলুদ ও সবুজ রঙের স্কোয়াশ ফলনে খুশি কৃষক
এগ্রিবিজনেস
হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার ভুলকোট গ্রাম। এই গ্রামের সড়কের পাশ দিয়ে যাতায়াতকালে তাকালেই নজর আটকে যাবে। মাত্র ১৫ শতক জমিতে সবুজ ও হলুদ রঙের স্কোয়াশের বাম্পার ফলন হয়েছে।
স্থানীয় কৃষক সানু মিয়া স্কোয়াশের চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে চলতি বছর তিনি এ সবজি চাষ করেছেন। ব্যয় হয়েছে প্রায় ৮ হাজার টাকা। ৯০ থেকে ১ লাখ টাকা বিক্রি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সানু মিয়া বলেন, গত বছর একই জমিতে আমি সবুজ রঙের স্কোয়াশ চাষ করে লাভবান হয়েছিলাম। তাই চলতি মৌসুমে দুই রঙের স্কোয়াশ চাষ করেছি। ফলন ভালো দেখে এলাকার অন্য চাষিরা এই সবজি চাষে আগ্রহী হয়েছেন। ক্ষেত ভরা স্কোয়াশ দেখলে মনটা আনন্দে ভরে ওঠে। ইতোমধ্যে বিক্রি শুরু হয়েছে।
অক্টোবর মাসে বীজ বপন করা হয়েছে। চারা লাগানো থেকে শুরু করে ফল সংগ্রহ পর্যন্ত জমি সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে। পরাগায়নের ১০-১৫ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করতে হয়। তখনও ফলে সবুজ রঙ থাকবে এবং ফল মসৃণ ও উজ্জ্বল দেখাবে। আর হলুদ রঙেরটাও শুরু থেকেই হলুদ হয়। নখ দিয়ে ফলের গায়ে চাপ দিলে নখ সহজেই ভেতরে ঢুকে যাবে। চোরের হাত থেকে রক্ষায় ক্ষেতের মধ্যে খুপরি ঘর তৈরি করে রাতে পাহারা দিতে হচ্ছে।
ক্রেতা তারেক তালুকদার বলেন, স্কোয়াশ খেতে সুস্বাদু। পুষ্টিভরা এ সবজির চাষ হবিগঞ্জে কম। তবে বাহুবলের ভুলকোটে কৃষক সানু মিয়া চাষ করছেন। তার কাছ থেকে লোকজন স্কোয়াশ কিনে নিচ্ছেন। এ সবজির চাষ বাড়ালে কম দামে পাওয়া যাবে।
উপজেলার দ্বিমুড়া কৃষি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম বলেন, স্কোয়াশ একটি সুস্বাদু ও জনপ্রিয় সবজি হিসেবে বিদেশিদের কাছে অনেক আগে থেকেই পরিচিত। বর্তমানে দেশে স্কোয়াশ একটি উচ্চমূল্যের ফসল। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ সবজির চাষাবাদ বাড়ছে। তুলনামূলকভাবে কম উর্বর জমি এবং চরাঞ্চলে স্কোয়াশের চাষাবাদ সম্প্রসারিত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, স্কোয়াশ দ্রুত বর্ধনশীল। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ফলন সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করা যায়। সবজির পাইকারি দাম ৫০ টাকা কেজি। তবে এটি খুচরা ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। স্কোয়াশ সাধারণ কুমড়ার মতো সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এর খাদ্য ও পুষ্টিগুণ কুমড়ার চেয়ে অনেক বেশি। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ও হার্টের রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।
স্কোয়াশে একইসঙ্গে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, ই ও ভিটামিন বি-৬ এবং নায়াসিন, থায়ামিন, প্যানথোটোমিন এসিড ও ফলনিড। এছাড়া স্কোয়াশ ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, খনিজ, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ক্যারোটিনয়েড এবং অন্যান্য অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানে ভরপুর। নিয়মিত স্কোয়াশ খেলে ফ্রি রেডিকেলসের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করা সম্ভব, বলেন তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ তমিজ উদ্দিন খান বলেন, স্কোয়াশ চাষে কৃষকদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এ সবজি চাষে প্রচুর লাভবান হওয়া সম্ভব। ভুলকোটে গত বছর প্রথমবারেই স্কোয়াশ চাষে কৃষক সানু মিয়ার সাফল্য এসেছিল। চলতি মৌসুমে তিনি দুই রঙের স্কোয়াশ চাষ করে লাভবান।
তিনি বলেন, স্কোয়াশ শরীরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও বিটা ক্যারোটিন সরবরাহ করে। যা আমাদের চোখের জন্য খুবই উপকারী। এটি হাড়ের গঠন, শক্তি ও ঘনত্ব বৃদ্ধি করে। এছাড়া হাইপার টেনশনের রোগীদের জন্য স্কোয়াশ খুবই উপকারী। স্কোয়াশ রক্ত চাপকে কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। বর্তমানে অনেকেই বাড়ির ছাদে, ফুলের টবে সবজি কিংবা ফল গাছ লাগান। সেক্ষেত্রে ছাদ, ফুলের টব বা পতিত জায়গায় স্কোয়াশও লাগাতে পারেন। কারণ এতে জায়গা খুবই কম লাগে। ফলন আসে প্রচুর।