সুন্দরবনে বছর জুড়ে হরিণ শিকার
প্রাণ ও প্রকৃতি
বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। এই বনের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে রয়েছে উপকূলের মানুষের জীবন-জীবিকা। সেই সাথে একই বনে বসবাস নানান প্রজাতির প্রাণীর। কিন্তু বনে থেকেও নিরাপদ নেই প্রাণীরা। অনিরাপদ প্রাণিদের তালিকায় প্রথমেই রয়েছে হরিণ। সারা বছর ধরেই চলতে থাকে হরিণ হত্যা।
হরিণের মাংসের কদর অনেক বেশি। খুব সামান্য চেষ্টায় মেলে হরিণের মাংস। শিকার কিংবা হত্যা নিষিদ্ধ হলেও মাংস বিক্রির জন্য সারা বছর ধরে চলে হরিণ নিধন। কিন্তু হঠাৎ করেই সুন্দরবনে হরিণ শিকারের হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। শিকারিদের ধরতে সুন্দরবনে স্মার্ট প্যাট্রল এবং বন বিভাগের টহল বহাল থাকলেও অদৃশ্য কারণে শিকার কমছে না।
এদিকে অভিযোগে উঠে এসেছে, বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রভাবশালী, স্থায়ী জনপ্রতিনিধির কিছু সদস্যদের সাহায্য নিয়ে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে এই হরিণ হত্যা চলছে। শুধু তাই নয়, হরিণ হত্যা করে বনেই মাংস কেটে প্যাকেট করে থাকে শিকারিরা। প্যাকেটের জন্য তারা ককশিটেরও ব্যবহার করে থাকে।
স্থানীয়ভাবে হরিণের মাংস ৩০০-৭০০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। কিন্তু প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এবং কিছুটা ঝুঁকি নিয়ে শহরে নিয়ে বিক্রি করলে কেজিতে পাওয়া যায় ১৫০০-২০০০ টাকা। এছাড়াও শৌখিন কিংবা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা যেমন হরিণের মাংসের কদর করে থেকে, ঠিক তেমনি তাদের কাছে হরিণের চামড়া এবং শিং সংগ্রহ করতেও আগ্রহী হয়ে থাকে।
করোনাভাইরাসের প্রকোপে জাতীয় চিড়িয়াখানায় প্রজনন বেড়ে হরিণের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও সুন্দরবনের চিত্র পুরোটাই বিপরীত। সুন্দরবনে হরিণের মোট সংখ্যা এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে জানা যায়নি। কেননা ১৯৯৫-৯৬ সালে সর্বশেষ জরিপ করা হয়েছিল। তখন হরিণের সংখ্যা ছিল প্রায় দেড় লাখ। এদিকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে সেই সংখ্যা এখন একই রয়েছে। হরিণ নিধন হতে থাকায় ২৪ বছরেও সেই সংখ্যা বাড়েনি।