মৌ-খামারে ভাগ্যবদল
কৃষি বিভাগ
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় মাঠের পর মাঠ ছেয়ে গেছে সরিষার হলুদ ফুলে। এ সুযোগে মৌ-খামারিরা খেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে বসিয়েছেন মৌ-বক্স। বক্স থেকে দলে দলে মৌ-মাছি গিয়ে বসছে সরিষা ফুলে। এতে একদিকে মৌমাছির মাধ্যমে ফুলে পরাগায়ন ঘটায় সরিষা উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে অন্যদিকে খামারিরা মধু সংগ্রহ করে বদলাচ্ছেন নিজেদের ভাগ্যের চাকা।
গুরুদাসপুর কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলায় ৭৮০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। শষ্য বহুমুখী করণে কৃষকদের সরিষা চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। কৃষি অফিসের মাধ্যমে চাষিদের দেওয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় পরামর্শ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রায় অধিক সরিষা উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সরজমিনে গুরুদাসপুর উপজেলার বিলশা, রুহাই ও বামনবাড়িয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তৃর্ণ মাঠে সরিষা ফুলে ফুলে মৌমাছির গুঞ্জন। খেতের পাশেই মৌ-খামারিরা বাক্স পেতে রেখেছেন। মৌমাছিরা সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে বাক্সের ভিতর ঢুকছে আর বের হচ্ছে।
বিলশা ও রুহাই গ্রামে সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে এসেছেন নাজিরপুর ইউনিয়নের জুমাইনগর গ্রামের সানোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, তার ১৪০টি মৌ-বাক্স রয়েছে। সেখান থেকে সপ্তাহে ৮ মণ মধু সংগৃহ করা যায়। তিনি ছাড়াও আরও দুজন শ্রমিক এ কাজে নিয়োজিত আছেন। সব খরচ বাদ দিয়ে মধু থেকে তার সাপ্তাহিক আয় প্রায় ৩২ হাজার টাকা।
একই ইউনিয়নের মোল্লা বাজার গ্রামের মৌচাষি বেলাল হোসেন জানান, তাদের উৎপাদিত মধু এপি, ডাবর, কম্বোসহ দেশীয় বিভিন্ন কোম্পানি ৬-৭ হাজার টাকা মণ দরে পাইকারি কিনে নেন।ডিসেম্বর মাসজুড়ে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগৃহ করা হয়। তার মতো এ উপজেলার অন্তত ৪০ জন মৌ-চাষি এ পেশায় যুক্ত।
খুবজীপুর ইউনিয়নের বিলশা গ্রামের আফজাল হোসেন জানান, স্বল্প সময়ে সরিষা ফসল ঘরে তুলে একই জমিতে বোরো চাষ করা যায়। এ কারণে সরিষা চাষ করে থাকি। এ বছর তিনি ৬ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। গাছ যেভাবে দেখা যাচ্ছে তাতে বাম্পার ফলন আশা করছেন।
রুহাই গ্রামের আতিকুর রহমান বলেন, তিনি ১০ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। এ বছর চলনবিল থেকে দ্রুত বর্ষার পানি নেমে যাওয়ায় তার মতো এলাকার অনেকেই সরিষার আবাদে আগ্রহী হয়েছেন।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশীদ জানান, এ উপজেলায় ৭৮০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে। ভোজ্যতেল ও সরিষার বাজার ভালো কৃষকের আগ্রহ বেশি। এ কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি চাষ ও উৎপাদন হবে। আর সরিষা ফুলকেন্দ্রিক মধু সংগ্রহে কৃষক ও মৌ-খামারি উভয়ই লাভবান হচ্ছেন।